মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মালতী রাণী শুক্লবৈদ্য ও পুষ্পরাণী শুক্লবৈদ্য
১৯৭১ সালের জৈষ্ঠ্য মাসের কোন এক বৃহস্পতিবারের সকাল। হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানার গোছাপাড়া গ্রামের রাখাল শুক্লবৈদ্যের বাড়ি স্হানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাক আর্মি ঘিরে ফেলে। কারণ তাদের কাছে পাকা খবর ছিল এই বাড়িটি মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে। এই বাড়ির পুরুষসহ নারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা করছেন। ফলে এই বাড়িসহ পার্শ্ববর্তী আরো দু’টি বাড়ির হিন্দু-মুসলমান মিলিয়ে রাখাল ব্যতীত ১০ জন পুরুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার মধ্যে ছিল ১০ বছরের শিশু কানু শুক্লবৈদ্য। বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। ফলে বাড়ির মহিলারা বের হয়ে আসতে বাধ্য হন। আটক করা হয় অল্প কিছুক্ষণ আগে বিধবা হওয়া মালতী রাণী, পুষ্পরাণী ও পুষ্পারাণীকে। তাদেরকে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়ির পিছনে বেঁধে নিয়ে যাওয়া রাখাল শুক্লবৈদ্যের খোঁজ আর পাওয়া যায়নি। ক্যাম্পে এই ৩ গৃহবধূকে ৬ মাস আটকে রাখা হয়। যে স্মৃতি এখনো ভয়াবহরূপে বিরাজ করছে বেঁচে থাকা মালতী ও পুষ্পের মনের গহিনে।
স্বাধীন দেশে তারা নিজেদের নিরাপদ বোধ করেন না। পরিচয়ও গোপন রাখেন। যুদ্ধ করছেন এখনো মন, শরীর আর সমাজের সাথে। ‘চেতনা ৭১’ নামক সংগঠন সর্বপ্রথম তাদেরকে নিয়ে এসেছে জনসাধারণের সামনে। ২১ ফেব্রুয়ারিতে তারা শহরের শহীদমিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এবারই প্রথম মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনায় তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো হলো।
সশ্রদ্ধ সালাম এই দুই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে।
---------------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র: প্রতিদিনের বাণী, ২৬ মার্চ, ২০১০খ্রি: সংখ্যা, হবিগঞ্জ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৮