সিনেমাহলে মুক্তি পেলেও সুযোগ না থাকার কারণে দেখা হয়নি। তাই অরিজিন্যাল ডিভিডি বের হওয়ার পর দেখতে বসলাম আলোচিত চলচ্চিত্র ‘মনপুরা’। গভীর রাতে প্রভাবশালী গাজীর মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলে হালিম একটা খুন করে ফেলে। গাজী সাহেবের ছেলেকে রক্ষা করতে স্ত্রীর পরামর্শে বাড়ির এতিম কাজের ছেলে সোনাইকে মনপুরা দ্বীপে নির্বাসনে পাঠানো হয় যাতে সবাই সোনাইকে দোষী ভাবে। সোনাই আর গ্রামে ফিরতে পারে না। মনপুরাতে সোনাইয়ের দেখা হয় পরীর সাথে-গড়ে উঠে দু’জনের মধ্যে ভালবাসা। কিন্তু গাজী সাহেবের সন্তান বাৎসল্য এবং পরীর বাবার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাদের প্রেমে বাধা হয়ে দাড়ায়। সোনাই ও পরী কি পারবে সেই বাধা অতিক্রম করতে?
কাহিনীতে কোন জটিলতা নেই। বহুবার দেখা, বহুবার জানা একটি গল্প। তাহলে ছবিটির বিশেষত্ব কি? খুব সহজভাবে বললে বিশেষত্ব হচ্ছে ছবিটির ‘মেকিং’। পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম ছবিটি চমৎকারভাবে তৈরি করেছেন। এই চমৎকারের মধ্যে রয়েছে -লোকেশন, সিনেমাটোগ্রাফি, অভিনয় এবং মিউজিক। আউটডোর লোকেশনের চিত্র পুরো পর্দা জুড়ে মায়াবী পরিবেশ তৈরি করে। ছবির অর্ধেক গল্প পরিচালক শুধুমাত্র তার লোকেশন দিয়েই দর্শকদের বলে দিতে পেরেছেন। কামরুল হাসান খসরুর চিত্রগ্রহন বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের সেরা সিনেমাটোগ্রাফির একটি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যারা আমাদের চলচ্চিত্রের প্রিন্ট বিশ্বমানের নয় মর্মে অনুযোগ করেন এটা দেখে আশাকরি তাদের ভুল ভাঙবে।
অভিনয় শিল্পীরা সবাই প্রতিষ্ঠিত। সহজ- সরল যুবক সোনাই চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী ছিলেন একদম পারফেক্ট। গাজীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন ডাকসাইটে অভিনেতা মামুনুর রশীদ। তার চরিত্রটা কিছু ক্ষেত্রে ছিল কনফিউজিং। ভাল আর মন্দ মানুষের কনট্রাস্ট অনেকক্ষেত্রে লাগসই হয়নি। ডিমান্ডিং কিছু দৃশ্যে তাকে মনে হয়েছে নিরুত্তাপ। এছাড়া গাজীর একটি নামাযের দৃশ্যায়নেও অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। পরিচালক আরো একটু মনোযোগী হতে পারতেন এই চরিত্রের প্রতি। নায়িকা পরী চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনেকাংশে নতুন ফারহানা মিলি। তার নির্মল সৌন্দর্য ছবির কাহিনীর সাথে একাকার হয়ে গেছে। অন্যান্যরা অভিনয়ে ছিলেন যথাযথ।
ছবিতে অনেকদৃশ্য ছিল যেখানে সুযোগ ছিল লাউড হওয়ার। বিশেষত একটি খুন আর একটি আত্মহত্যার দৃশ্য মেইনস্ট্রিমের পরিচালকরা পেলে হয়তো পর্দাকে যাত্রার মঞ্চ বানিয়ে ফেলতেন। কিন্তু পরিচালক সযত্নে সেটা পরিহার করেছেন। আর এখানেই তার স্বাতন্ত্র্যতা রক্ষা করতে পেরেছেন।
সংগীত পরিচালক অর্ণব গল্পের সাথে মিল রেখেই মিউজিক করেছেন। মমতাজ তার ক্যারিয়ারের সেরা একটি গান এই ছবিতে গাইতে পেরেছেন। যদিও গানগুলোর সম্পূর্ণ অংশ ছবিতে ব্যবহৃত হয়নি। তবে এতে ছবির ধারাবাহিকতা বিঘ্ন হয়নি। এছাড়া শুধুমাত্র হারমোনিয়াম দিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছবির সাথে দর্শকদের সহজে রিলেট করতে সহায়তা করেছে।
অডিও লিংক:
♫ আগে যদি জানতাম রে বন্ধু - মমতাজ
♫ আমার সোনার ময়না পাখি - অর্ণব
♫ নিথুয়া পাথারে -কৃষ্ণকলি ও চঞ্চল চৌধুরী
♫ সোনার পালঙ্কের ঘরে - চন্দনা মজুমদার ও কৃষ্ণকলি
♫ সোনাই হায় হায় রে - ফজলুর রহমান বাবু
এই ছবি দেখে পরিচালকের প্রতি প্রত্যাশা বেড়ে গেল কয়েকগুন। আর এ জন্যই হয়তো অভিনেতা-নির্মাতা আফজাল হোসেন পত্রিকায় লিখেছেন তিনি ‘ঈর্ষান্বিত’!
ছবিটি ঈদের দিন বেলা একটা ৩০ মিনিটে চ্যানেল আইতে দেখাবে। আর বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণা পরিহার করতে চাইলে ডিভিডি’ই ভরসা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৪