ক.
ফারাক্কার বাঁধ নিয়ে তখন হৈচৈ কান্ড। রুনা লায়লা প্রথমবারের মতো গেছেন ভারতে গান গাইতে। রুনার অনেকগুলো কনসার্টের একটিতে উপস্হিত ছিলেন সাংবাদিক খুশবন্ত সিং। মুগ্ধ খুশবন্ত সিং পরেরদিন পত্রিকায় লিখলেন "তোমরা আমাদের রুনা দাও, আমরা তোমাদের ফারাক্কার পানি দিয়ে দিব"। মূলত রুনা লায়লাকে দিয়ে হিন্দি ছবির প্লে-ব্যাকে বাংলাদেশী শিল্পীদের যাত্রা শুরু হয়। প্রথমেই "ইক সে বাড়কার ইক" ছবির শিরোনাম গান গেয়ে রুনা আলোড়ন তুলেন। পরবর্তীতে "ঘরোন্দা" ছবির গানগুলোও জনপ্রিয় হয়। এবং "দো দিওয়ানে শেহের মে" গানের জন্য রুনা ফিল্ম ফেয়ার ম্যাগাজিনের বেস্ট প্লে-ব্যাক সিঙ্গারের নমিনেশান লাভ করেন। এর পরে রুনা কিছু গানে কন্ঠ দিয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মোঃ রফির সাথে "জান-ই-বাহার" ছবির "মার গায়ো রে" ডুয়েট গানটি। রুনা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, মোঃ রফি তাঁর প্রিয় শিল্পী। গানের যেদিন রেকর্ডিং সেদিন তিনি সময়মতো হাজির হন স্টুডিওতে। গিয়ে দেখেন তাঁর আগেই সেখানে মোঃ রফি হাজির। রফি জানান, রুনার সাথে গান গাইবার জন্য তিনি সময়ের আগেই হাজির হয়েছেন। শিল্পীর বিনয়ে রুনা বিস্মিত। তবে রুনার হিন্দি ছবির গানগুলো তাঁর প্রাইভেট এ্যালবাম "সুপার রুনা" বা "দি লাভস অব রুনা লায়লা"র মতো জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। এছাড়া বলা হয়ে থাকে রুনা মুম্বাইতে জায়গা করে নিতে পারেননি মূলত মুম্বাইয়ের প্রভাবশালী শিল্পী বোনদ্বয়ের পলিটিক্সের কারণে। রুনা লায়লা একমাত্র বাংলাদেশী শিল্পী যাঁর ভারতে গান গাইবার ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে।
০১) আলীবাবা -রুনা লায়লা, চলচ্চিত্র: অগ্নিপথ
০২) ইক সে বাড়কার ইক -রুনা লায়লা, চলচ্চিত্র: ইক সে বাড়কার ইক
০৩) এ্যায় দিলওয়ালে আও -রুনা লায়লা, চলচ্চিত্র: ইয়াদগার
০৪) কাহো সাখি কাহো -রুনা লায়লা, চলচ্চিত্র: ইক দিন বহু কা
০৫) তুমহে হো না হো -রুনা লায়লা, চলচ্চিত্র: ঘরোন্দা
০৬) দো দিওয়ানে শেহের মে -রুনা লায়লা ও ভূপিন্দর সিং, চলচ্চিত্র: ঘরোন্দা
০৭) মার গায়ো রে -রুনা লায়লা ও মোঃ রফি, চলচ্চিত্র: জান-ই-বাহার
০৮) মুঝে পেয়ার তুমসে নেহি -রুনা লায়লা, চলচ্চিত্র: ঘরোন্দা
০৯) ম্যায় কালি আনার কি -রুনা লায়লা, চলচ্চিত্র: সাপনো কা মান্দির
খ.
সাবিনা ইয়াসমীন মূলত যৌথ প্রযোজনার ছবি "আর পার" (বাংলা ভার্শন-অন্যায় অবিচার )'তে আর. ডি. বমর্ণের সুরে ২টি গানে কন্ঠ দিয়েছেন। একটি গান "যাইওনা যাইওনা" আবার কিশোর কুমারের সাথে ডুয়েট। দু'টি গানেরই বাংলা ভার্শনেও সাবিনাই কন্ঠ দিয়েছিলেন। এছাড়া সাবিনা আর কোন হিন্দি ছবিতে কন্ঠ দেননি। তবে তাঁর গাওয়া জনপ্রিয় বাংলা গানের হিন্দি ভার্শনের এ্যালবাম বাংলাদেশ থেকে বের হয়েছে।
১০) কৌন সে নদিয়া -সাবিনা ইয়াসমীন, চলচ্চিত্র: আরপার
১১) যাইওনা যাইওনা -সাবিনা ইয়াসমীন ও কিশোর কুমার, চলচ্চিত্র: আরপার
গ.
মিতালী মুখার্জী বাংলাদেশে মিতালী মুখার্জী নামে পরিচিত হলেও ভারতে তাঁর পরিচয় মিতালী সিং নামে। কারণ তাঁর স্বামী হচ্ছেন আরেক গজল গাইয়ে ভূপিন্দর সিং। মিতালী নিয়মিত গজলের এ্যালবাম বের করলেও হিন্দি ছবিতে গান গেয়েছেন মাত্র ১টি "তু জান সে পেয়ারা হ্যায়"। ছবি "সত্যমেব জয়তে"। সুরকার বাপ্পী লাহিড়ী। মিতালীর মতে হিন্দী ছবিতে গাইতে হলে অনেক লিয়াঁজো মেইনটেন করতে হয় যা তাঁর পক্ষে সম্ভব না। অতএব তাঁর আর প্লে-ব্যাক করা হয়ে উঠেনি হিন্দি চলচ্চিত্রে।
১২) তু জান সে পেয়ারা হ্যায় -মিতালী মুখার্জী, চলচ্চিত্র: সত্যমেব জয়তে
ঘ.
এন্ড্রু কিশোরও হিন্দি গানে কন্ঠ দিয়েছেন যৌথ প্রযোজনার ছবিতে। হিন্দি "শত্রু" বাংলা "বিরোধ"। সুরকার আর. ডি. বর্মণ। গান ২টি। গানগুলো রেকর্ডিংয়ের সময় আশা ভোঁসলে হাজির হন রেকর্ডিং স্টুডিওতে এন্ড্রু'র গান শুনতে। এন্ড্রু রীতিমতো নার্ভাস। টের পেয়ে গেলেন আশা। সাহস জোগালেন। অবশেষে গান রেকর্ডিং সুন্দরভাবে সম্পন্ন হলো। এই দু'টি গানের বাংলা ভার্শনও গেয়েছেন এন্ড্রু কিশোর।
১৩) ম্যায় তেরা বিসমিল হু -এন্ড্রু কিশোর, চলচ্চিত্র: শত্রু
১৪) সুরাজ চান্দা সাগার -এন্ড্রু কিশোর, শত্রু
ঙ.
এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা জেমস। জিমে স্বাস্হ্য পরিচর্যা করছিলেন জেমস। এই সময় তাঁর প্রাইভেট সেক্রেটারি এসে জানালেন মুম্বাই থেকে ফোন এসেছে। আর এভাবেই সুরকার প্রীতমের সাথে জেমসের যোগাযোগ। কলকাতার বাঙ্গালী প্রীতম কলকাতার বিখ্যাত ব্যান্ড "মহীনের ঘোড়াগুলি" র গান "পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে" এর হিন্দি ভার্শনের জন্য উপযুক্ত কন্ঠ খুঁজছিলেন। জেমসের কন্ঠকে তাঁর যথার্থ মনে হয়েছিল। তারপর তো ইতিহাস। "গ্যাংস্টার" ছবির "ভিগি ভিগি রাতে" জেমসকে সর্বভারতীয় তারকায় পরিণত করে। পরে প্রীতম আবার জেমসকে দিয়ে "ও লামহে" ও "লাইফ ইন অ্যা মেট্রো" ছবিতে তিনটি গান রেকর্ড করান। যদিও গান ৩টি "ভিগি ভিগি রাতে"র মতো জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারে নি।
১৫) আলবিদা -জেমস, চলচ্চিত্র: লাইফ ইন অ্যা মেট্রো
১৬) চাল চালে -জেমস, চলচ্চিত্র: ওহ লামহে
১৭) ভিগি ভিগি -জেমস, চলচ্চিত্র: গ্যাংস্টার
১৮) রিশতে -জেমস, চলচ্চিত্র: লাইফ ইন অ্যা মেট্রো
--------------------------------------------------------------
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশী পত্র-পত্রিকা এবং ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৫