একজন বামপন্থিনী খোঁজে রাখতে চেয়েছিলাম জীবনসঙ্গিনী করব বলে। বলা তো যায়না কখন মা বলে বসেন 'এখনি বিয়ে-টিয়ে করে ফেলতে হবে।পছন্দের থাকলে বল না হয় আমিই করে দিচ্ছি।'
মা পছন্দ করে দিবেন তাতে আপত্তি নেই কেননা তাতে আমার সে-জনা পরিবারের সবার কাছে ভালো-মন্দ যেভাবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুন না কেন আমি কিন্তু দায়ভার মুক্ত।
কিন্তু ভয় হচ্ছে তার 'পন্থা' নিয়ে। বামপন্থা,দানপন্থা,মধ্যম্পন্থা,উপরপন্থা,নিচপন্থা।
হয়তো দিন কয়েক পরে দশ দিকের নামে দশ আদর্শ পন্থা নির্দিষ্ট করিয়া প্রশ্ন করা হইবে আপনি কোন পন্থা'র লোক কেননা এই দশের বাহিরে আর কিছুই নাই আর যদিও কিছু থাকে তাহা কপটতা,অসারতা আর সংকীর্ণ মনের পরিচায়ক।একজন কোন দলের অথবা মতের হইবেননা তাহার অর্থ কি এই দাঁড়ায় না যে তিনি সকল দল-মত-আদর্শের উর্ধে উঠিয়া আমাদের এই সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাইতে উদ্যত হইয়াছেন।আমরা যাহা জানি তাহার বাইরে কিছু থাকিতে পারেনা, , ,
এখন বামপন্থিদের গালি দিলে ডানপন্থিরা বন্ধু ভাবে আর মধ্যমপন্থিরা স্বাগতম জানায় তাদের অনেকটা কাছে চলে আসায় আর মধ্যমপন্থিদের গালি দিলে কেউ গায় উদারতার জয়গান আর কেউ আউড়ে মৌলিকত্ত্বের শাশ্বত বাণী। আমি কোন আদর্শের তা এখনও বুঝে উঠতে পারিনি তবে আদর্শ দশ প্রতিষ্ঠিত হলে অবশ্যই নিজেকে কোন ছাঁচে তুলে গা ভাসিয়ে দেব সেজন্য প্রস্তুত হয়ে আছি। আমার আদর্শ নির্দিষ্ট করতে পারলে তার সনদ-টিকার জোড়ে অন্য কোন আদর্শে আশ্রিত মানুষগুলোর বারাবারি বা আদর্শচ্যুতির কথা মুখে এসে গেলেও বাকি অষ্টকোণের বাসিন্দাদের নানামুখী হ্যাচকা টানে বিব্রত হতে হবেনা।
যাই হোক নিজের আদর্শে জলাঞ্জলী দিয়ে পরের পন্থায় আস্থা রাখার সাফাই অনেক হল এবার আমার কথায় আসি।
মেয়েরা নাকি প্রচণ্ড আবেগি হয়। ঘরের লক্ষ্মী মেয়েরা বাইরে না গিয়ে কারোও উপর ভরসা করে আজীবন কাটাতে পারবে এমন কেউ একজন হয়ে উঠতে না পারলেতো ছেলের বিয়ে করার যোগ্যতাই হয়না। সংসারের জটিল-কঠিন হিসেব আর নিজের ভবিষ্যত নিরাপত্তার ভাবনা থেকে মুক্তি দেওয়া একজন মানুষ অনেক আবেগপ্রবণ হবেন এটাই স্বাভাবিক কিন্তু এই আমরাই বাস্তবতাজ্ঞানহীন এই মানুষদের থেকে মুক্তি চাই। সবাই মুক্তি চায় বিয়ের পর আর আমি চেয়েছিলাম বিয়ের আগেই এর একটি সমাধান।
ভাবলাম বামপন্থি মেয়েগুলো তাদের জীবনের আর সব অহেতুক আবেগ ঝেরে ফেলে দিয়ে গণমানুষের মুক্তির পথান্বেষণে আন্দোলন করতে এসে যে বাস্তবতার মুখোমুখি হয় তাতে একজন ঘরকুনো ছেলের থেকে ঢের বেশি বাস্তবজ্ঞান তার মাথায় বাসা বাঁধে।আর মহা-উদারতার শিক্ষাতো থাকলই।
বন্ধুদের বলে দিলাম একজন বামপন্থি মেয়ে খোঁজে দিতে যাকে নিয়ে ঘর-সংসার করব কিন্তু তাকে অর্থাৎ তার আবেগ-ভালোবাসা বাদে আর সবকিছুকে বিদায় জানাতে হবেনা। দ্বিতীয় বিভাগে সম্মান ডিগ্রি নিয়েছি তবুও বাঁধা-ধরা নিয়ম থেকে মুক্তি পেলে নিজে নিজে এইসব কাঠখোট্টা বিষয় নিয়ে কিছুটা মাথা ঘামানোর ইচ্ছে রয়েছে।
ঘন্টা না পেরুতেই ফোন করে বামপন্থি সঙ্গিনী পছন্দের কারন জানতে চেয়ে অস্থির করে তুলল সবাই মিলে। জানলাম ফেসবুকে আমার জন্যে বামপন্থি মেয়ে খোঁজে বেড়াচ্ছে বন্ধুরা।ভাবলাম এবার বুঝি একজন রীতিমতো সংসারি,বাস্তববোদ্ধা মেয়ে পেয়ে যাচ্ছি শীঘ্রই যার সাথে জীবনের সব সুখ-দুখ ভাগ করে যেমনটি হয় ঘনিষ্টতম বন্ধুটির সাথে।
আজ রাতের আড্ডায় মধ্যমণি আমি। সবাই সারাদিন হন্যে হয়ে অনেক বামপন্থি মেয়ের খোঁজ এনেছে। এবার সবার বর্ণনা শুনে আমাকেই বেছে নিতে হবে সবচেয়ে উপযোগি একজনকে।
আহ ক্লাসে পড়াশোনা,থিসিসের কাজ আর বামঘরানার পাঠচক্র ছাড়া আর কিছুতেই সময় দেয়না মেয়েটি, আমার দেখা ও মেয়েদের সাথে মেকআপ-লিপস্টিক এর কথায় কখনই যায়না, আমি যার কথা বলছি সে মেয়েদের সাথে কখনই আড্ডা দেয়না যেটুকু দেয় ছেলেদের সাথে সুতরাং অনর্থক আবেগের প্রশ্নই আসেনা, খুব সাধাসিধে চালচলন-পোশাকে আসা মেয়েটি একবারেই নিরহংকারি আর কেমনভাবেই টিফিনের সময়টা কাটিয়ে দেয় একটিমাত্র সিঙ্গারা খেয়ে, আমি তাকে যতদিন দেখেছি লেনিন,মার্কস'র বই ছাড়া কখনই দেখিনি আর যেভাবে যুক্তি দিয়ে কথা বলে কোন ছাত্র-ছাত্রি তো দূরের কথা কোন শিক্ষকও তার কথায় তর্ক বাঁধায়না, আমারটি স্টেজ বা তা না পেলে ক্লাসের বেঞ্চের উপরে দাঁড়িয়ে এত সুন্দর বক্তৃতা করতে পারে যে ডানপন্থি ছেলেগুলোও এসে ভিড় জমায় আর দেখতেও হেব্বি, , ,
কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে, আমি কার কথা শুনব।বললাম,
-তোরা যত গুণের কথা বলেছিস তার সব কয়টিই আমার একসাথে লাগবে।
এবারও দেখছি কারোও আগ্রহে কোন ভাঁটা নেই। বামপন্থি মেয়ে মাত্রই নাকি এই সব বৈশিষ্ঠ থাকে;কিছু কম আর বেশি।
একজন বললে,
-দোস্ত একজন আছে যার এই সব বৈশিষ্ঠই আছে, কোন রকম আবেগই সে বিশ্বাস করেনা আর রীতিমতো বামপন্থি। আমি চিন্তায় আছি তুই মানিয়ে নিতে পারবি কিনা, , ,
-এমনটিইতো চাইছি, মানিয়ে নিতে পারবনা কেন ভালোবাসা দিয়ে সব জয় করে নেব।
-না দোস্ত এই মেয়ে কোন ভালোবাসা-টালোবাসা বিশ্বাস করেনা।
-সে কী কথা, ফোন নম্বরটা দে দেখি ওকে বিশাস করাই___
-ওর তো ফোনই নেই। এটাও নাকি আবেগের বস্তু, একসময় মানুষ এইসব ছাড়াই চলত।
-আচ্ছা ফেসবুক একাউন্ট-টা তো বলবি?
-না না, এই মেয়ে ফেসবুক-টেসবুক এই জাতীয় সোস্যাল নেটওয়ার্কেও বিশ্বাস করেনা।
-তাহলে উপায়, , , !!??
-বস্তিতে,গার্মেন্টে,পতিতালয়ে ঘুড়ে বেড়ায়,মানুষের জন্যে কাজ করে।এছাড়া ডিপার্টমেন্টের ল্যাবেও কদাচিৎ দেখা মিলতে পারে। তবে পল্টনের কোন সভায় কিংবা মিছিল-টিছিল শেষে টি.এস.সি'র কোন চা এর দোকানে তাকে পাবেনা এটা নিশ্চিত।
-তুই একে বামপন্থি বলছিস কেন?, , , চল আজকের মতো ইতি,এ নিয়ে পরে ভাবা যাবে।