সকাল বেলা বাসা থেকে বের হয়েছিলাম ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে। সকালের ক্লাসটা করতে পারিনি। ১২.৩০ টায় একটা ক্লাস ছিল। ক্লাসের আগেই শাহবাগের উদ্দেশ্যে ১১ টার দিকে রওয়ানা দিলাম। মাত্র চারুকলা পর্যন্ত গেলাম এর মধ্যেই দেখলাম ভাইয়েরা দৌড়াচ্ছে। জিজ্ঞাসা করলাম কি হইছে?? এর মধ্যেই পায়ের কাছে এসে পড়ল একটা টিয়ার শেল। জীবনে এর আগে কখনও টিয়ারশেলের সামনে পড়িনি। তাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি করব!! পকেট থকে রুমালটা বের করে নাকমুখ চেপে কোন মতে দৌড় দিয়ে সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর সামনে আসলাম। সবাই বলল আগুনের সামনে যান। টিয়ার গ্যাসের প্রভাব কিছুটা গেল। এরপর দেখলাম একেকজন ভাইকে কোলে করে নিয়ে আসতেছে রোজাদার মানুষগুলি টিয়ার গ্যাসের গন্ধে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে গেছে। অনেক আপুকে দেখেছি অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। এরপরেও অনেক মুনাফিক ছাত্রকে দেখেছি শুধু অর্বাচীনের মত দাঁড়িয়ে রয়েছে। এরপর সবার সাথে নীলক্ষেতের দিকে অগ্রসর হলাম এফ রহমান হলের সামনে যেই সবাই আসলো সেখাকার অবস্থানরত পুলিশ টিয়ারশেলের সাথে গুলি করাও শুরু করল। অনেস্টলি বলছি জীবনে কখনও গুলির সামনে পড়িনি। মনে করছিলাম এই বুঝি জীবনের শেষ দিন। যাই হোক আল্লাহ তালার অশেষ রহমতে এখন বাসায় পৌঁছেছি। মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো শুরু হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রিকারীরা এখন বাশের কেল্লার ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এখানেও এখন আস্তিক নাস্তিকের মত দুই ভাগ করে ছাড়বে।
কিন্তু তোদের বলি এখানে পলিটিক্যাল কোন ইস্যু নাই। কোন লিডারশীপও নাই। লিডারশীপ যে নাই এটা যে শুধুমাত্র সাধারন স্টুডেন্টদের আন্দোলন সেটা বার বার প্রমানিত হয়েছে আজকে যারা সেখানে ছিল তারাই দেখেছে। একবার কেউ বলে এইদিকে চলেন কেউ বলে ওইদিকে চলেন সবাইই ছিল সাধারন শিক্ষার্থী।
সুবিধাবাদীর দল তোমরা এখানে কিছুই করতে পারবা না। আর গোপালী পুলিশ আর লীগের কুত্তারা তোমরা আজকে যাহা দেখাইলা তা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল।
আল্লাহ তাআলার কাছে আরও শুকরিয়া এই বিপদের দিনে কিছু মানুষের আসল রুপ আমার সামনে খোলাসা হবার জন্য। যাদের সাথে চলতাম তাদের আসল পরিচয় পেয়ে গেলাম। মনে থাকবে। আর সরকার আমাদের জামাত- শিবির মনে করেছে। ঢাবির স্টুডেন্টদের গুলির ভয়। তার মনে করছে দুইটা টিয়ারশেল মারবে আর সবাই হলে ঢুকে দরজা লাগিয়ে বসে থাকবে। আর আমার সংগ্রামী ভাইদেরকে লাল সালাম। আর যাদেরকে পাশে পাইনি তাদেরকে বলি তোমরা বেচে থাকো বাবারা অনন্ত কাল ধরে বেচে থাকো যেমন তেলাপোকারা এখনও বেচে আছে। তোমাদের ভাইরা মরে গেলেও তোমরা চুপ থাকবা। তোমার বোনকে রেপ করলেও তুমি চুপ থাকবা। তোমরাই শান্তিপ্রিয়। বেচে থাকো অনন্ত কাল মায়ের আচল ধরে।
মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের বলি।
একটা কথা সবসময়ই বলি আবারও বলছি ৭১ সালে মানুষ যুদ্ধে গিয়েছিল বৈষম্যের প্রতিবাদে। তখন যারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। আজকে তাদেরকে সুযোগ দিতে গিয়ে লাখ লাখ মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীকে তাদের প্রাপ্য চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে।
তাহলে আপনি একটু আমাকে বুঝান বাংলাদেশে স্বাধীনটা হল কে? তখন বৈষম্য করেছিল পাকিরা আর এখন এরা। যেখানেই যাই শ্রেনী সংগ্রাম!!! কার্ল মার্ক্স ঠিকই ধরেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কি বৈষম্যের স্থান ছিল???
মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন জাঁতির সূর্যসন্তান। তারা কারও করুনায় যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করে আনেননি। আজকে তাদেরই সন্তানরা কারও অনুগ্রহে দিনাতিপাত করবে এটা তাদের জন্যই অবমাননাকর।
এখন বলবেন শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলছেন কেন????
ওকে ভাই একটু মাথা খাটান দুই এক বছর পরপর স্পেশাল বিসিএসে কাদের নিয়োগ দেয়া হয়??? আর কোটার ক্ষেত্রে কাদের অগ্রাধিকার বেশী??? সুবিধাবঞ্চিত বা বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তদের জন্য আলাদা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু কোন নিয়োগ পরীক্ষায় সকলের সমান প্রতিদ্বন্ধিতা করবে এটাই কাম্য। শুধুমাত্র এই দাবী নিয়েই সাধারন ছাত্ররা মাঠে নেমেছে। কেউ বিভ্রান্ত হবেন না প্লিজ। গুজবেও কান দিবেন না। শাহবাগে কোন মুক্তিযোদ্ধাকে অবমাননা করে কেউ কথা বলেছে এই প্রমান কেউ দিতে পারবেন???? আবারও বলছি এটা শুধুমাত্র সাধারন ছাত্রদের একটা আন্দোলনল।