ক্লাস সেভেনে এসে দেখলাম ক্লাসের ছেলেরা টিফিনের সময় কাধে ব্যগ নিয়ে চলে যেত। কিন্তু তারা আর স্কুলে আসত না। বুঝতাম না তখন এরা কি করত। একদিন এক বন্ধুকে জিগাস করলাম এরা এমনভাবে টিফিনের সময় কোথায় যায়। আমার বন্ধু বলল "এরা বাসায় চলে যায় আর এটাকে বলে স্কুল চুরি করা। তাহলে আর বাকি ক্লাস গুলো করতে হয় না, বাসায় গিয়ে ইচ্ছা মত টিভি দেখা এরা।" আমার এই বন্ধুও অনেক বার স্কুল চুরি করেছে। তখন ভাবতাম এতে কোন সমস্যা হয় না। কারন ক্লাস সেভেনে স্কুল চুরির জন্য শাস্তি দিত না।
.
একদিনের ঘটনা।
টিফিনের পরের ঘন্টায় আয়েশা ম্যাডামের ক্লাস। আর তার ক্লাস নিয়ে ক্লাসের সব স্টুডেন্ট খুব ভয়ে থাকে। সবসময় হোম ওয়ার্ক এবং ক্লাস ওয়ার্ক দেখেন আর না পারলে ইহা মোটা এক বেত দিয়ে পেটাতেন।
একদিন ওনার হোম ওয়ার্ক করি নাই এবং ক্লাসের পড়াও পড়ি নাই। তাই ওনার পিডা খাওয়ার খুব ভয় লাগছিল। আমি এগুলো নিয়ে ক্লাসে কথা বলছিলাম। হঠাৎ আমার এক বন্ধু অফার করল স্কুল চুরি করতে। অনেক চিন্তার পর রাজি হলাম।
.
টিফিনের সময় স্কুল থেকেই আমাদের টিফিন দেয়। তারপর টিফিন খেয়ে নিজের ব্যাগ কাধে নিয়ে আমরা ৩ বন্ধু বেরিয়ে পড়লাম। স্কুলের সামনে দিয়ে গেলে স্যাররা দেখে যাবে তাই পিছনের ঝোপ ঝাড় দিয়ে সোজা গেলাম রেলস্টেশন। আমাদের স্কুলের পিছনে ছিল রেলস্টেশন।
কিন্তু সেখানে ঘটল ঘটনা। আমরা তিনজন স্কুল দ্রেস পরা অবস্থায় দোড়াচ্ছিলাম। রেল স্টেশনের পুলিশ আমাদের দোড়াতে দেখে সন্দেহ করলেন। আরও পুলিশ নিয়ে আমাদের থামালেন। আমাদের সোজা নিয়ে গেল স্টেশন মাষ্টারের রুমে। নিয়ে জিগাস করল
-কোথায় যাচ্ছ?
-বাসায় যাচ্ছি।
-দোড়াচ্ছ কেন?
-স্যররা দেখলে পিটাবে তাই।
-স্কুলের জিনিষ চুরি করলা নাকি।
-বিশ্বাস করেন আমরা কিছু চুরি করি নাই, আমরা চোর না স্টুডেন্ট।
কিন্তু পুলিশের বিশ্বাস হল না। আমাদের ৩ জনকে ভালোভাবে চেক করলেন। সন্দেহ জনক কিছুই পেলেন না।
তারপর আমাদের বল্লেন
-তাহলে তোমরা স্কুল চুরি করে পালাচ্ছিলে।
-জি।
-এখন স্কুলে খবর দিব?
-না না স্যার, এরপরের ঘন্টায় অনেক কড়া মেডাম, স্কুলের পড়া শিখি নাই, এখন দেখলে তো আরও পিটাবে।
-স্কুলের পড়া শিখ নাই, আবার স্কুল পলায়ন?
তিনি শাস্তি সরুপ আমাদের ওই রুমে ২০ বার কান ধরে উঠ বস করতে বললেন।
আমরা তা করলাম।
তারপর তিনি বললেন "প্রতেকদিন পড়ে শিখে স্কুলে যাবে, আর কখনো স্কুল পলায়ন করলে জেলে ডুকিয়ে দিব।"
এতক্ষন অনেক গম্ভির ভাবে কথা বলছিলেন। কিন্তু কথা শেষ করে তিনি একটু হাসলেন। ভয় কেটে গেল।
.
রাস্তায় একবারো না দাড়িয়ে সোজা গেলাম বাসায়। আম্মুতো খুবই গরম? স্কুল পলায়ন কেন করলাম। অনেক শাসন করল আম্মু। আম্মুকে আর রেলস্টেশনের কথা বললাম না। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম আর কিছুক্ষন আগের ঘটনা চিন্তা করছিলাম। হঠাৎ এক অবাক কান্ড দেখলাম। আমার স্কুলের অনেক ছাত্র বাসায় চলে যাচ্ছে। আমার এক ক্লাসমিটের বাসা ছিল আমার পাশের বাসায়। সে বাসায় চলে আসল। তখন আমি তাকে জিগাস করলাম সেও কি আমার মত স্কুল চুরি করল কিনা। কিন্তু ও যে উত্তর দিল তা শুনে আমি তো আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা। স্কুল ছুটি দিয়ে দিয়েছে। টিফিনের পর আর কোন ক্লাস হয় নি।
আমি কি উত্তর দিব তা ভেবে কুল পাচ্ছিলাম না। শুধু চিন্তা করছিলাম এত কষ্ট কষ্টই রয়ে গেল। সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে আর কখনো স্কুল চুরি করব না। কিন্তু প্রতিজ্ঞাটি আর রাখা হয় নি।