রমাজান মানেই আমাদের কাছে পূর্ণ পবিত্র একটি মাস । বছরের এই একটি মাস আমরা সকল প্রকার হারাম ও যে কোন খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকি কিন্তু বিদেশের মাটিতে রমাযান মানে এক তিক্ত অভিজ্ঞতা । হয়ত বা ,ব্যাক্তিগত ভাবে আমার কাছে তাই মনে হচ্ছে ।
প্রায় সাড়ে ১৯ ঘণ্টা রোযার দেশ রাশিয়া । ইফতারের সময় রাত ৯ঃ ১৫ এবং সেহেরির সময় রাত ২ঃ০০ টা ।
ইফতার এবং সেহেরির মাঝখনে সামান্য কিছু সময় যা মাঝে মাঝে এদিক-ওদিক তাকালেই শেষ হয়ে যায় । প্রবাসে অনেক বাঙ্গালী আছে কিন্তু খুব নগণ্য মানুষ আছে যারা এই পবিত্র মাসের প্রতি লক্ষনীয় খেয়াল রাখে । প্রবাস জীবনে কেউ চাকরি , ব্যবসা , পড়ালেখা বা অন্য কিছু নিয়ে যার যার মত করে প্রতিদিন ব্যাস্ত থাকে । কিন্তু , বিশেষত ছাত্রদের কাছে এটি অনেকটা তিক্ত অভিজ্ঞতা বলা চলে ।মূলত যারা ফ্যামিলি ছাড়া কখনো আগে এইসবের মুখোমুখি হয়নি ।
বিদেশের মাটিতে এটাই আমার প্রথম রমাযান । প্রতিবারের মত এবারও রোযা থাকার নিয়ত রাখছি । কিন্তু ইফতার এবং সেহেরি নিয়ে হয়েছে অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা । সপ্তাহের ৩ দিন ইফতারের সময় থাকতে হয় ক্লাসে । কখনো ক্লাস ১০টা ঘড়িয়ে যায় । সেই প্রেক্ষিতে ব্যাগে জুস ,পানি বা খেজুর নিয়ে যেতে হয় । ইফতারের সময় হলে ১০ মিনিটের জন্য পারমিশন নিয়ে বাহিরে গিয়ে ইফতার করে নেই । ক্লাস শেষ করে কখনো ১০ বা ১১ টা ঘড়িয়ে যায় । বাসায় এসে কিছুক্ষন অপেক্ষা করেই আবার সেহেরির জন্য রান্না শুরু করে দিতে হয় এবং সেটা রাত ১ টা এর মাঝে শেষ করতে হয় । তারপর , সেহেরি খেতে হয় । আবার সকাল ৮ টায় ক্লাসের কথা ভেবে ঘুমিয়ে পরতে হয় ।এইভাবেই কেটে যাচ্ছে প্রতিটি রোযা ।
মনে পড়ে , দেশে থাকা রমাজানের কথা । মায়ের হাতের তৈরি করা বাহারি রকমের ইফতার নিয়ে রেডি থাকতাম আযানের ধ্বনি শুনার অপেক্ষায় । সেহেরির ১ ঘণ্টা আগে মসজিদে মসজিদে চলতো সু-মধুর কোরআন তেলওয়াত । তারপর মায়ের ধমক খেয়ে উঠে গিয়ে দ্রুত সেহেরি করা ।কখনো বা অদূর মসজিদের মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ভেসে আসত , "আর মাত্র ১০ মিনিট , সবাই সেহেরি খেয়ে নিন" । তারপর , ফযরের নামায পড়ে মৃদু আলোতে হাঁটতে বের হওয়া ।
জীবনটা আটকে গেছে নিয়মের বেড়াজালে । প্রতিদিন পরিবারকে কিছু মিথ্যে বলা খুব প্রয়োজন হয়ে গিয়েছে ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৭ ভোর ৬:৪০