somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চেহারা, ধন-সম্পদ নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকা উচিত নয়

১৩ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা সবাই কম বেশি আমাদের চেহারা বা দৈহিক গঠন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করি। মেয়েদেরকে প্রায়ই বলতে শুনা যায়, আহ আমার চুল কেন এরকম হল না কিংবা কেন আমার উচ্চতা আরেকটু বেশি হল না। ছেলেরাও প্রায়ই বলে, কেন আমার উচ্চতা আরও বেশি হল না কিংবা কেন আমার চাপ দাঁড়ি নাই-এরকম অনেক কথা। এরকম অসন্তোষ থেকেই কিন্তু গুনাহ করে ফেলি আমরা। কারণ চেহারা বা দৈহিক গঠন এর উপর আমাদের কোন হাত নাই। আমরা আল্লাহ্‌ পাকের সৃষ্ট। সুতরাং অসন্তোষ প্রকাশ করলে তাঁর প্রতিই অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

আমি ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করব।

আল্লাহ্‌ পাক ইরশাদ করেন-

وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ শপথ আঞ্জীর (ডুমুর) ও যয়তুনের,

وَطُورِ سِينِينَ এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তূর পর্বতের,

وَهَذَا الْبَلَدِ الْأَمِينِ এবং এই নিরাপদ নগরীর।

لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।

( সুরা তীনঃ আয়াত ১-৪)


الَّذِي أَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ مِن طِينٍ
যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।

ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِن سُلَالَةٍ مِّن مَّاء مَّهِينٍ
অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।

ثُمَّ سَوَّاهُ وَنَفَخَ فِيهِ مِن رُّوحِهِ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ
وَالْأَفْئِدَةَ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ
অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
(সুরা সেজদাহঃ আয়াত ৭-৯)


তাই আমরা যখনই অসন্তোষ প্রকাশ করব, তখন ব্যাপারটি আসলে কি দাঁড়ায়? আসুন তাহলে আরও একটা প্রশ্ন করি- বুঝলাম অসন্তোষ প্রকাশ করা যাবে না, কিন্তু অনেক সময় তো মন খারাপ আমাদের হাতে না, হয়েই যায়। দেখুন আমরা তুচ্ছ মানব-আমাদের দ্বারা মন খারাপ হবে, আমাদের দ্বারা ভুলও হবে -আর সেজন্য আল্লাহ্‌ পাকের নিকট ক্ষমাও আছে। কিন্তু যে কারণে বলছি অসন্তোষ থাকা যাবে না সেটা এ কারণে যে এই অসন্তোষ যেন আমাদেরকে আল্লাহ্‌র পথ থেকে দূরে সরিয়ে না নেয়, বরং অসন্তোষ আসলেই যেন আমরা সাথে সাথে আল্লাহ্‌ পাকের নিকট ক্ষমা চাইতে পারি এবং পরবর্তীতে এটা মাথায় রাখি।

আমরা মানুষকে সুন্দর বলি কেন? সবার চেহারা যদি এক হত, সুন্দর হত, তাহলে সুন্দর কি আমরা তা বুঝতাম না। আমাদের হাত,পা, চোখ আছে- আমরা কত টুকু এর গুরুত্ব বুঝতে পারি? পারিনা। ঠিক এই মুহূর্তে যে চোখে দেখে না তার কথা ভাবেন, আমি নিশ্চিত আপনি এখনি চোখের গুরুত্ব বুঝতে পারবেন। সুতরাং আমরা যে যেভাবেই সৃষ্টি সেটা মহান আল্লাহ্‌ তাআলার ইচ্ছাতেই, এবং অবশ্যই এগুলোর উদ্দেশ্য আছে, যার সম্যক জ্ঞান তাঁর ( আল্লাহ্‌) নিকটই আছে শুধু।

এখন ধরা যাক একটা মেয়ে প্রশ্ন করল, তাহলে ঐ মেয়েটা কেন সুন্দর, কেন আমি না? এখন ধরা যাক, ঐ মেয়ে দুইটি সন্তানের জননী। মা হিসেবে তার যদি ক্ষমতা থাকত ঐ দুই সন্তানের চেহারা দেয়ার, তাহলে নিশ্চয়ই তিনি কাউকে কম, কাউকে বেশি চেহারা দিতেন না। কারণ দুইজনই তার সন্তান।

আর আমরা হলাম আল্লাহ্‌র বান্দা, তাঁর সৃষ্টি। সন্তানকে মা যতটা ভালবাসেন, তার থেকে অনেক অনেক গুন বেশি আল্লাহ্‌ ভালবাসেন তাঁর বান্দাকে, তাঁর সৃষ্টিকে। সুতরাং এক্ষেত্রেও তিনি কাউকে বেশি,কাউকে কম নিশ্চয়ই দিবেন না, তাহলে আপাত যে পার্থক্য আমরা দেখি- সেটা আল্লাহ্‌ পাকের মহাবিচক্ষণতার কারণেই। এটা আমরা বুঝতে পারি না অনেক সময়। কিন্তু এটা আমাদের মানতে হবে, ন্যায় বিচারক, পরম দয়ালু আল্লাহ্‌ পাকের সৃষ্টি কখনই খেয়াল খুশি (whimsical ) মত না ।

মানুষ এর আসল সৌন্দর্য তার মনে- এটা আমার কথা না-অনেক মণীষীর কথা। সেটা যদি বিচার করি, তাহলে আমরা কি দেখতে পাই । কাল হোক, ফর্সা হোক, লম্বা হোক, বেটে হোক- যে যে যেরকম হোক না কেন, ভিতরের এর যে আত্মা বা বিবেক, তা সবার একি রকম। সবাই আমরা পরিপূর্ণ সৃষ্টি।

আর আমরা সবাই বাহ্যিক দিক টাই দেখি, কিন্তু ভাবি না আল্লাহ্‌ পাক আমাদের দিয়েছেন-

১। অন্তঃকরণ
২। Mental Strength
৩। Talent
৪। সাহস
৫। Certain ability of being special in one thing

আমাদের এগুলো ব্যবহার করতে হবে তো!

সমাজে কেউ ধনী, কেউ বা গরীব। কেন? সেটাও আল্লাহ্‌র ইচ্ছা। এজন্য পবিত্র কুরআনে যাকাত এর কথা বলা হয়েছে । সুতরাং আল্লাহ্‌ পাক খুশী হন অভাবী ও গরীব লোক সাহায্য পেলে। তাহলে বুঝাই যায়,আল্লাহ্‌ পাক এর এ ব্যাপারে অবশ্যই উদ্দেশ্য আছে, সেজন্যই তিনি ধনী গরীব সৃষ্টি করেছেন। মানুষ তার অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করবে, কিন্তু আল্লাহ্‌র প্রতি অসন্তুষ্টি আনা যাবে না। তিনি কখনোই চান না কেউ খারাপ থাকুক। যারা অসন্তুষ্ট হয়, আল্লাহ্‌ পাকের পথ থেকে দূরে সরে যায়, নিজেদেরকে মানবতাবাদী বলে দাবী করে, এরা সবচেয়ে বড় ধোঁকার মধ্যে থাকে, শয়তান এভাবেই এদেরকে বিপথগামী করে ফেলে।

আজ ইউরোপ আমেরিকার অনেক লোকেরা প্লাস্টিক সার্জারি করাচ্ছে, তার ফলাফল যে খুব শুভ হচ্ছে না তা বলাই বাহুল্য। এরা নিজেদেরকে সুন্দর দেখানোর জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে, অথচ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার ব্যাপারে এত আগ্রহ তাদের নাই। কিন্তু এই যে এত এত কসমেটিকস, এগুলো কি আসলেই চেহারা পরিবর্তন করে? সব কসমেটিকস কিন্তু আসলে যা আছে, তা যত্ন ( maintain) করার কথাই বলে। রং ফর্সাকারী ক্রিম যে কতটা ফর্সা করে, তা সবাই জানেন।

নিজেকে পরিস্কার রাখা এই ব্যাপারে তাই ইসলামও জোর দিচ্ছে। রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন-

“পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংগ” ( মুসলিম)

পরম করুণাময় আল্লাহ্‌ ( সুবহানাল্লাহ্‌ তাআলা) যেখানে আমাদের সৃষ্টির বিষয়ে সুস্পষ্ট আয়াত অবতীর্ণ করেছেন, সেখানে আমাদের অসন্তুষ্টি এবং যদি তা আসেও সেজন্য তাঁর কাছে মাফ না চাওয়া,বরং অসন্তুষ্টিকে টিকিয়ে রাখা আসলেই অকৃতজ্ঞতার শামিল নয় কি? এটা নিঃসন্দেহে গুনাহ্‌র কাজ।

তাই কখনই কখনই অসন্তুষ্ট থাকা যাবেনা। সবসময় আমাদের আল্লাহ্‌ পাকের উপর অগাধ বিশ্বাস রাখতে হবে । তিনি তো আমাদের মালিক, মহাবিচক্ষণ, মহা পরাক্রমশালী, সর্বশক্তিমান, পরম দয়ালু।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:০৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×