কুমিল্লার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় পুরো দেশ। এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা কি অস্থিরতাকে প্রশ্রয় দেবো? এদেশের ভিন্নমত ও ধর্মাবলম্বীরা তো আমাদের দেশেরই নাগরিক। ঘটনার তদন্ত চলছে। এটা আশা করছি যে, সত্যটা যেন প্রকাশিত হয়। তবে, অনেকেই এ ঘটনাটি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতও পোষণ করছেন। একজন যেমন এমনটা বললেন- কোন দায়িত্বশীল হিন্দু’র পক্ষে দেবীর হাঁটুর ওপরে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখা সম্ভব না। কারণ, যিনি দায়িত্ববান, জ্ঞানবান, তিনি নিশ্চয়ই অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রাখবেন। আমাদের মধ্যে দায়িত্বশীলরা যেমন রাখেন।
তাহলে করলো কে? ধরে নেই- ওটা কোনো হিন্দুই করেছে। তবে এটাও সত্যি যে, তিনি নিশ্চয়ই দায়িত্বশীল, জ্ঞানবান, বিবেকবান নন। ধর্ম সম্পর্কে বা ভিন্ন মত, পথ সম্পর্কে তার ধারণা নিশ্চয়ই অতো গভীরে নেই। যেখানে সরকার ৩৫ হাজার পূজোমণ্ডপে পূজো করার অনুমতি দিয়েছে সারা দেশব্যাপী, সেখানে এমন কী ঘটলো যে, হিন্দুরা কোরআন নিয়ে একটা বাজে রকমের পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটাবে? আর যদি জ্ঞানবান কোনো হিন্দু সজ্ঞানে, বুঝেশুনেও এমনটা করে থাকে, তবে তা তদন্তে নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসবে। এছাড়া কোন মুসলমানও যদি পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্য করে থাকে, তাও বেরিয়ে আসবে। তখন নিশ্চয়ই শাস্তির মাধ্যমে তার শেষটা হবে।
যেকোন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলা সহজ। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করে আইনের মাধ্যমে সমাধানে আনাই হচ্ছে বৃদ্ধিমানের কাজ এবং সভ্য মানুষের কাজ। এদেশটা চালানোর জন্য একটা প্রশাসন রয়েছে। তারা কাজ করছে। কারো মনঃপুত না হলে তারা যেন নিয়মমাফিক (কৌশল ও জনসমর্থন-জনসংশ্লিষ্টতা বাড়ানোর মাধ্যমে) ক্ষমতায় আসে এবং পরিবর্তনটা দেখিয়ে দেয় জনগণকে। যদি জোরজবরদস্তির কথা ওঠে, তাহলে বলবো- সেটা অর্জন করুন (যদিও অনৈতিক ক্ষমতা ঠিক পথ নয়)। সততা অনেকসময় ক্ষমতার কাছে কিছুসময়ের জন্য কোণঠাসা থাকে। কিন্তু সেসময়টুকুতে তারা কি করছেন?
অন্ততঃ প্রতিদিন কোরআন পড়া ধর্মভীরু মানুষটার কাছে কোরআনের প্রতি মায়া-ভালবাসা কতো, তা বলে শেষ করা যাবে না। সেই কোরআনের কোন রকম অসম্মান তিনি সহ্যই করতে পারবেন না। কিন্তু আইন শৃঙ্ক্ষলার প্রতি তো শ্রদ্ধা রাখতেই হবে। ন্যায়পরায়ণ মানুষেরা তো আর পরিস্থিতি খারাপ করার পক্ষে থাকবে না।
ব্যক্তিগতভাবে আমার বহু কলিগ, বড়ভাই, শুভাকাঙ্খী, ভক্ত রয়েছে যারা আমার ইসলাম সম্পর্কিত যেকোন বিষয়ে অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকেন। বিশেষকরে, কোরআন তেলাওয়াত, হামদ-নাত ও ইসলামী লেখালেখিতে তারা যেভাবে শুভকামনা করেন, তা যেকোন মানুষ শুনলে ঐ হিন্দুদের প্রতি শ্রদ্ধা আসবেই। তারা কোরআন শরীফকে যেভাবে সম্মান করেন, তা দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়! সুতরাং শুধু হুজুগে মেতে কোন অস্থিরতা তৈরী করার আগে একটু ভাবুন, আপনার পরিচিত ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে আপনার কেমন সম্পর্ক? মধুর আচরণ ও সহনশীলতা দিয়ে যদি আমরা ইসলামের নূরকে ছড়িয়ে দিতে না পারি, তাহলে আমাদের চেয়ে হতভাগা আর কে আছে?
একবার ভাবুন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব যদি আপনাকে দেয়া হয়, তবে আপনি কি সাধারণ সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্টদের মতো স্রোতের প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেবার মতো আচরণ করতে পারবেন? বলুন?