তবে কি এদেশে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা নেই?
সরকারদলীয় সাংবাদিকেরা কি সরকারের প্রশাসন ও রাষ্ট্রের ভালোর জন্য সমালোচনা করবে না?
যদি তা না করে তবে কেন করে না, কী লাভ তাদের?
সেরা মাধ্যমগুলোতে দেশের সেরা সম্পাদকেরা তবে কি মিথ্যে বলেন শুধু?
সাংবাদিকেরা নাকি সরকারের সম্মান কোথায় নষ্ট হবে কোথায় বাড়বে এটা বোঝে না। বিএনপি ও জামাতের সাংবাদিকেরাই শুধু সরকারের সমালোচনা করার জন্য বানিয়ে বানিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে। খিচুড়ি রান্না শেখার জন্য বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা ব্যয় ধার্য করার খবর নিয়ে তোলপাড় করে দেয়া হয়েছে সকল মাধ্যম।
আমরা তো একদম সাধারণ মানুষ। শরীর ও মগজ খাটিয়ে আয়-উপার্জন করে সংসার চালাতে হয়। যেকোন তথ্য উপাত্ত এখন আমাদের চোখের সামনেই জ্বল জ্বল করতে থাকে। একটি ন্যায়পরায়ণ সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা এই আমরা সাধারণেরা চাইতেই পারি। কারণ খাটাখাটুনির চেয়ে আপসে আপসে কয়েকটা প্রকল্প, টেন্ডার, খাদ্য বিতরণ ও অন্যান্য কাজ থেকে যদি নিজের অংশটা বাগিয়ে নেয়া যায়, সাথে সাথে ক্ষমতাটাও দেখানো যায়, সেই অর্থ দিয়ে নিজের সারা জীবন ও কয়েক পুরুষ যদি শুয়ে বসে খেতে পারে তবে মানুষ কর্মঠ অর্থনীতিতে কেন নিজেকে জড়াবে? সৎ চাকুরে ও সৎ ব্যবসায়ী হলে কত টাকা সারাজীবনে জমানো যায়?
এতোগুলো ঘটনা পরপর ঘটে গেলো- কেসিনো কাণ্ড, বালিশ দুর্নীতি, পর্দা ইস্যু, মাস্ক কেলেঙ্কারী, ভুঁয়া করোনা টেস্ট, চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীকে মারধর, নেত্রীর শিশু অপহরণ, ঔষধ প্রশাসনের দুর্নীতি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অস্বাভাবিক অর্থে কেনাকাটা, ত্রাণ বিতরণে চাল-গম-কাপড় মজুদ করে বিক্রি, প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ, গরু চুরির অভিযোগে মা মেয়েকে জনসমক্ষে দড়ি দিয়ে বেঁধে ঘোরানো, ইউএনও ও তার বাবাকে মাথায় আঘাত করে হত্যা চেষ্টা, সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি, এয়ারপোর্টে করোনার ভুঁয়া টেস্ট সনদ, ইতালী প্রবাসীদের কর্মে ফেরত যাবার সময় সেখান থেকে পুনরায় দেশে পুশব্যাক করা, সিনহা হত্যায় ওসি প্রদীপের হাজারো অপরাধ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালকের অর্থ কেলেঙ্কারী –আর কতো লিখবো? এগুলো কারা সামনে তুলে এনেছে? সরকারের লোকজন নাকি সাংবাদিকেরা?
আর যে বিষয়গুলো সামনে তুলে এনেছেন সাংবাদিকেরা তারা কি সবই ভুল তুলে এনেছেন? যখনই কোন অপরাধের সাথে কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে, প্রমাণিত হচ্ছে সকল রকমের দলিলের মাধ্যমে, তখনই তাদেরকে দল থেকে ও সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। বলে দেয়া হচ্ছে এরা বিএনপি ও জামাতের প্রোডাক্ট। প্রত্যেকটি বড় বড় অর্থ সম্পর্কিত অস্বাভাবিক অনৈতিক কাজের ক্ষেত্রেই নিশ্চয়ই শক্তিশালী মানুষগুলো তাদের পেছনে রয়েছে। তথ্য উপাত্ত ও সাক্ষ্য মুছে ফেলতে ক্রসফায়ার বা সরিয়ে দেবার ঘটনাও রয়েছে। এই বিষয়গুলো সবাই বোঝে। বোঝার পরও নিজের পক্ষে সাফাই গাওয়ার কোন যুক্তি থাকতে পারে না। থাকাও উচিৎ না।
রাজনীতিবিদদেরকে মনে রাখতে হবে সবসময়, বিশ্বাস করতে হবে মনেপ্রাণে যে- নিশ্চয়ই একটি সভ্য, নিরপেক্ষ, নৈতিক, যার যার যথা অধিকার নিশ্চত করা, ন্যায়পরায়ণ ও অপরাধহীন একটি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যই রাজনীতি করছেন! নাকি অন্যকিছু? যা আমরা দেখছি? নিশ্চয়ই না। আমরা সাধারণেরা এটা বিশ্বাস করতে চাই।
সমাজ, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির এমন বেলাল্লাপনা, ক্ষমতার দাপট দেখানো, অবৈধ উপার্জন ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলতে গেলেই কেন শুনতে হবে অমুক দল কী করেছে, তমুক দল কী করেছে, অন্য দলের প্রোডাক্ট, ওদেরই দোষ ইত্যাদি? এ ধরনের বক্তব্য থেকেও আমরা পরিত্রাণ চাই। চলমান ব্যবস্থার ক্ষতগুলো ধরিয়ে দিলে, প্রমাণ সামনে তুলে আনলে, অন্যায় থেকে মুক্তি চাইলে কেন শুনতে হবে- ও নিশ্চয়ই আপনি বিএনপি অথবা জামাত করেন!?
নিরপেক্ষ দলাদলিহীন মানুষ কি এদেশে নেই? দু’মুঠো ভাত পেটে পুরবেন আর পরিবার নিয়ে একটু নিরাপত্তায় ঘেরা সময় ও জীবন কাটাবেন –এইটুকু প্রাপ্তি কি চাইতে নেই?
আমরা বিশ্বাস করি, এদেশে সৎ, যোগ্য ও সত্যিকার নেতৃত্বের অভাব নেই। তাদেরকে সামনে আসতে দিন। তাদেরকেই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কাজ করতে দিন, যারা নিজের প্রতিপত্তি, অর্থ-সম্পদ, সুখের কথা না ভেবে শুধুই জনগণের স্বার্থ, অধিকার ও স্বপ্নের বীজ বপন করতে সকল বাধা-বিপত্তি ও পেশীশক্তিকে দূর করবে।
দয়াকরে এই লেখার লেখককে কোন দলের অন্তর্ভুক্ত করবেন না। আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, একাত্তরে তিনি জামাল বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ময়মনসিংহ অঞ্চলে তিনি শক্তিমান যোদ্ধা ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর একজন একান্ত ভক্ত। যিনি শেখ মুজিবকে বিশ্বের সেরা একজন নেতা মনে করেন। যাঁর অগ্নিভাষণে এখনো শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। ৭১’র সকল বীর কমান্ডার ও নেতৃত্বের প্রতি যার অগাধ শ্রদ্ধা। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে এখনো তিনি যেকোন সময় লড়াই করতে প্রস্তুত। তার অনুপ্রেরণায় লালিত এই লেখকের প্রাণের আকুতি নিশ্চয়ই আপনাদের মানসিকতায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন আনবে।
সকল জরা ঠেলে, তিমির টুটে ভাল থাকুক বাংলাদেশ।
***