শুক্রবার মসজিদে যেতাম আজানের পরপরই। তবে সেসময়ে গেলেও ইমামের কাছাকাছি বসার সুযোগ পাওয়া দুষ্কর হয়। একবার তো একটু বেশি দেরি হওয়াতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে হলো। আমার বাবাকে বললাম- বাবা, এটা কোন কথা? বাবা বললেন- হ্যাঁ এটাই কথা। তুমি পরে গেছো, তুমি জায়গা পাওনি। অন্য কেউও যদি পরে যায় সেও জায়গা পাবে না। তোমাকে আগে যেতে হবে। তবেই তুমি প্রথম কয়েক কাতারের মধ্যে বসতে পারবে। আমি বাবার এই যুক্তি মানতে পারছিলাম না। বললাম- বাবা, এটা শুধু আমার জন্য বলছি না, যে-ই পরে যাক না কেন, সে কি মসজিদের ভেতরে বসার মতো সুবিধা পেতে পারে না? বাবা বললেন- মসজিদের জায়গা আরো বাড়ালে আরো মুসল্লী আসবে। পরে যারা যাবে তারা তারপরও রাস্তায় দাঁড়াবে, নচেৎ বাসায় ফেরত যাবে বা অন্য আরেকটি মসজিদে যেয়ে জায়গা খুঁজবে। তুমি বাবা ফেল করেছো। তোমাকে আগেই যাওয়া উচিৎ ছিল।
বাবা সত্যি বলেছিলেন। বাবার সেই কথা মনে রেখে জুম্মাবারে এখন মসজিদে অনেক আগেই পৌঁছাই। ১২.১৬ টায় আজান হলেও পৌঁছে যাই ১১.৩০ টায়। তারপরও দ্বিতীয় কাতারে বসতে হয়। করোনা আসার পর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক কাতার ফাঁকা রেখে নামাজে বসতে বলা হলেও তা আর মানা হচ্ছে না। তবে ডানে বামে এক জায়নামাজ পর্যন্ত ফাঁকা রেখে বসছে সবাই। মোটামুটি সবাই জায়নামাজ নিয়ে যাচ্ছে। সমস্যা হলো- আমি যতই আগে যাই না কেন, আগে থেকেই ইমামের আশপাশে কয়েকটি জায়নামাজ বিছানো থাকে। ফলে সেই জায়গাতে আমি বসতে পারছি না। ইমাম সাহেব আলোচনা করছেন, দেখা গেলো তখন এসে সেই বিছানো জায়নামাজে কেউ এসে বসছেন। অর্থাৎ উনি বা উনারা আগেই জায়গা বুকিং দিয়ে রেখেছেন। হয়তো মসজিদের দায়িত্বে থাকা খাদেমগণই তাদের হয়ে এ কাজ করেছেন। কিন্তু আমি যে আগে গেলাম ইমামের খুব কাছে বসে ওয়াজ শুনবো, নামাজ পড়বো, আমার সে ইচ্ছের কী হবে?
রাজনীতি, অফিস, ব্যবসা –সবস্থানেই তো দখলবাজী, মাস্তানী, বংশশক্তি ইত্যাদি অপকর্ম ও সুবিধা নেবার-দেবার ব্যবস্থা রয়েছে। এমন একটা ধর্মীয় এবাদৎ প্রতিষ্ঠানেও কী অমন কর্ম করা ঠিক? মনে রাখা উচিৎ আল্লাহ্ পাক হচ্ছেন আলীমুল গাইয়্যিব, উনি মানুষের অন্তরের কথা ও আকুতি শোনেন, জানেন। একদিন সবকিছুর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচার উনি করবেন।
***