সে অনুভূতিটা কেমন? একে অনুভূতি বলব না অন্যকিছু। বুদ্ধই জানেন। তিনি বোধি লাভ করার পর তার চিত্ত প্রশান্তি লাভ করিল কিনা?
জানি না। সম্ভবত: না। তিনি সকল চাহিদা হতে মুক্ত হইলেন। কিন্তু সাধারন মানুষ সেই মুক্তি কিরূপে লাভ করিবে? সকলই কি সেই নিরপেক্ষক মোক্ষ লাভ করিবে? না, তোমার আমার মতো মোক্ষজ্ঞানহীন মানুষ ছাড়া এই বিশ্ব কি করে টিকিবে। বুদ্ধ ছাড়াও কি টিকিত?
তিনি অষ্টমার্গের জীবন দেখালেনই।
দেখিলাম, এই জগতে যাহা প্রকৃত যাহা মৌলিক, তাহা হইল দুঃখ। বুদ্ধ যখন নির্বাণ লাভ করিলেন তখন কি তিনি সমস্ত রোগ ব্যাধি জরা সর্বাপরি দুঃখ মুক্ত হলেন। তাহলে তিনি কিভাবে অপরের দুঃখ কষ্ট বুঝতেন। বুদ্ধ কি জাতিস্মর ছিলেন? যদি ধরি, বোধি প্রাপ্ত হওয়ার পূর্ব ও পরের জীবন আলাদা আলাদা। তাহলে বেয়াদবী হয় এই ভেবে যে, আমরা তো পূর্ব সিদ্ধান্তকে ভুল ধরে সঠিকটা নিয়ে নতুন জীবন শুরু করার কথা অহরহ ভাবি। মানুষ তারপরও ভুল করে আবার শুধরাই অর্থ্যাৎ একের ভেতর অনেক জনম।
এটা ঠিক যে, গৌতমের উপর এই ধরনের কিছু আরোপ করা অনুচিত। কিন্তু মানুষের যুক্তি বুদ্ধি বড়ই সীমা ছাড়াইতে চায়। আমরা যেহেতু বুদ্ধ হইতে পারিব না, অতৃপ্ত আত্নায় এই বাসনা জাগে বুদ্ধ কিরূপে বুদ্ধ হইলেন, ইহা জানিতে।
বুদ্ধ কিরূপে কি বুঝিতেন তাহা জানিবার উপায় নাই। তাহা যদি নিতান্ত ঐতিহাসিক বিষয়রূপে ঘটে থাকে তবে সেই বোধিত্ব বুদ্ধতে শেষ। আর যদি ইহা সত্যই অধি জগতের বিষয় হয়, তাহলে বুদ্ধ আমার ভেতরও খেলা করে। হয়তো এটাই বোধি লাভের মর্ম্। তুমি এই মর্ম অনুধাবনের পথে এগুতে থাকো। মনে প্রশান্তির ভাব জাগিল।
আমাদের জীর্ন বস্ত্র ত্যাগ করতে হইবে। যে বস্ত্রখানি ত্যাগ করিতে মানুষ বেশী বেশী ভুল করে, তা হলো চেতনা। তাহারা চেতনার বেদিতে এতই অর্ঘ্য দান করে যে, চেতনা কাহার নিমিত্তে আসিয়াছে তাহাই ভুলিয়া যায়। তাহারা বুঝে না চেতনা পশুর স্বভাব, মনুষ্য স্বভাব না। মনুষ্য স্বভাব হলো সে বিবেকের তাড়না সত্য অন্বেষণে জীবনপাত করে। বোধিজ্ঞান ছাড়া সকল সত্যই অপেক্ষিক, তাই বিবেকের তাড়নায় সদা দৌড়ের উপর থাকিতে হয়।
যে মানুষ আত্নার অনুসন্ধান করে, সে দেখিতে পাইবে চেতনা কিরূপে অন্ধ করিয়া তোমাদের ভুলের পথে বন্দী করে রাখে। যে মোক্ষ লাভ করিতে চায় সে যেন আত্নার অনুসন্ধান করে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:৫৮