আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ জানে ও মানে রাজনীতিবিদ মানেই চোর। কিন্তু কেন? কেন রাজনীতির মানুষেরাই এতো এতো দূর্নীতি করে আর অপরাধ করে / প্রশ্রয় দেয়?
এর উত্তর জানতে হলে আপনাকে প্রথমেই দেখতে হবে, দেশের রাজনীতিতে আসছে কারা? তারা কোন ধরনের মানুষ? তাদের শিক্ষা দীক্ষা বা সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড কি? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখবেন, ভালো ফ্যামিলির চরিত্রবান নীতিবান মানুষেরা রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন, কিংবা রাজনীতিতে সুবিধা করতে পারেন না।
তিনটা উদাহরন দেই। (সম্পূর্ণ বাস্তব ও সত্য ঘটনা, শুধু পাত্র/পাত্রীর নাম পরিবর্তন করে দেয়া)
১) আমার এলাকার যুবলীগ এর মাঝের সারির নেতা ফাহিম (ছদ্মনাম) ১৪ আগষ্ট রাতে দেইল্যা রাজাকারের মৃত্যুর পর শোক জানিয়ে ফেসবুকে গোটা পাচেক পোষ্ট করেছে। দেইল্যা রাজাকারের পক্ষে প্রচলিত আজগুবি মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ফেসবুকে শেয়ার করেছে। পরেরদিন কালো পাঞ্জাবিতে বঙ্গবন্ধুর সিড়িতে পরে থাকা রক্তাক্ত ছবি ছাপানো পোষাক পরে খিচুড়ি পার্টি করেছে। এবং বিকালে কালো শাড়ী পরিহিতা বান্ধবীকে নিয়ে ঘুড়ে বেড়িয়েছে।
এই ছেলে না ইসলামী আচরন করছে, না তো আওয়ামী লীগের নীতি মানতেছে। কিন্তু তার রাজনৈতিক উত্থান যেভাবে হচ্ছে, দ্রুতই মাঝারি মানের নেতা থেকে শীর্ষ নেতা হয়ে যাবে এটা শিউর।
২) ভার্সিটিতে আমাদের সময়ে যুবদলের ভীষন প্রতাপ। আমার ক্লাসমেট এক মেয়ে যুবদলের নেত্রী হবার বাসনায় যুবদলের মিছিল মিটিংয়ে যোগ দেয়, বিভিন্ন ফাংশনে সময় দেয়। আজ এক নেতার সঙ্গে রুমডেট, কাল আরেক নেতার সাথে লংড্রাইভে যায়। জেলা যুবদলের নেতার সাথে তার যৌনসম্পর্কের ভিডিয়ো ফোনে ফোনে ছড়িয়ে পরে। তাতে লোকসান হয়নি একটুও, যুবদলের কলেজ কমিটিতে জায়গাও হয়। ক্ষমতার সাথে সাথে তার অত্যাচারও বেড়ে যায়। হোষ্টেলের মেয়েদের র্যাগিং, চাদা উঠানো, নির্যাতন নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিলো।
মেয়েটা এখন উপজেলা পর্যায়ের লীগার নেত্রী। দল চেঞ্জ করেছে কিন্তু স্বভাব চরিত্র বদলায়নি।
৩) এই লোকের সম্পর্কে লেখা একটু সমস্যার। অনলাইনে তাকে প্রায় সবাই চেনে। ফেসবুকেও তার প্রচুর জনপ্রিয়তা। তবে শাহজাদা হোসেন শিপলু (ছদ্মনাম) সম্পর্কে জানলে বোঝা যাবে দেশের রাজনীতির অধঃপতনের মূল কারন কি।
শিপলু ভাই ভালো ধনী পরিবারের সন্তান। অশিক্ষিত নন, লেখাপড়া করেছেন ভার্সিটি পর্যন্ত (সম্পূর্ণ করেননি)। প্রেমের বিয়ে করলেও তার চারিত্রিক ও আচরনগত ত্রুটির জন্য বিয়েটি স্থায়ী হয়নি। শিপলু ভাই আওয়ামীলীগের একটা অংগসংগঠনের উপজেলা পর্যায়ের নেতা। বাবা বেশ ধনী তাই টাকা পয়সা নিয়ে চিন্তা করতে হয়না। নিজেকে উদ্যোক্তা পরিচয় দিলেও তার প্রায় সব উদ্যোগ মাঠে মারা খেয়েছে।
কখনো কনস্ট্রাকশন বিজনেস, কখনো মাছের ব্যাবসা, কখনো রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা আবার কখনো ইটের ব্যবসা করেছেন। কোনটাতেই সফল হতে পারেন নাই। নারীঘটিত বিভিন্ন কেলেংকারিতে কাছের বন্ধুদেরকেও হারিয়েছেন। তার রেষ্টুরেন্টের রিসেপসনে তার এক ছোটভাইকে বসিয়ে রেখে সেই ছোটভাইয়েরই প্রেমিকাকে কিচেনে নিয়ে জোর করে যৌন সম্পর্ক করেছিলেন। এরপরই তার ছোটভাই-সহচরদের সাথে তার দূরত্বের শুরু। ছবি আকা আর মিডিয়া প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এর নামে অসংখ্য মেয়েদের যৌন হেনস্থাকারী এই লোক এখন উপজেলা পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
এমন নেতারা রাজনীতিতে আসলে তো দূর্নীতি আর অপরাধ বাড়বেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৩:১৭