বাংলাদেশের সাবেক আম্পায়ার নাদির শাহ গতকাল মৃত্যুবরন করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। (১৯৬৪ - ২০২১ )
আন্তর্জাতিক আম্পায়ার প্যানেলের একজন সদস্য ছিলেন, ৬ টেষ্ট, ৬৩ ওয়ানডে ও ৩ টি টেষ্ট ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।
তার মৃত্যুতে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও শোক জানাচ্ছি। তাকে নিয়ে মন্দ কথা বলবো না, কারন সেটা শোভা পায় না।
কিন্তু আমি বাংলাদেশ ক্রিকেটের কর্তাব্যক্তি ও সাংবাদিকদের আচরনে তাজ্জব বনে যাচ্ছি। জালাল ইউনুস, রকিবুল হাসান, সয়লাব হোসেন টুটুল, তারেক মাহমুদ এর মতো ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সাংবাদিকেরা নাদির শাহকে একদম হিরো বানিয়ে ছেড়েছেন। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের আগে দুদলের ক্রিকেটার, কোচ, স্টাফেরা নীরবে দাড়িয়ে সম্মান প্রদর্শনও করেছেন। মৃত ব্যক্তির দোষ প্রকাশ করা না হয় অশোভন, কিন্তু তাই বলে তাকে হিরো কেন বানাতে হবে? তার অপরাধ আড়াল করে গ্লোরিফাই কেন করতে হবে?
নাদির শাহ ২০১২ সালে ইন্ডিয়া টিভির স্টিং অপারেশনে ম্যাচ ফিক্সিং এর প্রস্তাবে রাজি হন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রথম ফিক্সিং স্ক্যান্ডাল তাকে দিয়েই শুরু, আশরাফুলে স্ক্যান্ডাল পরে এসেছিলো। ইন্ডিয়া টিভির স্টিং অপারেশনের ভিডিওটা যারা দেখেছেন, তাদের হয়তো মনে আছে, জুয়াড়িদের পক্ষে ডিসিশন দিতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। ডিসিশন প্রতি তাকে ৫০০ ডলার অফার করা হলে তিনি ১০০০ ডলারের কমে হবে না বলে জানিয়ে দেন। ঐ স্ক্যান্ডালে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্মান পুরো মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন বাংলাদেশের আম্পায়াররা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এলবিডব্লিউ দেন না, বিসিবিরও অনুরোধ থাকে এই বিষয়ে। জুয়াড়িদের ইনসাইড ইনফরমেশন ট্রেডিং এর প্রস্তাবেও রাজি হয়ে যান তিনি।
নাদির শাহ জুয়াড়িদের (ছদ্মবেশী) প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন, কিন্তু কখনো ম্যাচ ফিক্সিং করেন নাই। সাকিব আল হাসান জুয়াড়িদের প্রস্তাবের কথা গোপন করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিং, স্পট ফিক্সিং, ইনসাইডার ইনফরমেশেন ট্রেডিং এর অভিযোগ কোন প্রমান হয়নি। আশরাফুল স্পট/ম্যাচ ফিক্সিং করেছেন এবং স্বীকার করে নিয়েছেন। আমার কাছে এই তিনজন সমান অপরাধী। তাদের ইমেজ আমার কাছে ঐ ফিক্সিং এর থেকেই নষ্ট হয়ে গেছে। তারা মেধাবী, প্রতিভাবান ও যোগ্য হইলেও দেশের হিরো নন।
নাদির শাহকে বিসিবি ২০১৩ সালে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। তবে ২০১৬তে আবার এই নিষেধাজ্ঞা তুলেও নেয়া হয়। স্পষ্ট প্রমান ও ভিডিও থাকলেও নাদির শাহ কখনোই নিজের ভুল স্বীকার করেন নাই।
ইন্ডিয়া টিভির সেই স্টিং অপারেশনঃ
বাংলাদেশে একটা ট্রেন্ড আছে, কেউ মরলেই তার সব দোষ-ত্রুটি আড়াল করে একেবারে ফেরেশতা বানিয়ে দেয়া হয়। এইটা আমার কাছে ভালো লাগে না। একবার যে দেশের সম্মান ধুলায় মিশিয়ে দিছে, তার মৃত্যুর পর দেশের হিরো বানিয়ে দেয়া একেবারেই বিরক্তিকর। নাদির শাহের মৃত্যুতে তার আত্মার শান্তি কামনা করি। কিন্তু সাংবাদিকেরা তাকে যেভাবে হিরো বানিয়ে দিচ্ছেন, এই ব্যাপারটারও প্রতিবাদ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫১