এক।
কয়েকদিন আগে ফেসবুকে একটা খাবার বিষয়ক গ্রুপে "Do you mind if I join you?" শিরোনামে একটা লেখা খুব ভাইরাল হয়। ঢাকার এক ফাস্টফুড রেস্টুরেন্টে এক ব্যাক্তি অচেনা এক মেয়ের সাথে বসে খাবার খেয়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুঁজিবাদ বিষয়ে আলোচনা করে। এবং অপরিচিত মানুষের সাথে এক টেবিলে খাওয়ার ঘটনাকে সে "most wholesome lunch" বলে উল্লেখ করে।
যদিও লেখাটি চুরি করা, লেখার নিচে কালেক্টেড লেখা ছিলো। সুতরাং যে লেখা পোষ্ট করেছে সে হয়তো একটু লজ্জা-শরম ধারন করে। কিন্তু লেখকের নাম না লিখে শুধু কালেক্টেড লেখা এক ধরনের ছ্যাচরামিই বলা যায়।
যাই হোক, লেখাটি ফেসবুকে খুব ভাইরাল হয়েছিলো এবং প্রচুর ট্রল ও মিমস হয়েছে এইটা নিয়ে। এর কারনটা কি? কোন এক টং দোকানে গেলে দেখা যাবে চিনে না জানে না এমন মানুষেরা চা-সিগারেট খেতে খেতে রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, খাদ্য সমস্যা, সাহিত্য, খেলাধুলা, অপরাধ, শোবিজ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা করে, তর্ক বিতর্ক করে। এইটা স্বাভাবিক ঘটনা। আপনি ঢাকার নামী রেস্টুরেন্টে বিদেশী ফাস্টফুড খেয়ে যখন যদি পুঁজিবাদকে গালমন্দ করেন, মানুষ আপনাকে হয় নির্বোধ বলবে, নাহলে এ্যাটেনশন সিকার বলবে।
আমাদের সমাজে এই ধরনের প্রচুর মানুষ আছে। আইফোন হাতে নিয়ে ব্রান্ডের জামা-জুতা পরে একটা চে-গুয়েভারার টুপি মাথায় ঝুলিয়ে পুঁজিবাদকে গালাগালি করে, স্যোস্যালিস্ট ও কমিউনিষ্ট ইকোনমির গুনগান গেয়ে বেড়ায়। এই ক্যাটাগরির পোলাপানগুলো সব নির্বোধ অথবা এ্যাটেনশনসিকার।
দুই।
ইদানীং সবাই নিজেকে হামবড়া ভেবে বসে আছে। রাজনীতিবিদ নিজেকে দেশের মাথা ভেবে বসে থাকেন, সরকারী কর্মচারী নিজেকে সবার চেয়ে সেরা ও সম্মানী মানুষ মনে করেন, ঢাকা ইউনিভার্সিটির (প্রায় সব) ছাত্র নিজেকে দেশের সেরা ছাত্র এবং বাকিদের অগা-মগা-ছগা জ্ঞান করে। বিদেশে ভিক্ষা করে কেঁদে কেটে এ্যাসাইলাম নেয়া মানুষ এখন বাংলাদেশের মানুষকে বর্বর মনে করে। ইউরোপ-আমেরিকায় ওয়েটারের কাজ করে, ট্যাক্সি ড্রাইভ করে দু'পয়সা আয় করে নিজেকে আর বাংলাদেশী না ভাবা মানুষ বাংলাদেশকে ৩য় বিশ্বের গরীব দেশ জ্ঞান করে।
এই মানুষগুলো দুটো ইংরেজী শিখেই নিজেকে বিশাল জ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবি ভেবে সব বিষয়ে জ্ঞান দেখাতে চায়। কেউ এদের কথাকে খুব একটা পাত্তা না দিলেও এরা থোড়াই কেয়ার করে। এদের দেখে ভাবি গাঁয়ে মানে না, আপনি মোড়ল প্রবাদটি এমনি এমনি এ ভাষায় যুক্ত হয়নি।
আমি এই হামবড়া টাইপের মানুষদের উপর তেমন একটা রাগ করি না। কারন তাদেরকে আমার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মনে হয়। আর বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের সাথে রাগ করার কোন মানেই নেই।
বিদ্রঃ আবেগী জোশ দেখিয়ে কমেন্ট করার আগে নিচের লেখাটুকু পড়েন।
হঠাৎ এই লেখার উদ্দেশ্যঃ ১ নং লেখা ফেসবুকে ভাইরাল লেখাটির উপর বিরক্ত হয়ে লেখা। ২ নং লেখা প্রবাসী ক্লাসমেট এর হামবড়া টাইপ মনোভাব দেখে লেখা।
কেন উৎসর্গ করলামঃ আমি ঠিক করেছি এখন থেকে আমার প্রতিটি লেখাই কাউকে না কাউকে উৎসর্গ করে লিখবো। আর চাঁদগাজী আমার প্রিয় ব্লগার। তার বুদ্ধিদীপ্ত প্রবন্ধ ও গবেষনা মূলক লেখাগুলো থেকে আমি জ্ঞানের খোরাক পাই, ব্লগের সবার লেখাতে তার ভদ্র ভাষার প্রাসঙ্গিক ও সাপোর্টিভ মন্তব্য দেখে অনুপ্রেরণা পাই। তাই প্রথম উৎসর্গ তাকেই করা।
ছবি দেয়ার কারনঃ আমি পশুপ্রেমী। এখন থেকে আমার প্রায় সব লেখাতেই পশু-পাখির ছবি থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৪