মাননীয় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মহোদয় আজ (মঙ্গলবার) সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত সংলাপে বলেছেন, "সরকারি কর্মকর্তাদের স্যার বা ম্যাডাম বলতে হবে- এমন কোনো রীতি নেই।" (নিউজ লিংক)
সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, "কেউ সেবা নিতে গেলে হাসিমুখে আপনার আচরণটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেউ সেবা নিতে গেলে যদি ওয়েলকামিং এটিচিউড না থাকে, আপনি তিরস্কার বা রেগে আছেন- এগুলো দুর্নীতি। দুর্ব্যবহার দুর্নীতির শামিল। এটা করা যাবে না। আপনি সুন্দর, সাবলীলভাবে কথা বলুন। সুন্দর করে কথা বলাটা এমন না যে আপনি ক্ষমতা দেখাতে পারছেন না বা আপনি হেরে যাচ্ছেন। দরকার সাধ্যমতো সেবাটি দেওয়া। আপনার আচরণ সরকারের আচরণ।"
প্রথমে বলে রাখি, আমি সরকারি কর্মচারী না। তবে সরকারী কর্মচারীদের দুঃখ, কষ্ট ও আত্মমর্যাদা অনুভব করে তাদের পক্ষ্যে এই লেখাটি লিখছি।
মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয় খুবই হতাশ করলেন। সরকারী কর্মকর্তাগন কত কষ্ট করে সরকারী কর্মকর্তা হয়েছেন এটা নিশ্চয় তার অজানা নয়! দেশের সবাই মনে করে বিসিএস ক্যাডার হতে হলে ভার্সিটি পাশের পর গোটা দশেক মোটা মোটা বই পড়ে মুখস্থবিদ্যা অর্জন করে বিসিএস এর বৈতরণী পার হতে হয়। এটা ভুল, খুবই ভুল একটা ধারনা। বর্তমানে বিসিএস ক্যাডার হতে ভার্সিটি পাশের পর কেউ মুখস্থবিদ্য অর্জন করে না, ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েই এই মিশনে লেগে পরতে হয়। ভার্সিটিতে শুধু ডিগ্রি পেতেই পড়াশোনা করা হয়, লক্ষ্যটা তো বিসিএস ক্যাডারেই স্থির থাকে। প্রকৌশল বা ডাক্তার কিংবা বিজ্ঞান বিভাগ সবজায়গায় ছাত্রছাত্রীরা প্রথম বর্ষ থেকেই বিসিএস এর প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। এ বিষয়ে সময় টিভির রিপোর্ট ছিলো, আশা করি সেটি প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টি এড়ায়নি।
এতো পড়াশোনা করে তারপর বিসিএস এর দীর্ঘ বাছাইপর্ব পার হয়ে যারা বিসিএস ক্যাডার হন, তারা কি জনসাধারন থেকে আলাদা নন? তারা কি করে জনসাধারন হতে পারে? বাংলা একাডেমির উচিৎ দেশের এই সূর্য সন্তানদের জন্য জনঅসাধারন নামে একটি শব্দ বাংলা ভাষায় যুক্ত করা।
যা বলছিলাম, একজন বিসিএস ক্যাডার এই দেশের সবচেয়ে ত্যাগ স্বীকার কারী ব্যক্তি। ভার্সিটির একাডেমিক পড়াশোনা ত্যাগ করে, ইঞ্জিনিয়ারিং-ডাক্তারী পেশার কর্তব্যবোধ ত্যাগ করে, জনগনের ট্যাক্সের পয়সায় বিজ্ঞানে পড়ে গবেষনা ও বিজ্ঞান বিষয়ক পেশার মায়া ত্যাগ করে, দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ ত্যাগ করে পুলিশ, প্রশাসন, কর বিষয়ক পেশায় বিসিএস ক্যাডার হওয়া চাট্টিখানি কথা না।
এতো ত্যাগ স্বীকার করে কি পায় এই মেধাবী সন্তানেরা? দেশের সাধারন মানুষেরা এই অসাধারন মানুষদের সরকারী কর্মকর্তা পর্যন্ত বলতে চান না। সাধারনেরা যুক্তি দেখায় সংবিধানে সরকারী কর্মকর্তা শব্দ নেই, বরং সরকারী কর্মচারী বলা হয়েছে। মানলাম সংবিধানে কর্মচারী শব্দ আছে, তাই বলে কর্মকর্তা ডাকলে কি আপনাদের মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে? দেশের মেধাবী জনঅসাধারনদের জন্য এটুকু করতে সমস্যা কেন?
আবার সরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারী শব্দ নিয়েও অনেক দ্বিধা, ২০১৭ তে তো মিডিয়াগুলোতে সরকারী কর্মচারী নাকি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী এটা নিয়েও লেখালেখি হয়েছে। যদিও সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ তে প্রজাতন্ত্রের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিকে সরকারী কর্মচারী বলা হয়েছে, তাই আশা করি এই বিতর্কের অবসান হয়েছে।
দেখুন, সরকারী কর্মকর্তাদের অবহেলা করবেন না। তারা প্রচুর লেখাপড়া করে, রোবটের মতো বই মুখস্থ করে, পেশা জীবনের মায়া ত্যাগ করে বিসিএস ক্যাডার হয় কি জন্যে? তাদের চাহিদা কি খুবই বেশি? তারা কিইবা এমন কিছু চায়?
♦ একটা বিসিএস ক্যাডার পদ, যেখানে জনসাধারন-অধীনস্ত সকলের থেকে স্যার সম্বোধন শুনে নিজেকে ব্রিটিশ আমলের লর্ড বা নাইট ভেবে মহানন্দ অনুভব করা
♦ সরকারী শব্দটা নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়া
♦ পুরুষ হলে কচি ধার্মিক আধুনিক সেক্সি একটা মেয়ে বিয়ে করা
♦ সরকারী গাড়িতে ঘুরে বেড়ানো
♦ টুকটাক স্পিড মানি নেয়া
♦ মাছ চাষ-ধানচাষ শিখতে বিদেশে সফর করা
♦ মাঝে মাঝে নিজের একটু ক্ষমতা-টমতা দেখানো
এগুলো কি খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে? তাহলে বলবো, এই দেশ বিসিএস ক্যাডারদের ডিজার্ভ করে না। বিসিএস ক্যাডারদের উচিৎ ইউরোপ আমেরিকায় গিয়ে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে কাজ করা। আমেরিকা-ইউরোপে গেলে নিশ্চয়ই তারা স্যার ডাকতে আপত্তি করবে না, সিনেমায় দেখেছি, তারা অবলীলায় একে অন্যকে স্যার ডাকে, বাংলাদেশের মতো প্যাচায় না।
বিদ্রঃ সকল সরকারী কর্মচারীদের পক্ষে নয়, শুধু জনঅসাধারন সরকারী কর্মকর্তাদের পক্ষ্যে রচিত ও প্রকাশিত। যাহারা নিজেদের সাধারন প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মচারি ভাবেন এবং বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দাবী করেন না, লেখাটি তাদের প্রতিনিধিত্ব করে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৮:১১