এ অঞ্চলে প্রধান নদী তিস্তা, মহানন্দা, আত্রাই, করতোয়া। এছাড়া টাংগন, পুনর্ভবা, টালমা কুলিক, বুড়ি, পাথররাজ ডাহুক প্রভূতি সহ অনেক নদী আছে। নদীগুলোর অবস্থা কেমন ? এই প্রশ্নটি সামনে নিয়ে ছিল আমার বাংলাদেশের সর্ব উত্তর সীমানা বাংলাবান্ধা ভ্রমণ।
# নিজ চোখে যা দেখলাম :
করতোয়া নদীর বগুড়া অংশ থেকে শুরু করে এই করতোয়ারই বাংলাবান্ধায় অবস্থিত একেবারে উত্তর অংশের অবস্থা দেখে গা শিউরে ওঠে। শুধু তিস্তাকে বাদ দিলে অন্যগুলোকে নদী বলতে কষ্ট হয়। আত্রাই, মহানন্দাকে বলা যায় বর্ষাকালের নদী। কারণ ঐ অঞ্চলের জনসাধরণের কাছে শুনে জানলাম এ নদীগুলোতে শুধু বর্ষাকালে পানি থাকে। আর এখন এই চৈত্র মাসে তাকে বলা যেতে পারে ধুলা-বালির নদী । বালির তো নদী হয় না। এখন অন্তত নদীগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করার সময় এসেছে। যথা- ১. পানির নদী এবং ২. বালির নদী। এভাবেই এখন পাঠ্যবইয়ে বাংলাদেশের নদী সম্পর্কে বাংলাদেশের স্কুল কলেজগুলোতে পাঠ শিক্ষা দেয়ার সময় এসেছে।
তিস্তা নদী ছাড়া কোন নদীতেই পানি নেই। আত্রাইকে বাদ দিলে অন্য কোন নদীতে বালতি ভারানোর মতো পানি নেই। তবে দু’এক জায়গায় ট্যাপ বা টিউব ওয়েলের পানি নিংড়ানোর ড্রেনের মতো পানি যেতে দেখা যাচ্ছে মহানন্দা নদীতে। এ নদী থেকে ছোট বাটি দিয়ে বার বার একটু একটু করে পানি নিয়ে বালতি ভরানো যাবে। কিন্তু একটা বালতি পানিতে ডুবিয়ে ভরানো একেবারে সম্ভব নয়। ছবিতে দেখুন- একটা কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে এসে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীগণ মোরগ লড়াই খেলছেন মহানন্দা নদীর ঠিক মাঝখানে ।
আর যত ছোট নদীর নাম লেখার শুরুতেই উল্লেখ করেছি- তাদের কোনটিতেই কোন পানি নেই। সে নদীগুলোকে দেখে কেউ বিশ্বাস করবেন না যে, এগুলো নদী। বানিয়ে বলছি না। অথবা ইচ্ছে করে পরিকল্পিতভাবে নদীর অবস্থা খারাপ বুঝাতে চাচ্ছি না। নিজ চোখে যা দেখেছি গতকাল (২৪মার্চ-২০১১) তাই শুধু আপনাদের কাছে তুলে ধরছি।
ছোট ছোট প্রত্যেকটি নদীতে বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। তাই নদীগুলো দেখে একদম আবাদী জমি মনে হচ্ছে এবং সেগুলো এখন কৃষকের কাছে সমতল আবাদী জমি বটে। ভালো করে খোঁজ নিলে দেখা যাচ্ছে এসব নদীতে মাঝে মাঝেই বড় বড় সেতু আছে। এ থেকে বুঝা যায় যৌবণ কালে এ নদীতে অনেক পানি ছিল। তখন এ সকল বড় বড় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। আজ সেতুগুলোর কোন কাজ নেই বললেই চলে। এখন সে সকল সেতু অযথায় দাঁড়িয়ে আছে। মানুষ আর যানবাহন সে সেতুগুলোর উপর দিয়ে চলাচল করলেও তার দরকার নেই। ইচ্ছে করলে সেতু উঠিয়ে মোটরযান চলাচল সম্ভব । তাতে ওই নদীর পানি চলাচলের কোন ব্যাঘাত ঘটবে না। কারণ পানিই নেই সেতুর নিচ দিয়ে পানি চলবে কিভাবে। নদী বলতেই যেখানে পানির ছবি ভেসে ওঠার কথা সেখানে দেখা যাচ্ছে সবুজ আর সবুজ। চিত্রে যে সবুজ দৃশ্যপট চোখে পড়ছে তা আসলে নদীর বুক। পক্ষান্তরে হাজার হাজার একর আবদী জমি পতিত পড়ে আছে। চারিদিকে ধূসর বালুময় পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি ফুঠে উঠেছে। দেখলে মনে হবে পৃথিবীর কোথাওই যেন পানি নেই। নদ-নদী বা সাগর-মহাসাগরের কথা যেন রূপকথার গল্প মাত্র।
# একটি ছোট্ট পর্যালোচনা :
আমাদের নদীমাতৃক দেশের নদীগুলোর এ করুন অবস্থার জন্য দায়ী একমাত্র ভারত। ওরা তাদের সীমানার মধ্যে ছোট বড় বিভিন্ন নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে এ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। ভারত যে কতটা আগ্রাসী রাষ্ট তার সাক্ষী এ সব নি®প্রান নদী। ওরা (নদীরা) মিথ্যে বলবে না। নদীগুলোকে জীজ্ঞাসা করে দেখুন-। ওরা বলবে পৃথিবীর মধ্যে আমেরিকার ভারতই হবে একমাত্র জঘন্য আগ্রাসী চেতনার রাষ্ট্র। আমেরিকার সাথে তুলনা করলে কোন কোন দিক থেকে ভারত আমেরিকাকেও ছেড়ে যাবে। আমেরিকা একটা সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র। কিন্তু দেখুন- আমেরিকার প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলোকে এভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে খায় না। বরং প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাথে তাদের অনেক ভালো সম্পর্ক। শুধু আমেরিকা কেন পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যে নদীর পানি বন্ধ করে ভাটির দেশকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দেয়। একমাত্র ভারতই সেই জঘন্য চরিত্রের অভিকারী রাষ্ট্র। তার পরেও আমি বুঝতে পারি না কেন বাংলাদেশের সকরার ভারতকে বন্ধু ভেবে তার বুকে মাথা রাখে। অনেকে হয়তো বলবে বন্ধু না, ওটা বাংলাদেশের দাদা রাষ্ট্র। আচ্ছ হোক দাদাও যদি হয় তবে কি কোন দাদা তার ছোট দিদির সাথে এমন আচরণ করতে পারে ? প্রকৃতির সব সম্পদ নিজে ভোগ করবে আর তার ছোট দিদি ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করতে করতে করছে মরবে। এমন দাদা কি কারো আছে ? নিঃশ্চয় নেই। তাহলে আমি ভারতকে কী বলব ? বন্ধু নাকি দাদা ? .......... নাকি শত্র“ ? আর এই শত্র“ রাষ্ট্রটি যখন জাতীসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ি সদস্য পদ লাভ করবে তখন বাংলাদেশের কী অবস্থা হবে জানেন কি ?