প্রেমে পড়ার নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই। নেই কোন বয়স বা জাত-পাত। কখন কে, কার প্রেমে পড়বেন? তা নিজেও জানে না। প্রেমটা হুট-হাট করেই হয়ে যায়। তবে শত চেষ্টা করেও প্রেম করা যায় না। সুতরাং মনের উপরই শতভাগ নির্ভর প্রেম। আর তা টিকে থাকে বিশ্বাসের উপর।
প্রেমে আমার সমর্থন শতভাগ। প্রেম সার্বজনীন। প্রেমকে আমি সব সময় সমর্থন করি। আর আমিও প্রেমিক। এক হোক আর একাধিক, প্রেম আমি করেছি। তবে প্রসঙ্গটা হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও।
ওই ভিডিওটিতে স্কুলের একটি ছেলে একই স্কুলের একটি মেয়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ ঘটিয়ে প্রকাশ্যে তাকে জড়িয়ে ধরে। এ নিয়ে নাকি স্কুল কর্তৃপক্ষও খেপেছেন। আবার তাদের পক্ষে অনেকে লিখছেন। অনেক পোষ্ট আমার দৃষ্টিতেও পড়েছে। আমি কোন মন্তব্য করিনি। কি মন্তব্য করব? ভেবে পাচ্ছিলাম না।
তবে এটুকু বুঝতে পারলাম, ভাইরাল হওয়া ওই জুটির প্রেমে আমার সমর্থন নেই। তবে তাদের পক্ষে যারা দু'কলম লিখছেন, তারা কি জেনে বুঝে লিখছেন, নাকি অতি উৎসাহী হয়ে লিখছেন?
আমরা হুজুগে বাঙাল। কেউ একবার একটি টপিক পেলে সেটা নিয়ে প্রায় সবাই লিখতে শুরু করি। ভেবে দেখিনা তার গভীরতা। ভেবে দেখিনা এটি ইতিবাচক না নেতিবাচক?
আমরা যারা মুক্তবুদ্ধির চর্চা করি তারা কি করে ওই ভিডিওটির পক্ষে মত প্রকাশ করি! এ নিয়ে আমাকে খুব ভাবাচ্ছে। আমরা সুন্দর, স্বচ্ছ, বৈষম্যহীন একটা সমাজ কামনা করি। আর তাই তো জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সে যুদ্ধে সামিল হয়ে লিখে যাচ্ছি। একবারও কি ভেবে দেখেছেন এটা উচিৎ না অনুচিত?
এখন অনেকেই বলবেন, এ দেশে প্রকাশে অনেক অনৈতিক কাজ হচ্ছে, তা দোষ নয়, প্রকাশে প্রেম করলেই দোষ? না। দোষ নয়। তবে তাদের জন্য জন্য দোষ। কেন না, তারা এখনও স্কুলের গণ্ডি পেরোয়নি। এখনও তারা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি। তাই তাদের এ ঘটনাটিকে সমর্থন করা মানে অন্যান্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীদেরকেও উৎসাহিত করা হবে। আমরা কি সেটা করতে পারি? অথবা স্কুল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদেরকে কি প্রেম উৎসাহী করা আমাদের উচিৎ?
এ বয়সে ছেলে-মেয়েদের জীবন গড়ার বয়স। অথচ তা না করে তারা যদি প্রেমে মনোনিবেশ করে, তাহলে তারা কি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারবে? ছেলে-মেয়েদের নিয়ে প্রতিটি বাবা মায়েরই অনেক আশা থাকে। আকাঙ্ক্ষা থাকে। থাকে ছোট-বড় কিছু স্বপ্ন। কিন্তু এহেন কাণ্ডে যদি তা ভেস্তে যায়, তবে?
ভাবছেন, তাই বলে বাবা-মা যে কাউকে আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিবে আমরা তাকে মেনে নেব? না। তা মেনে নিবেন কি নিবেন না সে আপনর একান্ত। জীবন আপনার, সিদ্ধান্তও আপনার। তবে সিদ্ধান্ত নেয়ার নির্দিষ্ট একটা সময় আছে। তা হলো প্রাপ্তবয়স্ক। আপনি যখন অপ্রাপ্তবয়স্ক, তখন যে কোন সিদ্ধান্ত আপনি নিতে পারেন না। তখন বাবা-মায়ের উপর তা ছেড়ে দিতে হয়। তখন বাবা-মা-ই ঠিক করবে তার ছেলে-মেয়ের ভালো কিসে আর মন্দ কিসে?
তা যা বলছিলাম, স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা এমনিতেই একটু বেশি আবেগী হয়। তারা আবেগটাকে কন্ট্রোল করতে পারে না। আর তখনই ঘটে নানা বিপত্তি।
এক্ষেত্রে আমার দেখা সত্যি একটি ঘটনা বলি, জুনায়েদ (ছদ্ম) ও তৃণ (ছদ্ম) সবেমাত্র নিউ টেনে উঠেছে। একই পাড়াতে থাকে। তাদের দু'জনের প্রেম অষ্টম শ্রেণী থেকে। ব্যাপারটা যখন বুঝতে পারে মেয়ের বাবা, তখন মেয়েকে চোখে চোখেই রাখা শুরু করেন।
একদিন জুনায়েদ তৃণর সাথে দেখা করতে তাদের বাড়ির কাছে আসে। আর তখন মেয়েটির আত্মীয় স্বজন তাদের দুজনকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ছেলেটিকে মারধর করে। এরপর ছেলেটি বাসায় ফিরে এলে ঘটনাটি জানার পর তার পরিবারও তাকে গালাগাল করে। এক পর্যায় রাতে ছেলেটি সবার অলক্ষ্যে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে।
ছেলেটি মারা গেছে শুনে মেয়েটিও নিজেকে শেষ করার জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু তাকে পাহারা দিয়ে রাখা হয়। কিন্তু এতে কোন ফল হয়নি। ছেলেটির কুলখানি (৪দিন)-এর মাথায় মেয়েটিও গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। একবার ভেবে দেখুন তো, এরা যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হত, তাহলে কি এমন সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারত?
সে যা হোক। মত যেহেতু আছে দ্বিমত থাকবেই। তবে ভালো যা, তাতে দ্বিমত পোষণ না করাই ভালো। তবে তাদের প্রেমে আমি অসন্তুষ্ট নই। আমার আপত্তিটা শুধু ওই ঘটনাটির ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দেয়াতে। আর এতে করে কি অন্যান্য স্কুল পড়ুয়াদেরও উৎসাহিত করা হচ্ছে না?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:৪৪