ডেসটিনি কি?
সোজা কথায় ডেসটিনি একটি কোম্পানী যেটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (বহু স্তর বিশিষ্ট বিপণন পদ্ধতি)এর সাহায্যে পণ্যের বিপণন করে।এখন প্রশ্ন হলো মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কি?
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কি (যতবার এই শব্দটি লিখছি, আমার নিজের বিষয় মাল্টিলেভেল মডেলিং চলে আসছে, কি যন্ত্রণা, এখন থেকে শুধু এমএলএম লেখা হবে)?
এমএলএম এমন একটি বিপণন পদ্ধতি যার মাধ্যমে একটি কোম্পানী বহু স্তর বিশিষ্টি বিপণনকারীর মাধ্যমে (বেতন নাই, শুধু নতুন সদস্য নিয়োগ ও পণ্য বিক্রয়ের কমিশন, এই ভিত্তিতে) তাদের পণ্যের বিপণন করে।প্রতিটি স্তরে প্রত্যেক বিপণনকারী (ডিস্ট্রিবিউটর) নির্দিষ্ট সংখ্যক (ধরি, পাঁচ জন) বিক্রয় প্রতিনিধি নিয়োগ করে, আবার প্রত্যেক বিক্রয় প্রতিনিধি নির্দিষ্ট সংখ্যক বিক্রয় প্রতিনিধি নিয়োগ করে (সেই পাঁচজনের প্রত্যেকে পাঁচজন করে)।এই ভাবে একজন বিপণনকারীর অধীনে একটি ডাইনলাইন চ্যানেল তৈরী হয় যা পিরামিড আকৃতির।একজন বিপণন প্রতিনিধির অধীনে ডাউনলাই চ্যানেলটি যত সমৃদ্ধশালী হয় তার কমিশনো ততো বাড়তে থাকে।পণ্যের বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার প্রযোজ্য।উদাহরন দেই: ধরুন আমি একজন এমএলএম কোম্পানীর মালিক (রফিকুল আলম, পিরামিডের উপরের ফারাও সম্রাট)আপনাকে আমার পন্যের বিক্রয় প্রতিনিধি নিয়োজিত করলাম।যেহেতু আপনি আমার পণ্যের বিপণন করবেন আপনি আমাকে পাচঁ হাজার টাকা দিবেন।এখন আপনি আবার আপনার অধীনে পাঁচজন প্রতিনিধি নিয়োগ করবেন এবং প্রত্যেকে আমাকে পাচঁ হাজার টাকা দিবে আমার পন্য বিপননেরে জন্য।ঐ প্রত্যেক পাঁচজনের দেয়া টাকা থেকে আপনি একটা কমিশন পাবেন এবং তারা যদি কোন পন্য বিক্রি করেন তাহলেও আপনি কমিশন পাবেন।তেমনি ভাবে ঐ পাঁচ জনের প্রত্যেকে আবার পাঁচ জন করে রিক্রুট করবেন এবং বরাবরের মতো প্রত্যেকে আমাকে পাচঁ হাজার টাকা করে দেবেন।অর্থ্যাৎ পন্য বিক্রি হোক বা না হোক রফিকুলরা এক একটা ডিষ্ট্রিবিউটর ডাউনলাইন চ্যানেল থেকে মাল্টিমিলিয়িওনিয়ার বনে যাচ্ছে।দেখেন রফিকুলরা পিরামিডের অভ্যন্তরে কেমন করে ফারাও সম্রাট হয়।(ছবি দেখুন, সূত্র:গুগল ইমেজ)।
ডাউনলাইন চ্যানেলের আকৃতিগত কারনে অনেকে এমএ্লএমকে পিরামিড স্কীমও বলে থাকেন।কিন্তু পিরামিড স্কীম ভিন্ন জিনিস।আসেন দেখি পিরামিড স্কীম কি?
পিরামিড স্কীম কি? এমএলএম এর সাথে এর পার্থক্য
পিরামিড স্কীম এমএলএম এর মতোই কিন্তু উদ্দেশ্য ভিন্ন।উপরে লক্ষ্য করে দেখবেন এমএলএম এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কোম্পানী তাদের পন্যের বিপণন করবে একটি ডাউনলাইন চ্যানেল তৈরী করার মধ্য দিয়ে।অর্থ্যাৎ লোকজন একটা নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিয়ে কোম্পানীতে ঢুকছে, বিনিময়ে পণ্য ও সেবা বিপণন করছে ও তাদের অধীনে নতুন বিক্রয় চ্যানেল তৈরী করছে।অন্যদিকে পিরামিড স্কীমও একটি ডাউনলাইন চ্যানেল তৈরী করে একই পদ্ধতিতে।পার্থক্য শুধু কিন্তু পিরামিড স্কীম কোন পন্য বা সেবা অফার করেনা।পিরামিড স্কীম এ শুধুই টাকার একটা উর্ধ্বমূখী প্রবাহ চলে (উপরের উদাহরণ দ্রষ্টব্য)।
পিরামিড স্কীম এর বৈধতা
আমেরিকা, ইউকে, আলবেনিয়া, ফ্রান্স সহ বিশ্বের অনেকগুলি দেশে এমনকি আমাদের পাশ্ববর্তী শ্রীলংকাতেও পিরামিড স্কীম অবৈধ।বাংলাদেশ ব্যাংকও পিরামিড স্কীম অবৈধ করেছে শুনেছি কিন্তু এ সংক্রান্ত কোন সার্কুলার বা প্রমান আমার কাছে নেই।পিরামিড স্কীম কেনো অবৈধ? সহজ উত্তর।আপনার হাতে এক বস্তা টাকা আছে (টাকার প্রবাহ আছে) এবং আপনি আছেন সুন্দর বনের গহীন জঙ্গলে যেখানে কোন খাবার নেই।আপনার খাবার দরকার।ঐ টাকা দিয়ে আপনার কিছু হবে? অর্থ্যাৎ টাকা আছে কিন্তু পণ্য না থাকায় টাকার কোন মূল্য নেই।অর্থ্যাৎ কোন পণ্য বা সেবার উতপাদন ছাড়া টাকার অস্তিত্ব থাকা না থাকা সমান।সেই ভাবে পিরামিড স্কীম কোন পণ্য বা সেবার উৎপাদন ছাড়াই বাজারে টাকার প্রবাহ তৈরী করে মূদ্রাষ্ফীতি ঘটায় এবং এতে মূদ্রা বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে এবং অর্থের মূল্যমান কমে যায়।
এমএলএম এর সমস্যাসমূহ
এখন দেখেন এমএলএম এর সমস্যাটা কোথায়।উপরের পার্থক্য থেকে অন্তত এটাতো পরিষ্কার যে এমএলএম আর পিরামিড স্কীম আসলে একই মূদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ।পার্থক্য শুধু এমএলএম এ পন্য আছে, আর পণ্য ছাড়া এমএলএম হলো পিরামিড স্কীম।এখানে বলে রাখা ভালো যে, অনেক বাজার বিশ্লেষকগণ এমএলএম কে পিরামিড স্কীম এর সাথে ভিন্ন করার তীব্র বিরোধীতা করেন এর ডাউনলাইন চ্যানেল পদ্ধতির কারনে।কারন দেখা যায় যে, পন্য বিক্রয় করার চেয়ে ডাউনলাইন চ্যানেল তৈরীতেই সদস্যদের আগ্রহী দেখা যায় বেশী (ওতে কষ্ট কম, খালি চাপাবাজি চালাইতে হয়)এবং এতে অবিকৃত পণ্যের স্টক থেকেই যায়, নতুন পন্যের উৎপাদন হয়না এবং সেই সুন্দরবনের টাকার বস্তার মতো অবস্থা তৈরী হয়।এবার দেখি এই তথাকথিত ডাউনলোড চ্যানেলটার ভবিষ্যত অবস্থা কি।ধরি, প্রত্যেক সদস্যকে পাঁচ জন করে নিয়োগ করতে হবে এবং পরবর্তীতে তাদের প্রত্যেককে আবার পাঁচ জন করে নিয়োগ করতে হবে এই ক্রমবর্ধমান সমানুপাতিক (এক্সপোনেনশিয়াল ইনক্রিমেন্ট) নিয়োগ বৃদ্ধি চলতে থাকলে খুব দ্রুত একটা পর্যায় আসবে (সেটা বাংলাদেশে ইতি মধ্যেই চলে এসেছে)যখন আর নতুন কোন সদস্য পাওয়া যাবেনা।অর্থ্যাৎ বাজার ভর্তি হয়ে যাবে (বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই ‘গেছে’) বিক্রেতায় (মার্কেট ওভার স্যাচুরেটেড, ছবি দেখুন, সূত্র: গুগল ইমেজ)।
তার মানে, আবুল ভাইরা এখন এমন এক অসম বাজারে অবস্থান করছেন যে বাজারের কোন অস্তিত্ব নেই (বাজারের সংজ্ঞা অনুযায়ী ক্রেতা ও বিক্রেতার উপস্থিতি নেই), শুধুই বিক্রেতারা সেখানে হা পিত্যেস করছেন ক্রেতার আশায় (ভাই, বোন, বন্ধু যেই হোক বাগে আইন্যা একটা ডেসটিনির ফরম ফিলাইতে পারলেই হয়!!!রিলেশনশীপ মার্কেটিং, এমএলএম এর আরেক নিক)।সুতরাং যেখানে পন্য বিক্রি হবেনা (কারন ক্রেতা নেই)সেখানে কোম্পানী কি করে চলে?ঐ যে সদস্য রিক্রুটমেন্ট, ঐটাই ব্যবসা যে, ব্যবসা একটা দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজানোর জন্য যথেষ্ট।এই জন্যই অনেকে এমএলএম আর পিরামিড স্কীম এর কোন পার্থক্য করেননা।আর ফারাও সম্রাট রফিক সাহেবরা বাজারের অবস্থা ভালো মতো বুঝে গেছেন।তারা বুঝছেন, শহরের ক্রীম খাওয়া শেষ এবং এজন্য বৃক্ষ রোপনের নামে তারা গ্রামের দিকে ছুটছেন যদি ভবিষ্যতের আশঙ্কায় নিমজ্জিত সহজ-সরল মানুষগুলোকে নিয়ে একটু ব্যবসা করা যায়।আবুল ভাই আমারে ক্ষমাইয়েন, বাজারে যে হতাশার জন্ম আপনারা দিছেন ২০১২ সালে যদি পাবলিক দৌড়ানি দেয়, লুঙ্গি খুইল্যা দৌড়াইতে হইবো।
এমএলএম এর আরও সমস্যা আছে যেমন পণ্যকে চাপাবাজির মাধ্যমে এমনভাবে উপস্থাপন করা যেনো এই পণ্যটাই সেরা (যদিও তা না), তবে এটা ডেসটিনির ক্ষেত্রে প্রোযজ্য না কারন ডেসটিনি পণ্য বিক্রয় করতে না পারলেই খুশী। আর মার্কেট পেনেট্রেশন, ব্রেকইভেন ইত্যাদি সংক্রান্ত ঝামেলাও এমএলএম এ আছে যেগুলি বিস্তারিত করলামনা।
ডেসটিনি এমএলএম না কি পিরামিড স্কীম? ডেসটিনির পণ্য ও রফিকুল গঙদের লাভের গুড়ের ধান্দাবাজি
আগেই বলেছি অনেক বাজার বিশ্লেষকগণ মনে করেন এমএলএম এবং পিরামিড স্কীম অভিন্ন।এখন প্রশ্ন ডেসটিনি এমএলএম না কি পিরামিড স্কীম? এইখানে আছে একটা সূক্ষ শুভংকরের ফাকিঁ।যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা আছে, তাই পণ্যের আড়ালে ডেসটিনি একটা পিরামিড স্কীম।পণ্যটা একটা আই ওয়াশ।একটু লক্ষ করেন ডেসটিনির পন্য কি কি? একটা সত্যিকারের এমএলএম কোম্পানী সেই পণ্যটাই বিপণণ করতে চাইবে যার বাজারে ব্যাপক চাহিদা আছে।এবং অবিক্রিত পণ্যের ফেরত প্রদান মূলক দাম পরিশোধের নিয়ম আছে (জানিনা ডেসটিনি এটা করে কি না)।কিন্তু ডেসটিনি কি করে? দেখেনে ওদের পন্যের উদাহরন (সূত্র: ডেসটিনি ওয়েব সাইট)।
বাংলাদেশের কয়টা মানুষ চুল ওঠা, চায়ের স্যাকারিন বা গোলাপের পাপড়ি খাওয়ার সমস্যা নিয়া চিন্তিত?আর দাম দেখছেন? গোলাপের পাতার দাম বলে ৬০০ টাকা !!! ডেসটিনি প্রথম লটে যে পণ্য কিনেছিলো আমার ধারণা তার পাঁচ শতাংশও বিক্রি হয়নাই, আর ওদের পণ্য যেহেতু পচনশীল না, তাই তার মেয়াদকাল অনেক।অর্থ্যাৎ পণ্যের ক্রয়ে তাদের কোন বিনিয়োগটা এককালীন।পরবর্তীতে সব টাকা আই ওয়াশ হচ্ছে নাম কো-অস্তে প্রজেক্টের নামে।আবুল ভাই বুকে হাত দিয়ে বলেনতো এই পণ্যগুলোর কয়টা আপনেরা বিক্রি করতে পারেন? আর গ্রামে যদি এগুলি লইয়া যান তো কিল একটাও মাটিত পড়তোনা কইলাম। রফিকুল সাহেবকে কেউ দেখেছেন ইদানীং? পা মাটিতে পড়েতো ওনার না কি?
(আবুল ভাই, আপনের কাছে প্রতিজ্ঞা করছিলাম পোষ্ট দিমু, দিলাম, এহন কাম আছে, গেলাম। অত:পর পাঞ্জাবীর হাতা গুটায়া বইতে চাই, আপনের কি কওনের আছে শুনতাম চাই।)