somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টেষ্ট টিউব বেবি কি ? কারা টেষ্ট টিউব বেবি নিতে পারবে ? ( টেষ্ট টিউব বেবির আদ্যপান্ত )

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
টেস্ট টিউব বেবি কি ?



এই আইভিএফ (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) বা টেস্ট টিউব পদ্ধতি হচ্ছে মানবদেহের বাইরে গর্ভ ধারণ করার পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে অনেক নিঃসন্তান নারী সন্তান লাভ করেছেন।

টেস্টটিউব বেবি হচ্ছে বন্ধ্যত্বের চিকিত্সায় সর্বজন স্বীকৃত আধুনিক একটি পদ্ধতি। টেস্টটিউব বেবি নিয়ে আমাদের অনেকের মনেই রয়েছে নানা রকম কুসংস্কার ও ভুল ধারণা। ‘টেস্টটিউব বেবি’, এই শব্দগুলো থেকেই অনেকের মনে ভুল ধারণার জন্ম হয়েছে। এ কারণে অনেকেই মনে করেন টেস্টটিউব বেবির জন্ম হয় টেস্টটিউবের মধ্যে। আসলে তা নয় কারন একটা টেস্টটিউব বেবির জন্ম টেস্টটিউবের ভিতর হয় না। তারপরও এর নাম টেস্টটিউব কেন?

টেস্টটিউব বেবি নামকরণের ইতিহাস ।

টেস্টটিউব বেবির জন্য সংগ্রহ করা ডিম্বাণু আর শুক্রাণুর নিষেক ঘটে ল্যাবরেটরিতে। আর ল্যাবরেটরি মানেই একগাদা টেস্টটিউবে ভর্তি। লাতিন আমেরিকার গবেষকরা তাই কাচের টিউবগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে এ পদ্ধতির নাম দিলেন ‘ইন ভিট্রো’ (লাতিন ভাষায় ভিট্রো মানে টেস্টটিউব)। সে থেকে টেস্টটিউব বেবির জন্মের প্রক্রিয়ার নাম হয়ে গেলো ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন এবং সংক্ষেপে যাকে বলে আইভিএফ।

ধর্মীয় বাধা আছে কিনা।

কেউ কেউ মনে করে, টেস্টটিউব বেবি কৃত্রিম উপায়ে জন্ম দেওয়া কোনো শিশু। কাজেই কৃত্রিম উপায়ে এভাবে সন্তান লাভে ধর্মীয় বাধা থাকতে পারে। কিন্তু টেস্টটিউব বেবির বিষয়টি মোটেই তা নয়। বিভিন্ন রোগের যেমন বিভিন্ন চিকিত্সা পদ্ধতি রয়েছে, তেমনি এটিও একটি বন্ধ্যাত্ব রোগের আধুনিক চিকিত্সা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিরও বিভিন্ন কৌশল রয়েছে।

বন্ধ্যাত্ব রোগের অনেক চিকিৎসার মধ্যে টেস্টটিউব বেবিও একটি। এই চিকিৎসার দ্বারা অনেক বন্ধ্যা নারী ও পুরুষ সন্তানের মাতা পিতা হতে পারেন।

একজন স্বাভাবিক গর্ভধারিণী নারীর জরায়ুতে বেড়ে ওঠা শিশুর জীবন প্রণালীর সঙ্গে টেস্টটিউব বেবির জীবন প্রণালীর কোনো পার্থক্য নেই। তা ছাড়া টেস্টটিউব বেবি জন্মদানের প্রক্রিয়াটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। নির্দিষ্ট কিছু কারণে বন্ধ্যত্ব হলে সেক্ষেত্রে টেস্টটিউব বেবি পদ্ধতির সাহায্য নিতে হয়। নিঃসন্তান দম্পতি এই চিকিৎসা গ্রহণ করেন ।

প্রথম টেস্টটিউব বেবি ।



পৃথিবীর প্রথম টেস্টটিউব বেবির নাম লুইস ব্রাউন । সে একজন মেয়ে । ১৯৭৮ সালে ব্রিটেনে লুইসের জন্ম ছিল বিংশ শতাব্দীর মেডিকেল ইতিহাসে উলেখযোগ্য এক মাইলফলক ৷



বাংলাদেশে স্কয়ার হাসপাতালে প্রথম টেস্টটিউব বেবির জন্ম হয় ২০০১ সালে।

লুইসের বয়স এখন ৩৬ বছর বয়স । লুইস ব্রাউন এখন এক সন্তানের জননী৷ তার ছেলের বয়স ৮ বছর ৷ নাম ক্যামেরোন৷ তার সন্তান অবশ্য তার মতো টেস্টটিউব বেবি না৷




লুইসের আরেকটি বোন আছে, সেও টেস্টটিউব বেবি৷

টেস্ট টিউব বেবি'র জনক ।

লুইসের জন্মের সঙ্গে সংশিষ্ট দুই ডাক্তার প্যাট্রিক স্টেপটো এবং প্রফেসর এডওয়াডস৷ রবার্ট এডওয়ার্ড ।



প্রফেসর এডওয়াডস৷ রবার্ট এডওয়ার্ড ২০১০ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরুস্কার অর্জন করেন. তিনি বিজ্ঞান রয়াল সোসাইটি একজন গবেষণা ফেলো। টেস্ট টিউব বেবি'র জনক হিসাবে খ্যাত নোবেল পুরস্কারজয়ী ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রবার্ট এডওয়ার্ডস দীর্ঘদিন অসুখে ভুগে বুধবার ১০ এপ্রিল, ২০১৩ ইং ৮৭ বছর বয়সে ঘুমন্ত অবস্থায় নিজ বাস ভবনে মারা যান। এডওয়ার্ডর্স মারা যান বলে জানিয়েছে । স্টেপটো ১৯৮৮ তে মারা যান ৷ এডওয়ার্ড বলেন, সেসময়ে অনেকেই ব্যাপারটি বিশ্বাস করতে পারেননি৷

বন্ধ্যাত্ব কি ?

একজন স্বাভাবিক শিশুর জন্ম প্রক্রিয়ায় সাধারণত ৮০ শতাংশ দম্পতির চেষ্টার প্রথম বছরের মধ্যেই সন্তান হয়ে থাকে। ১০ শতাংশ দম্পতির দ্বিতীয় বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। বাকি ১০ শতাংশের কোনো না কোনো কারণে সন্তান ধারণে অসুবিধা হয়ে থাকে এবং তাদের জন্যই টেস্ট টিউব পদ্ধতি চিকিৎসা দরকার। সন্তান না হওয়ার পেছনে স্বামী-স্ত্রী দুজনের যে-কোন একজনের সমস্যা থাকতে পারে। আবার দুই জনের সমস্যার কারনে হতে পারে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে শুধু স্বামী দায়ী, ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে শুধু স্ত্রী দায়ী এবং ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ই দায়ী।

কোনো দম্পতি এক বছর জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ছাড়া একই সাথে বসবাস ও মিলনের পরও যদি সন্তান ধারণ না করে থাকেন, তাকে ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যাত্ব বলে।

বন্ধ্যাত্ব যে সব কারনে হতে পারে।

/ডিম্বানুর অভাব।

/অন্য দিকে ডিম্বানুর অভাবই নারীর বন্ধ্যাত্বের একমাত্র কারণ নয়। জরায়ু মুখে যে সারভাইকেল ফ্লুইড থাকে তার এসিডের মাত্রা বা পি এইচ লেভেল ও একটা বিষয়। এর কারনে নিকেষে সমস্যা হতে পারে।

// অনেকের ডিম্বানুর ওয়ালেও সমস্যা থাকে যার ফলে ডিম্বানুতে শুক্রানু প্রবেশ করতে পারেনা।

// ডিম্বনালি বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা কার্যক্রম না থাকলে।

এন্ডোমেট্রিওসিস নামক ডিজিজের ফলে।

পুরুষদের মধ্যে মুখ্য কারণ হলো ।

// একজন পুরুষের শুক্রানুর সংখ্যা প্রতি মিলি বীর্য তে একটি নিদিৃষ্ট পরিমানের নিচে চলে আসে তখন।

// শুক্রানুর চলন শক্তি কমে গেলেও তা নিষেকে অক্ষম হতে পারে। এই অবস্থাকে বলে এস্থেওনোস্পার্মিয়া।

// বীর্যতে নাইট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে গেলে ও বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।এই অবস্থাকে বলে এজোস্পার্মিয়া।

// শুক্রাণুর পরিমাণ কম থাকলে।

// শুক্রাণুর আকৃতি স্বাভাবিক না থাকলে।

// শুক্রাণুর চলাচল স্বাভাবিক না থাকলে।

// শুক্রাণু অনুপস্থিত থাকলে।

// আবার জ্ঞাত কোন কারণ ছাড়াই নিষেকে সমস্যা হতে পারে যাকে বলে ইডিওপ্যাথিক।

তবে টেস্ট টিউব পদ্ধতি বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার প্রথম বা একমাত্র পদ্ধতি নয়। এই পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেওয়ার চেষ্টা তখনই করা হয়, যখন বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার অন্য সব পদ্ধতি ব্যর্থ হয়।

এ ছাড়া স্বামি-স্ত্রীর সম্মিলিত সমস্যার কারণে হতে পারে এবং কখনো কখনো উভয়ের কোনো কারণ ছাড়াই সন্তান না হতে পারে। যখন কোনো নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে না পাওয়া যায়, তখন তাকে ব্যাখ্যাহীন বন্ধ্যাত্ব বলে।

টেস্ট টিউব চিকিৎসা পদ্ধতি ।

বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় টেস্ট টিউব পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু হয় ফলিকুলার পরিপক্বতার এবং ডিম্বাশয়ে ডিম্বস্থলন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। গর্ভধারণের জন্য মেডিকেল টেস্ট করার জন্য স্ত্রীকে কমপক্ষে দুসপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়। রজঃস্রাবের ৩ দিন পর থেকেই শুরু হয় টেস্টটিউব চিকিৎসার প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট। এ সময় জরায়ুর আবরণকে ঘন রাখার প্রয়োজন হলে স্ত্রীকে বিশেষ হরমোন গ্রহণ করতে হয় । টেস্টটিউব প্রক্রিয়াকে সফল করতে উন্নত বিশ্বের অনেক ক্লিনিকে এখন স্বাভাবিক চিকিৎসার সঙ্গে আকুপাংচার ও হিপনোথেরাপি প্রয়োগ করা হচ্ছে। অন্যসব ঠিক থাকলে এ দুটো চিকিৎসা জাইগোট গ্রহীতার গর্ভধারণের সম্ভাবনা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

ডিম্বাশয়ে একাধিক রজঃস্রাবের গ্রন্থী তৈরি হলেই ডিম্বাণু পৃথক করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বের করতে ব্যবহার করা হয় বিশেষ আলট্রাসাউন্ড সূঁচের সাহায্য । ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে রজঃস্রাবী গ্রন্থি থেকেই ল্যাবরেটরিতে ডিম্বাণু পৃথক করা হয়। এই পৃথকীকরণে সময় লাগে মাত্র ২০ মিনিট। তারপর সেটিকে প্রক্রিয়াজাতকরণের পর ল্যাবে সংরক্ষণ করা হয়।




একই সময়ে স্বামীর অসংখ্য শুক্রাণু সংগ্রহ করে তা থেকে ল্যাবে বিশেষ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বেছে নেওয়া হয় সবচেয়ে ভালো জাতের একঝাঁক শুক্রাণু। তারপর অসংখ্য সজীব ও অতি ক্রিয়াশীল শুক্রাণুকে নিষিক্তকরণের লক্ষ্যে ছেড়ে দেওয়া হয় ডিম্বাণুর পেট্রিডিশে।




সংগৃহীত শুক্রাণুগুলোর সঙ্গে সেই ডিম্বাণুকে একসঙ্গে রাখা হয়। এ মিশ্রণে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর অনুপাত থাকে ৭৫০০০:১। ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর এই পেট্রিডিশটিকে সংরক্ষণ করা হয় মাতৃগর্ভের অনুরূপ পরিবেশের একটি ইনকিউবিটরে। ইনকিউবিটরের মধ্যে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের পরই বোঝা যায় নিষিক্তকরণের পর ভ্রূণ সৃষ্টির সফলতা সম্পর্কে।

আলাদা আলাদা মিশ্রণে থাকতে পারে একাধিক ডিম্বাণু।




সেক্ষেত্রে আনুপাতিক হারে বাড়বে শুক্রাণুর সংখ্যা। নিশ্চিতভাবে নিষেক ঘটাতে চাইলে ইনট্রাসিটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন পদ্ধতিতে কেবল একটি শুক্রাণুকে সরাসরি ডিম্বাণুর ভেতর প্রতিস্থাপন করা হয়।




ঠিক তারপরই ডিম্বাণুটি একটি বিশেষ গ্রোথ মিডিয়ামে রাখা হয়। যাতে কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে পূর্ণাঙ্গ জাইগোট তথা অপরিপক্ব ভ্রূণ তৈরি হতে পারে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিষিক্ত ডিম্বাণুটি ৬-৮টি কোষের একটি গুচ্ছে পরিণত হয়। এ অবস্থাতেই কোষগুলো নারীর জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অনেকগুলো ক্লিনিক নিষিক্তকরণের পরও পূর্ণাঙ্গ জাইগোট (ব্লাস্টোসিস্ট ধাপে) তৈরি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় । তবে সাধারণত ৬-৮টি কোষের ভ্রূণ তৈরি হলেই তা জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের যোগ্য হয়। উল্লেখ্য, গর্ভধারণ নিশ্চিত করতে প্রায়ই একাধিক নিষিক্ত ডিম্বাণু প্রতিস্থাপন করা হয়।

স্ত্রীর পরিণত ডিম্বাণু অত্যন্ত সন্তর্পণে বের করে আনা ভ্রূণ সৃষ্টির পর সেটিকে একটি বিশেষ নলের মাধ্যমে জরায়ুতে সংস্থাপনের জন্য পাঠানো হয়। এখান থেকে সর্বোচ্চ তিনটি ভ্রূণকে নারীর গর্ভাশয়ে স্থানান্তর করা হয়। জরায়ুতে ভ্রূণ সংস্থাপন সম্পন্ন হওয়ার পরই তা চূড়ান্তভাবে বিকাশ লাভের জন্য এগিয়ে যেতে থাকে । যার ফলে জন্ম নেয় টেস্টটিউব বেবি। এই টেস্টটিউব বেবি মাতৃগর্ভেই বেড়ে ওঠে এবং সেখান থেকেই জন্ম নেয়। কোনো টেস্টটিউবের নলে এই শিশু বেড়ে ওঠে না। স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুর সঙ্গে টেস্টটিউব বেবির জন্মদানের প্রক্রিয়ায় পার্থক্য এটুকুই যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জন্ম নেওয়া শিশুর পুরোটাই সম্পন্ন হয় মায়ের ডিম্বনালি এবং জরায়ুতে। আর টেস্টটিউব বেবির ক্ষেত্রে স্ত্রীর ডিম্বাণু এবং স্বামীর শুক্রাণু সংগ্রহ করে সেটিকে একটি বিশেষ পাত্রে রেখে বিশেষ যন্ত্রের মধ্যে সংরক্ষণ করা হয় নিষিক্তকরণের জন্য। নিষিক্তকরণের পর সৃষ্ট ভ্রূণকে স্ত্রীর জরায়ুতে সংস্থাপন করা হয়। সূচনার এই সময়টুকু ছাড়া বাকি সময়টাতে শিশু একদম স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার মতোই মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠে। ইকসি টেস্টটিউব পদ্ধতির আর একটি ভাগ। এ পদ্ধতিতে ডিম্বাণু সংগ্রহের পর একটি ডিম্বাণুর ভেতরে একটি শুক্রাণুকে ইনজেক্ট করে দেয়া হয়।

টেস্টটিউব চিকিৎসার সফলতা কতটুকু ?

এতোকিছুর পরও টেস্টটিউব চিকিৎসার এ সফল গর্ভধারণের সম্ভাবনা মাত্র ২০-৩০%। নির্দিষ্ট কয়েকটি মার্কিন ক্লিনিক ৫০% পর্যন্ত নিশ্চয়তা দিতে পারে। তবে এ সফলতার সম্ভাবনা স্ত্রীর বয়স, শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর গুণগত মান, প্রজননে অক্ষমতার মেয়াদ, জরায়ুর স্বাস্থ্য ইত্যাদির ওপরও অনেকাংশে নির্ভরশীল। অন্যদিকে সফলতার জন্য জরায়ুতে একাধিক ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা হলে তাতে একাধিক ভ্রূণ বেড়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে। বাড়তে পারে জটিলতা।

যে সব কারণে টেস্ট টিউব পদ্ধতি ব্যর্থ হয়।

১. ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণুর পরিপক্বতা লাভে যে সময়ের প্রয়োজন সে সম্পর্কে ভুল অনুমান।

২. ডিম্বাণু পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগেই পৃথককরণ।

৩. পৃথকীকরণের সময় ডিম্বাণু নষ্ট হলে।

৪. নিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে ভ্রূণের বিকাশ না ঘটলে।

৫. ভ্রূণ তৈরি হলেও তার বিকাশ ঠিক মতো না ঘটলে।

৬. ত্রুটিপূর্ণ প্রতিস্থাপন।

৭. ব্যবহৃত যন্ত্র ও প্রযুক্তির ত্রুটির কারণে টেস্ট টিউব পদ্ধতি ব্যর্থ হয়।

টেস্ট টিউব পদ্ধতির যে সব সমস্যা ।

টেস্ট টিউব পদ্ধতির সবচে বড় জটিলতা হলো একাধিক ভ্রূণ তৈরি। একাধিক ডিম্বাণু পৃথক করে তা প্রতিস্থাপন এ পদ্ধতির একটি স্বাভাবিক বিষয়। কেননা, ব্যায় বহুল পদ্ধতি হওয়ায় একটি মাত্র নিষিক্ত ডিম্বাণুর ওপর ডাক্তাররা আস্থা রাখতে পারে না। একাধিক ভ্রূণ বেড়ে উঠলে নারীর প্রজননতন্ত্রে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তবে জন্মের পর শিশুর জন্মগত ত্রুটির সঙ্গে টেস্টটিউব চিকিৎসার সম্পর্ক নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। তবে শিশুর মধ্যে ক্রোমোজম ও জিনগত ত্রুটির নেপথ্যে টেস্টটিউব চিকিৎসা পদ্ধতির প্রত্যক্ষ সম্পর্ক এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

যদি একাধিক নিষিক্ত ডিম্বাণু থাকে, তবে দম্পতি চাইলে একটি কাজে লাগিয়ে বাকিগুলো ফ্রিজ করে রাখতে পারবে। নিষিক্ত ডিম্বাণুগুলো তখন তরল নাইট্রোজেনে রাখা হবে। সেগুলো থেকেও ভ্রূণের বিকাশ সম্ভব। পরবর্তীতে বাড়তি করে আর সংগ্রহ ও নিষেক ঘটাতে হবে না। যুক্তরাষ্ট্রে এ মুহূর্তে প্রায় ১৫ লাখ হিমায়িত জাইগোট আছে। কোনো কারণে স্ত্রীর ডিম্বাণু তৈরির ক্ষমতা নষ্ট হলে বংশবৃদ্ধি হিমায়িত জাইগোটের বিকল্প নেই।

যে সব কারণে টেস্টটিউব চিকিৎসা প্রসঙ্গে নৈতিকতার প্রশ্ন ওঠে।

১. গর্ভধারণের প্রাকৃতিক নিয়মে হস্তক্ষেপ।

২. গবেষণাগারে মানব জীবনের বিকাশ।

৩. প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জাইগোট তৈরি করা। যার প্রতিটিতেই প্রাণ বিকাশের সম্ভাবনা থাকে।

৪. অপ্রয়োজনীয় অপরিপক্ব ভ্রূণ নষ্ট করা।

৫. অপ্রাকৃতিক পরিবেশে ভ্রূণ সংরক্ষণ।

৬. আইভিএফ-এ ব্যবহৃত সকল প্রযুক্তি এখনো শতভাগ পরীক্ষিত নয়।

৭. অনেকের পক্ষে এর ব্যয়ভার বহন অসম্ভব। তাই শারীরিক অক্ষমতাকে মেনে নিলেও অনেকে আর্থিক অক্ষমতাকে মানসিকভাবে মেনে নিতে পারে না।

৮. ভ্রূনের সঙ্গে অপ্রাকৃতিক রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ ঘটানো।

৯. গবেষণার উদ্দেশে ভ্রূণের অপব্যবহারের শঙ্কা।

১০. ভ্রূনের জিনগত পরিবর্তনের শঙ্কা।

১১. ভ্রূণকে পণ্যের কাতারে ফেলে দেয়ার শঙ্কা।

১২. সর্বোপরি প্রজননে অক্ষমতা এক ধরনের রোগ। তবে টেস্টটিউব চিকিৎসা সেই রোগের চিকিৎসার পথ না দেখিয়ে ব্যয়বহুল বিকল্প পথই বাতলে দিচ্ছে।

এছাড়া, টেস্টটিউব চিকিৎসা পদ্ধতিতে স্বাভাবিক বংশানুক্রমিক ধারাবাহিকতাও কিছু ক্ষেত্রে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

যে সমস্যগুলো থাকলে টেষ্ট টিউব বেবী নেওয়া যায় না ।

১. স্বামী/স্ত্রীর স্পার্ম/ওভাম যদি ফার্টিলাইজেশনে অক্ষম হয়

২. জরায়ুতে ন্যাচারাল ফার্টিলাইজেশন হলেও হরমোনাল সমস্যার কারনে যাদের আর্লি এবর্শাণ হয়।

৩. ওভারিতে ম্যাটিউর ওভাম সৃষ্টি না হলে অর্থাৎ ওভারী পূর্ন ফাংশানিং না থাকলে।

এ ছাড়াও আরো কিছু সমস্যায় টেস্ট টিউব বেবীর চিন্তা করা যায় না। তবে টেস্ট টিউব বেবীর চিন্তা করার আগে উপরের ৩টা ব্যাপার অবশ্যই ক্লিয়ার হতে হবে। শুধুমাত্র ঐসব কাপল যাদের ন্যাচারাল ওভুল্যাশন (স্ত্রীর) ও ন্যাচারাল ফার্টিলাইজেশন হয়না তারাই টেষ্টটিউব বেবীর চিন্তা করতে পারবে, অন্যরা নয়।

আর একটি ব্যাপার, টেষ্টটিউব বেবীর ক্ষেত্রে কখনোই পছন্দমতো ছেলে বা মেয়ে সন্তান নেওয়া সম্ভব নয়।

শুক্রাণু, ডিম্বাণু ও একটি জরায়ু হলেই এক্ষেত্রে গর্ভধারণ সম্ভব। আজকাল অনেক নারী নিজেদের ডিম্বাণু বিক্রি কিংবা দান করছেন। আবার জরায়ুতে সমস্যা থাকায় স্বামী-স্ত্রী নিজেদের শুক্রাণু-ডিম্বাণুতে তৈরি ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করছেন অন্য কারো জরায়ুতে। তবে এই সমস্যা আমদের দেশে হয় না ।

তথ্য সূত্রঃ বিবিসি / নিউজ ইভেন্ট ২৪ ডট কম । / উইকিপিডিয়া /http://www.dailymail.co.uk/health /http://www.tldm.org/news/testtubebaby.htm /http://www.bdopenscience.org/
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×