পাঁচ আর দুই বছর বয়সী দুটি সন্তান রেখে রাহেলা যখন না ফেরার দেশে চলে গেল। তখন মাহমুদ ছোট ছোট দুইটি বাচ্চা নিয়ে, ঝামেলার অথৈ সাগরে পড়ে গেল । রাহেলা মারা যাওয়ার পর মাহমুদের বড় বোন পনের দিনের মত ছিল । এই কয়টা দিন স্ত্রী হারানোর শোকে স্তব্দ হয়ে যাওয়া মাহমুদের বাচ্চা দুইটিকে তার বড় বোনই সামলে রেখেছিল ।
বড় বোনেরও সংসার আছে । ঘরে কলেজ পড়ুয়া বিবাহ যোগ্য একটি মেয়ে ও স্কুল পড়ুয়া দুই ছেলে আর ব্যাস্ত ব্যাবসায়ী স্বামি । এরা বড় বোনকে ছাড়া এক মূহুর্ত ও চলতে পারেনা । শুধু ছোট ভাই মাহমুদের ভেংগে পড়া দেখে এই পনর দিন মুখ বুজে ছিল । কিন্তু এখন আর পারছে না । তার অনুপস্থিতে তার নিজের সংসার তছনছ হয়ে যাছ্ছে ।
মাহমুদ দুপুরের দিকে বড় বোনকে গাড়িতে তুলে যখন বাসায় ফিরল, তখন রাহেলা বিহীন বাড়িটাতে কিছুতেই প্রবেশ করতে ইছ্ছা করছিল না । ঘরে বৃদ্ধা মা আর সন্তান দুটি কি করছে এই ভেবে তাড়াতাড়ি ফিরতে হল ।
এরই মধ্যে বড় বোন যাওয়ার সময় বারবার করে বলে গেছেঃ যা হওয়ার তাত হয়ে গেছে । যে চলে গেছে সেত আর ফিরবে না । অবুঝ বাচ্চা দুটির জন্য হলেও মাহমুদ যেন তাড়াতাড়ি বিয়ে করে । কারন সত্তর বছর বৃদ্ধ মায়ের পক্ষে বাচ্চাদের সামলানো সম্ভব না । তার নিজের বিশাল সংসার ফেলেও তার পক্ষেও ঘন ঘন আসা সম্ভব না ।
বড় বোন যখন এইসব বলছিল তখন মাহমুদ তার কথা গুলো এই কান দিয়ে ঢুকিয়ে ঐ কান দিয়ে বের করে দিল। মনে মনে বলল রাহেলার জায়গায় আমার আর কাউকে আনা সম্ভব না।
বড় বোন যাওয়ার কিছুদিন পরেই মাহমুদ টের পেল রাহেলার কঠিন অভাব । বাচ্চা দুটি প্রায় সময় মা মা বলে কান্না করে । বাচ্চাদের দাদী আর ওদের সামলাতে পারেনা। তখন মাহমুদকেই এসে ওদের সামলাতে হয়।
গন্জে মাহমুদের বড় কাপড়ের দোকান । সেখানে তার তিনজন কর্মচারী খাটে । ক্যাশে সব সময় থাকতে হয় । কারন কাষ্টমার স্লিপ , কাপড়ের হিসাব , টাকা বুঝে নেওয়া , ক্যাশ টাকা না হলে ব্যাংকের চেক বুঝে নেওয়া এই সব মাহমুদকে একাই করতে হয়। দোকানের কর্মচারীদের উপর ভরসা রাখা যায় না। ভরসা রাখতে যেয়ে আগে একজন কর্মচারী ব্যাবসায় বেশ কিছু টাকা মেরে পালিয়েছে।
রাহেলা মারা যাওয়ার এক মাসের ভিতর মাহমুদ বুঝতে পারল তার ইছ্ছা হোক আর না হোক তাকে আবার বিয়ে করতেই হবে। কারন বাচ্চাদের কারনে গত সপ্তায় চারদিন ঠিক মত দোকানদারী করতে পারে নাই। এই ভাবে চললে ব্যাবসায় লাল বাতি জ্বলতে বেশি দিন লাগবে না ।
এবার আর দেরী না করে বড় বোনকে বলল মেয়ে দেখার জন্য । রাহেলাকেও এনেছিল ওর বড় বোন। মাহমুদের অভিভাবক এই বড় বোনই, তাই তার উপরই মাহমুদ সব দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে থাকে ।
কিন্তু এই বার বড় বোন তার জন্য কোন মেয়েই যোগাড় করতে পারলনা । কেটে গেল প্রায় ছয়-সাত মাস।
মা হারা বাচ্চা দুটি দিনকে দিন যেন আরও বেশি অধৈর্য হয়ে যাছ্ছে । দোকানে যাওয়াই যাছ্ছে না । ব্যাবসার অবস্থা খুব খারাপ । ব্যাবসা কমে যাওয়ায় দোকানের একজন কর্মচারী বিদায় করে দিতে হয়েছে। এখন সপ্তাহের পুরাটা সময় প্রায় বাড়িতেই থাকতে হয় । মা না থাকাতে ইদানিং বাচ্চাদের অসুখ-বিসুখও বেশি হছ্ছে । বাচ্চাদের দোকানে নিয়ে গেলেও ঝামেলা । কখন কোথায় চলে যায় ব্যাস্ততার কারনে খেয়ালও থাকে না। কয়েকবার কাউকে না বলে বড় রাস্তায় চলে গিয়েছিল । এই ভয়ে এখন আর দোকানেও নেয় না। এতদিনেও বড় বোন যখন কিছুই করতে পারল না, তখন একদিন সে নিজেই ঘটক লাগাল।
ঘটকও অনেক মেয়ের খবর আনল । যার বেশির ভাগই অল্প বয়সী অবিবাহিত মেয়ে । মাহমুদের বয়স চল্লিশের ঘর পেরিয়েছে । ঘটকরা খবর আনে পনর বছর আঠার বছর বয়সী মেয়ের। যা শুনা মাত্রই মাহমুদ বাতিল করে দেয় । ঘটক যখন কম বয়সী মেয়ের খবর আনলেই মাহমুদ বাতিল করে দেয় তখন একদিন ঘটক এক মেয়ের খবর আনল বয়স পঁচিশ । অবিবাহিত। বাবা নাই । এতিম । বিধবা মায়ের একমাত্র মেয়ে । খুব ভাল বংশ । মেয়ে পড়া লেখা করেছে । এস এস সি পাশ । মাহমুদ শুনে যখন একটু ইতস্তত করছিল ।
তখন ঘটক বললঃ ভাই এই পইযন্ত মেলা মাইয়ার খবর আনলাম । বয়স কম বইলা আপনি সব বাদ দিয়া দিলেন । এইডাত একটু বেশি বয়স । গ্রামে এর থিক্কা বেশি বয়স পাইবেন না । বিধবা মাইয়াত পাইবেনই না । কারন যেই সব মাইয়ারা বিধবা হয় হেরা বাচ্চাদের দিকে তাকাইয়া আর বিয়া করে না । আমাগো দেশের মায়েরা মমতা অলা । তারা নিজেগো জীবন ও জোয়ানকি বাচ্চাগো দিকে তাকাইয়া কাটাইয়া দেয় । আমি নিজেও বিধবা মায়ের একলতা পোলা । আমার বাপ যখন মইরা যায়, তহন আমার বয়স মাত্র দুই বছর আছিল। আমার দিকে তাকাইয়া আমার মা আর বিয়া বহে নাই । তহন আমার মায়ের বয়স আছিল মাত্র আডার বছর। আপনে অহন পইযন্ত একটা মাইয়াও দেহেন নাই । এইডা দেহেন । পছন্দ না অইলে আরও দেহামুনে । অইলে চলেন কাইলকা দুইজনে যাইয়া মাইয়াডা দেইখ্খা আহি।
ঘটকের কথায় মাহমুদ রাজি হয়ে গেল। বললঃ কাল দুপুরের পর পরই যাব । তুই খবর পাঠিয়ে দে ।
বাস থেকে নেমে মাহমুদ দুই কেজি মিষ্টি নিল। তারপর বললঃ কতদুর যেতে হবে ?
ঃএই বেশি দুর না । হাইটা গেলে আধা ঘন্টা রিকসায় গেলে দশ মিনিট লাগব ।
ঃ তাহলে রিক্সাই নে ।
দশ মিনিটের জায়গায় প্রায় পঁচিশ মিনিট লাগল পৌঁছতে। টিনের দোচালা বিশাল আলীশান বাড়ি । গেট পার হয়ে সামনে বিরাট উঠান। উঠানে সিদ্ধ করা ধান রোদে শুকানো হছ্ছে। মাহমুদ কিছুটা থতমত খেয়ে গেল।
মাহমুদের অবস্থা দেখে ঘটক বললঃ এই বাড়িডা ওগো আছিল । মাইয়ার বাবার ক্যান্সারের চিকিৎসার টাকা যোগাইতে যাইয়া আপন চাচার কাছে সব বেইচ্চা হালাইছে । অহন আর বাপের ভিটা কইতে হেগো কিছুই নাই। এই বিশাল বাড়িডার পিছনে জংলার লগে লাগাইন্না একটা ছোট্ট কুড়ে ঘর আছে হেইখানে মা আর মাইয়া থাহে। মাইয়াডার বিয়া অইয়া গেলে মা হের বাপের বাড়ি যাইবোগা এই শর্তে চাচা হেগো থাকতে দিছে। সব চাইতে দুঃখজনক ঘটনা অইল মাইয়ার বাপেই এই ভাইয়েরে পালছে পড়ালেহা করাইছে । ব্যাবসা ধরাইয়া দিছে বিয়া করাইছে ।
মাহমুদ কোন কথা বলল না। সে ঘটকের পিছনে পিছনে বিশাল বাড়ির পিছনে ছবির মত ছোট্ট সুন্দর উঠান অলা ছনে ছাওয়া, মাটির একটি কুড়ে ঘরের সামনে এসে দাড়াল। উঠোনে পা রেখেই মাহমুদের দুই চোখ পানিতে ভরে গেল। রাহলা বেঁচে থাকতে তার বাড়ির উঠানও এই ভাবে নিকানো থাকত। তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে ঘটকের পিছনে পিছনে ঘরে প্রবেশ করল।
ছোটখাট একটা কামরা । একপাশে একটা চারপায়া টেবিল ও দুইটা চেয়ার অন্য পাশে একটা চৌকি । টেবিলের উপর নক্সিইকাথার মত নকশা করা টেবিল ক্লথ । চৌকিতেও তেমন একটা চাদর বিছানো। খুব সুন্দর নক্সা । দক্ষ হাতের নিপুন কাজ। যে কাউকেই মুগ্ধ করবে । ঘটক টেবিল থেকে একটা চেয়ার বের করে দিল । মাহমুদ বসল। ঘটক ভিতরে ঘরের দরজার পর্দার ওপাশে লক্ষ্য করে সালাম দিলে । মেয়েলী কন্ঠে আওয়াজ এল । সালামের জওয়াব নিয়ে বসতে বলল। কিছুক্ষণ পরে দুইজন কম বয়সী মেয়ে প্রবেশ করল । একজন সাধারন পোষাক পড়া অন্যজন লাল রংগের শাড়ি পরা ঘোমটা দেওয়া একজন হালকা পাতলা মেয়ে । শাড়ি পড়া মেয়েটা খুবই সুন্দর । গোলগাল মিষ্টি চেহারা । মাহমুদের দিকে এক পলক তাকিয়েছিল । তখন সে দেখল চোখ দুটি সরলতা আর কৈশোরের চন্চলতায় ভরা। মেয়েটিকে দেখে মাহমুদের কেন যেন চেনা চেনা মনে হল । আগে কোথায় যেন দেখেছে। খুবই পরিচিত। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারলনা ।
মাহমুদ ঘটকের উপর রেগে গেল। কারন মেয়েটির বয়স বড় জোর চৌদ্দ কি পনের বছর হবে । এত ছোট মেয়ে !!
তারপরও আপাতত নিজেকে সামলে নিয়ে মেয়েটিকে প্রশ্ন করলঃ তোমার নাম কি মা ?
ঃ সুরাইয়া বেগম।
ঃ বাহ খুব সুন্দর নাম । কে রেখেছে ?
ঃ বাবা। আমার মায়ের নামের সাথে মিলিয়ে রেখেছে।
ঃ তুমি কোন বছরে এস এস সি দিয়েছ ?
ঃ এই বছরই ।
মাহমুদের রাগটা আবার ফিরে এল । কামরার চারদিকে ঘটককে খুজল । নাই । অবস্থা বেগতিক দেখে কোথায় যেন সরে পড়েছে।
ঃ পরিক্ষায় কি পেয়েছ ।
ঃ গোল্ডেন ফাইভ পেয়েছি।
মাহমুদের ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এল ।
ঃ এত ভাল ফলাফল করে আর পড়ছ না কেন?
মেয়েটি চুপ করে থাকল । মাহমুদ লক্ষ্য করল মেয়েটি ঠোঁট তিরতির করে কাঁপছে । মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে আর তার দুই চোখ বেয়ে নোনা জলের ধারা শাড়ির উপর টপটপ করে পড়ছে।
মাহমুদ আর কোন প্রশ্ন না করে বললঃ যাও মা তুমি ভিতরে যাও । আমি একটু তোমার মায়ের সাথে একটু কথা বলতে চাই ।
মেয়েটি আস্তে করে উঠে ভিতরে চলে গেল।
মাহমুদ একটু বড় আওয়াজে বললঃ আপনি সুরাইয়াকে পড়ালেখা না করে বিয়ে দিতে চাছ্ছেন কেন ?
কিছুক্ষন পর ভিতর থেকে সুরাইয়ার মা বললঃ আমি ওর জন্যই এখানে পড়ে আছি তানা হলে অনেক আগেই বাবার বাড়ি চলে যেতাম । আমার বড় ভাই বলেছিল ওকে সহ নিয়ে যেতে । কিন্তু আমি ওকে ওখানে নিতে চাই না । ভাইয়ের বৌদের গন্জনা আমি সইতে পারলেও আমার মেয়েটা সইতে পারবেনা । ও ছিল ওর বাবার একমাত্র মেয়ে । কোন অভাব কখনও পায়নি কারও কাছ থেকে কখনও বড় কথা শুনে নি । ওর বাবা অসুস্থ হওয়ার পর আর মারা যাওয়ার পর ওর ছোট চাচার আচার ব্যাবহারে যে কষ্ট পেয়েছে তা আমি এতদিন মুখ বুজে সহ্য করেছি । এখন আর পারছিনা তাই ওকে কোন ভাল ঘরে বিয়ে দিয়ে সুখি দেখতে চাই ।
ঃ তাই বলে একজন মধ্যবয়স্ক বিবাহিত দুই বাচ্চাঅলা মানুষের কাছে বিয়ে দেবেন ?
ঃ ঘটক আমার সাথে মিথ্যা বলেছে । যদিও আপনার অতটা বয়স বোঝা যায় না । এছাড়া আপনার দুই বাচ্চার কথা বলেনি। বলেছে এক বাচ্চা তাও একেবারে শিশু । আমিও চিন্তা করলাম অসুবিধা কি । আমি যে অভাবে আছি সেখানে একটা মেয়ের বিয়ের যে খরচ তা যোগাতে পারব না । যেখানে পড়াতেই পারছি না।
ঃ আপনার বাড়ি কোথায় ?
ঃ আমার বাড়ি সলীমপুর গ্রাম ।
সলিমপুর নাম শুনতেই মাহমুদের অনেক স্মৃতি এসে ভীড় করল। সলিম পুরে এক মেয়ের সাথে ওর বিয়ের কথাবার্তা হয়েছিল । ওর ফুপু সম্মন্ধটা এনেছিল। বাড়ির সবাই দেখে মোটামোটি কথা পাকপাকি হয়ে গিয়েছিল। মাহমুদের সাথে মেয়ের দেখাদেখি হওয়ার আগেই কি কারনে যেন সম্পর্কটা আর হয়নি। তবে মেয়েটার একটা ছবি পাঠিয়েছিল । খুব সুন্দর গোলগাল মিষ্টি চেহারা । নামটা কি যেন ? হ্যা মনে পড়েছে রুবাইয়াৎ । ওর ছবি দেখে আর নাম শুনে মাহমুদ মেয়েটার প্রেমে পড়ে গিয়েছিল । তখন ফুপাত বোনের হাতে একটা ছোট্ট চিরকুট পাঠিয়েছিল মেয়েটার কাছে। হঠাৎ সম্পর্কটা ভেংগে যাওয়ায় আর বেশিদুর আগায়নি । তবে সেই মেয়েটিকে ভুলতে মাহমুদের অনেকদিন লেগেছিল। চিরকুটে লেখা সেই কবিতাটি ছিল কবি কাজি নজরুল ইসলামের বাংলায় অনুবাদ করা কবি আল হাফিজের রুবাইয়াৎ ।
রুবাইয়াৎটা মনে পড়ছে পড়ছে করেও মনে পড়ছে না ।
ঃ আপনি ওখানে হাজী এমদাদউল্লাহকে সাহেবকে চিনেন ?
ঃ হ্যাঁ । উনি আমার বাবা।
মাহমুদ চমকে উঠল !!
ঃ রুবাইয়াৎ আপনার কি হন ?
ঃ আপনি ওকে কিভাবে চিনেন ?
ঃ আপনি বলুন না উনি আপনার কে?
ঃ আমিই রুবাইয়াৎ।
মাহমুদের শরীর কাঁপতে লাগল। তার হৃদয়ে তোলপাড় হতে লাগল। তার মনে হল সে আগের সেই দিন গুলোতে ফিরে গেছে। ওটাই ছিল তার তার প্রথম ভাললাগা প্রথম প্রেমের শিহরন । ওই ছোট্ট চিরকুটটাই তার প্রথম ও শেষ প্রেমের চিঠি।
ঃ আপনি কি করে আমাকে চিনেন ?
মহিলা অধৈর্য হয়ে আবার প্রশ্ন করল। মাহমুদ নিজেকে সামলে নিয়ে বললঃ আমিই তালুকদার পাড়ার সেই মাহমুদ । আজ থেকে পনের-ষোল বছর আগে যার সাথে আপনার বিয়ের কথাবার্তা হয়েছিল। আমি তখন আপনাকে একটা চিরকুট পাঠিয়েছিলাম ।
ঃ হ্যা মনে পড়েছে । আপনার ফুপাত বোনকে দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে কাজি নজরুল ইসলামের লেখা একটা রুবাইয়াৎ ছিল।
মাহমুদ আবার চেষ্টা করল রুবাইয়াৎটা মনে করতে পারলন না ।
নিয়তির খেলা দেখে দুজনেই নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
এরপর নাস্তা এল । মাহমুদ নিরবে নাস্তা খেয়ে নিল । নাস্তা শেষ করে কিছুক্ষন পর উঠে দাড়াল ।
ঃ আমি এখন যাব তাই আপনার সাথে কিছু কথা ছিল। যদি সামনে আসেন তাহলে........।
সাদা শাড়ি পড়া রুবাইয়াৎ পর্দা সরিয়ে কামরায় প্রবেশ করল। রুবাইয়াত মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে । মাহমুদ নিষ্পলক চোখে রুবাইয়াৎ কে দেখল । ছবিতে দেখা চেহারার আদলটা এখনও সেই রকমই আছে। দেখে মনে হয় সুরাইয়ার বড় বোন ।
তারপর ভনিতা না করে সরাসরি মুল কথাটাই বললঃ আমি সুরাইয়ার দায়িত্ব নিতে চাই । আপনি কি আমার বাচ্চাদের দায়িত্ব নিতে পারবেন ?
রুবাইয়াৎ অস্ফুষ্ট স্বরে বললঃ আপনি আমার বড় ভাইয়ের সাথে আলাপ করুন । উনিই আমার অভিভাবক ।
মাহমুদ বের হয়ে গেল । রুবাইয়াৎটা মনে করার আপ্রান চেষ্টা করতে লাগল। কিছু দুর এগিয়ে যেতেই । হঠাৎ কোথ্থেকে ঘটক উদয় হল। মাহমুদ পকেট থেকে পাঁচশত টাকার একটা নোট বের করে ওর হাতে দিয়ে বললঃ এখন আমার সামনে থেকে দুর হয়ে যা । আর যদি কখনও আমার সামনে আসিস তাহলে তোর খবর আছে। ঘটক টাকাটা নিয়ে সরে পড়ল।
রিক্সা নিতে ইছ্ছে করছে না । গ্রামের মেঠো পথের ধুলো ওড়া গোঁধুলিতে, পশ্চিমের রংগীন আকাশের দিকে তাকিয়ে হাটতে হাটতে হঠাৎ রুবাইয়াৎ টা মনে পড়ে গেল।
তোমার পথে মোর চেয়ে কেউ,
সর্বহারা নাই কো, প্রিয়!
আমার চেয়ে তোমার কাছে,
নাই সখি, কেউ অনাত্নীয়!
তোমার বেণীর শৃংখলে গো
নিত্য আমি বন্দী কেন?
মোর চেয়ে কেউ হয়নি পাগল,
পিয়ে তোমার প্রেম- অমিয়!!
( সম্পুর্ণ কাল্পনিক )
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:২৯