অনেকেই হয়তো আগে গেছেন। কিন্তু যারা যাননি কিম্বা গেলেও অনেক আগে গিয়েছেন তাদের জন্য উপকারী হলেও হতে পারে। কোথাও যাবার আগে সেখানকার নাড়িনক্ষত্র জেনে যাওয়া ভাল। সময়, অর্থতো বাঁচেই, বেশী জায়গাও দেখে ফেলা যায়। আমি অবশ্য আমার অভিজ্ঞতার কথাই বলবো। কারন সব তথ্য যে আমি যে সংগ্রহ করতে পেরেছি এমনও নয়।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে সরাসরি যাবার জন্য এ.সি. বাস সৌদিয়া আর নন এ.সি. এস. আলম. ( এবং সম্ভবত ডলফিন) রয়েছে। এস. আলমের সীট সাধারণ মানের মনে হওয়াতে, শীতের মধ্যেও সৌদিয়াতে গেলাম অন্ততঃ আরামদায়ক সীট পাব এই আশাতে। কিসের কি ? এ.সি-ই যা ! বাস এবং সীট কোনটাই খুব একটা আরামদায়ক নয়। তবু এগুলোই সম্বল বাংলাদেশের সবচেয়ে উচুঁ পাহাড়ের জেলা বান্দরবান যেতে হলে ( বিকল্প ব্যবস্থা চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া- ২ঘন্টার পথ )। এস. আলমের ভাড়া ৩৫০ ছাড়ে রাত ১১টায় ফকিরাপুল থেকে। সৌদিয়ার ছেড়ে যাবার সময় ফকিরাপুল থেকে রাত ১১:২০ এ, ভাড়া ৪৫০। ৭-৮ ঘন্টার যাত্রা শেষে সকাল ৭-৮ টার দিকেই পৌছে যায় বাস। দিনের কোচও সম্ভবত আছে তবে নতুন জায়গায় রাতে না পৌছে দিনে পৌছানোই তো ভাল।
কোথায় থাকবেনঃ
পৌছে যাবার পরেই তো চিন্তা থাকবার জায়গা নিয়ে। শহরে ঢুকবারও ৪-৫ কি.মি. আগে মেঘলার কাছাকাছি আছে দুটা সুন্দর থাকবার জায়গা । একটা পর্যটন মোটেল-মেঘলা। সবচেয়ে খোলামেলা, সবচেয়ে ছিমছাম, ফ্যামিলি নিয়ে থাকবার একটা নিশ্চিন্ত ঠিকানা। ভাড়া যে খুব বেশী এমনও নয়। এখানে বেশীর ভাগ রুমই ডাবলস। টুইন বেড অর্থাৎ দুইটা পৃথক বিছানা। ভাড়া পড়বে নন এ.সি. ৮৫০/- , এ.সি. ১৫০০/- । তিন বেডের ও রুম কয়েকটা আছে। গরম পানি,ফোন, টিভি, তো আছেই, সামনের বিশাল বারান্দা এমনকি রুমের সাথেই লাগোয়া পেছনের বারান্দাতে বসেই নিরিবিলি পাহাড়কে উপভোগ করতে পারবেন এখানে ।
ফোনঃ ০১৮১৭৭১৬৯১৬, ০১৫৫৬৫৪৫৭৪৬
এখানে না থাকলে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে হলিডে ইন রিসোর্টে থাকতে পারেন। এখানে বিভিন্ন কটেজ এমনকি টেন্টও ভাড়া নিতে পারবেন। একটা ডাবলস রুমের কটেজ ১০০০ টাকা পড়বে। স্বাভাবিক ভাবেই এখানে ফোন, টিভি এসব পাবেন না। তবে কটেজের চারপাশটা দেখলেই ভাল লাগবে। লেক, গাছপালার ও কমতি নেই সেখানে।
ফোনঃ ০১৫৫৬৯৮০৪৩২
এ দুটোই শহর থেকে একটু বাইরে। যাতায়াতের সামান্য কষ্ট মনে হলেও, রাতে বান্দরবান শহরে বেরুবেনই বা কোথায়? দিনের বেলায় সামান্য এগিয়ে মেঘলার সামনে থেকে বেবী ট্যাক্সি, এমনকি জীপও মিলে যাবে।
শহরের বাইরে আরেকটা রিসোর্ট পাওয়া যাবে শৈলপ্রপাত তথা চিম্বুক যাবার রাস্তায়, মিলনছড়িতে। শহর থেকে ৪ কিমি দূরে এই 'হিলসাইড' রিসোর্টটি গাইডটুরস এর। গাইডটুরস নামই বলে দিচ্ছে নান্দিকতার কোন কমতি নেই এতে। কুড়ে ঘরে ঝকঝকে বাথরুম, গরম পানি সব ব্যবস্থাই আছে। রুম যেটাই নিন, ভাড়া একজন থাকলে ১০০০, দুইজন ১২০০, তিনজন ১৫০০ এধরনের হবে। আছে বিশাল দিগন্তজোড়া পাহাড়কে সামনে নিয়ে ঝোলান বারান্দায় খাবার সুবিধা।
ফোনঃ ০১১৯৯২৭৫৬৯
এছাড়া আরও কম খরচে থাকতে চাইলে শহরের মধ্যেই পাবেন ফোরস্টার ( ০৩৬১ ৬২৪৬৬) , রয়েল, পূরবী, গ্রীনহিল এরকম আরও কয়েকটা হোটেল। ফোরস্টারের কথা বলতে পারি ছোট্ট রুমেই সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাই এখানে দেওয়া । টিভি, ফোন, এমনকি খুব শীঘ্রিই লিফট আর গরম পানিও পাওয়া যাবে এখানে। ভাড়া- আপাতত একজন ৩০০, ডাবল বেড ৬০০, ট্রিপল বেড ১০০০ ( এইটাই যা অদ্ভুত)। শহরের মধ্যে এসব হোটেলে কম খরচে বেশী সুবিধা পাওয়া যাবে ঠিকই, তবে হোটেলে থাকাকালীন মনেই হবে না বান্দরবানে আছি। হোটেলে আর কতক্ষনই বা থাকা- এটুকু যদি মেনে নিতে পারেন তবে থাকা-খাওয়া দুটোতেই খরচ বাঁচবে।
বান্দরবান সম্পর্কে আগে একটা ধারণা ছিল এখানে বোধহয় শুধু শীতের সময়টাই পর্যটকেরা আসে । বর্ষায় সব খালি। কিন্ত যা শুনলাম এখানে সারা বৎসরেই হোটেলের একই ভাড়া । অর্থাৎ কোন অফসীজন নেই। মূলত বিদেশীরা এখানে আসে এনজিওর কাজে সারা বৎসর জুড়েই। কাজেই আগেভাগে বুকিং দিয়ে আসাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আজ এটুকুই থাক। দর্শনীয় জায়গাগুলোর কথা আগামীর জন্য রইল। .....
বান্দরবানঃ যাবার আগে জেনে নিন দরকারী কিছু তথ্য : পর্ব ২