জয়গুণ খাতুনের বিয়ে হল তিন মাস । বিয়ের পর পরই স্বামী তাহের আলী বিদেশে চলে যায় । জয়গুণের গায়ের রঙ কালো কিন্তু শরীরের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে এক অদ্ভুত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে । মিষ্টি এক চেহারা । তাঁর এই রূপ অন্যরকম মাদকতা ছড়ায় । তাঁর এই সৌন্দর্যে পাড়ার যুবকদের হৃদয় খুন হয়ে যেতে চায় । জয়গুণ যখন পুকুর ঘাট থেকে ভেজা কাপড়ে ওঠে এসে ঘরে ফেরে, ফেরার পথ টুকুতে তখন গোপন চোখের চাহনি তাঁর সুডৌল বুকের ভাঁজে গিয়ে পড়ে । চোখ অন্ধ হয়ে যেতে চায় যুবকদের । কেউ কেউ বাজে মন্তব্য করে, কেউবা দূর থেকে কু-প্রস্তাব দেয় । কিন্তু বিয়ের ব্যাপারে কেউ আর এগিয়ে আসেনা ।
কাছে, দূরে থেকে অনেক সম্বন্ধ এলেও তা বেশি দূর এগোয় না । জয়গুণ কষ্ট পায় । বুকের গভীরে কষ্ট লুকিয়েও কেমন অদ্ভুত হাসি দেয় ! হাসি মিলিয়ে গেলে চোখে মুখে ভাসে সঙ্কার চিহ্ন । সংকটের গুনগুন শব্দের আওয়াজ যেন কানে এসে ভেঙে দিতে চায় নারীত্বের অহংকার ! কিন্তু জয়গুণের যে গুণ গুলো আছে সে দিকটায় কেউ নজর দেয় না। শান্ত জয়গুণ তবুও ধৈর্য দেখায় । অপেক্ষা করে স্বপ্নের বরপুত্রের ।
একুশ বছরের জয়গুণের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় আরও পাঁচ বছর আগেই, বাবা মারা যাবার পর পরই । বিয়েটাও সে কারণেই । জয়গুণ বিয়ের কথা ভাবত না । তাঁর ভাবনায় আসেনি অনেক দিন । কিন্তু এখন আসে । তাঁর ভেতরে এটা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছেন । আরও বলা হয়েছে যে কালো মেয়েদের যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে হয়ে যাওয়াই ভাল । বসে থাকতে নেই ।
তাহের আলী এই বিয়েতে আপত্তি করেনি । এমনকি তাঁর পরিবারও । কারণ, বয়স পয়তাল্লিশ পেরিয়ে গেছে এখন আর পাত্রী বাছাইয়ের সুযোগ নেই । যদি তা না হতো তাহের আলীর পরিবারও ফিরে যেত নিশ্চিত; অন্যরা যে কারণে গেছে । বিয়ের একমাসের মাথায় স্বামী চলে যায় বিদেশে । জয়গুণের কষ্ট হয়না ! কাঁদে না ! মন বিষণ্ণ হয়ে ওঠে না ! যেন সে মুক্তি পায়.