এভাবে নয় আরেকটু কাছে আস; চেপে ধর, মুখে নাও । হ্যাঁ, হ্যাঁ ঠিক ভাবেই হচ্ছে । এবার নীচের দিকে নাম, হাত রাখ । ভিজে উঠল ? এবার ভেজা জমিনে লাঙল নামাও । চাষ কর, প্রথমে ধীরে তারপর দ্রুত । কি সাংঘাতিক দুষ্টু তুমি হায়দার । শিখলে কেমন করে এইসব ? আর এতদিন কোথায় ছিলে ? কি অদ্ভুত রকমের পাগলামি তোমার কামনায় !
শুন, ভালোবাসার কথা বলনা কোনদিন । কামনা বাসনার সাথে ভালোবাসা মেলাতে নেই তাতে অধিকার জন্মায় । আর বুঝতেই পারছ আমার পক্ষে সংসার ত্যাগ করে যাওয়া সম্ভব নয় ।
অনেক দিন হল এই অন্ধকারে আছি । যতবার আমি বিছানায় পেতেছি এই নষ্ট দেহ ঠিক ততবার ওদের হিংস্রতায় আমি কুঁকড়ে গেছি । হাতের থাবায় ভেঙেছে আমার বুকের পাঁজর । কান্না গুলো না ঝরে শুকিয়ে গেছে চোখের ভেতরেই !
জানো হায়দার, তোমার মত আর কেউ পারেনি আমাকে ভেজাতে । কেউ পারেনি ঝরাতে । তোমার মত আর কেউ পারেনি কাঁপাতে এই বুক । ভয় নয়, ভরসা পাই তোমার উপর । এক আশ্চর্য মাদকতা অনুভব করি ।
জানো এটাও যে এক প্রকার শিল্প এই ধারণাটিই কারো নেই । থাকবে কেমন করে ? রিক্সাওয়ালার কি সেই ধারণা থাকে ? বড়লোকের বখাটে ছেলের কি তা থাকে, ইসলামপুরের কাপড়ের ব্যবসায়ির কি তা থাকে ? থাকে কি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষকটির ? কিংবা মাতাল লোক গুলো- যারা গভীর রাতে বাড়ি না ফিরে ছুটে আসে এখানে ?
সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে । মিনিটেই মাখতে চায় অনুর্বর রস । এখানেও মানবিকতা দেখাতে হয়; এখানেও ধীরে প্রবেশ করতে হয় আর প্রস্থান দ্রুত । তাতে উভয়ের জন্যেই ভাল ।
দিন যায় কথা বাড়ে। সময় ধরে পৌঁছে যায় হায়দার সাবিনার সাজানো গোছানো কামরায় । প্রথম প্রথম হায়দার অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকত । বসে থাকত চেয়ারে আর ভাবত জীবন কি বিচিত্র ! কাগজের নোট মানুষকে কি না করাতে পারে ! এখন আর হায়দারের অপেক্ষা নেই । আসবার আগে একটা কল করলেই হল- অপেক্ষার ছুটি ।
‘’সাবিনা আমি কি তোমার সাথে বাইরে দেখা করতে পারি ?’’ হায়দার বলে । ‘কেন ? এখানেইতো বেশ সময় কাটে আমাদের হায়দার । আমি এখানে থাকা অবস্থায় যারা আসে আমি তাঁদের ওরা আমার । বাইরের আমি আমার নিজেরই নই অন্য কারোরতো প্রশ্নই উঠে না । পৃথিবীর সব আলো নিভে গেল আমি হয়ত তাঁদের হব যারা আমার কাছ থেকে দূরে আমি যাদের কাছ থেকে ।
হায়দারের ভাল লাগেনা, আজ আশাহত হয়ে ফিরে যায় ।
সাবিনাকে ভালবাসতে না চাইলেও পারছেনা । মানসিক দুর্বলতার নিয়ন্ত্রণ কে করবে ?
কেমন যেন বদলে যেতে থাকে হায়দার কিন্তু সাবিনা বদলাতে চায় না । কারণ সাবিনা জানে এই বদলানোয় বদলে যাবেনা জগত সংসার ও তার বহু দিনের পুরনো রীতিনীতির ধারকরা । আর যাবেনা বলেই হায়দারের চাওয়াকে পাওয়ায় রূপান্তর করে না । অনেক ইচ্ছাকে অস্বীকৃতি জানায় ।
সাবিনা নেই, তাঁর খোঁজে হায়দার বেরিয়ে যায় পথে । সাবিনা পথে পথে খুঁজে বেড়ায় নিরাপদ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার । বুকের ভেতর ঝড় ওঠে সাবিনার । আশ্রয় খোঁজে নিজের ভেতরেই । ভেতরের আশ্রয়টাই যে সবচায়তে বিশ্বস্ত ও নিরাপদ ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:০৩