সৎ, আদর্শবান তোরাব মিয়া এলাকায় বেশ জনপ্রিয় । তাঁর স্বপ্ন-একদিন এলাকার মানুষ শিক্ষায় দীক্ষায় এগিয়ে গিয়ে আলো জ্বেলে ঘুচাবে সকল আঁধার । সেই লক্ষ্যে তোরাব মিয়া এলাকার তরুণদের সংগঠিত করে নীরবে নিবিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে যায় । ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত এই তোরাব মিয়া একদিন অনিচ্ছায় এলাকার মানুষের চাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ায় এবং যথারীতি বিপুল ভোটে জয়ী হয় । নির্বাচনের এমন ফলাফলে এলাকার সবাই খুশি । ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিনের মধ্যেই এলাকায় কাজের তোরজোড় শুরু হয়ে যায় । তোরাব মিয়া শক্ত হাতে তদারকি করে কাজের । কাজের চাপে প্রায় প্রতিদিন গভীর রাতে বাড়ি ফেরে । নির্বাচনকালীন সময়ে তোরাব মিয়া কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এলাকার মানুষদের, সেইসব পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যায় সে।
দিন যায়, বছর যায় । শুরু আর মাঝের সময়টাতে গড়ে ওঠে পার্থক্য । যে তোরাব মিয়া বেশির ভাগ সময় একা চলতে পছন্দ করত, বেশি কথা বলত না সে তোরাব মিয়ার আশে পাশে এখন অনেক মানুষ । কথাও বলে বেশি । আসলে বলতে হয় । তরুণদের পছন্দের মানুষটি এখন আর তরুণদের নিয়ে বসে না । তাঁদের সাথে কথাও বলার সময় নেই এখন । তোরাব মিয়া দিনদিন স্বপ্ন দেখতে ভুলে যায় । দিনবদলের সাথে সাথে তোরাব মিয়াও বদলে যেতে থাকে । এখন তাঁকে দেখা যায় গভীর রাতে মদ খেয়ে বাড়ি ফিরছে । একটি রাজনৈতিক দলেও ইতিমধ্যে যোগদান করেছে সে । পার্টি অফিসে অচেনা মানুষের আনাগোনা । এলাকার সন্ত্রাসীদের সাথে দিনদিন সখ্যতা বাড়িয়ে যায় সে । তাঁর এমন কার্যকলাপে ভীষণ কষ্ট পায় এলাকার মানুষ । কি থেকে যেন কি হয়ে গেল । এমনও রূপ হয় মানুষের ? ভাবতে থাকে সে মানুষেরা, যারা একসময় তোরাব মিয়ার খুব কাছের ছিল ।
এলাকায় বন্যা । গরীব মানুষদের মাথা গোঁজার ঠাই নেই । খাবার নেই । এইদিকে সরকারী অনুদানের টাকা পার্টির উন্নয়নের পেছনে খরচ হচ্ছে । স্কুলে হাঁটু জল দীর্ঘদিন, কিন্তু জল নিষ্কাশনে কোন উদ্যোগ নেই । এ ভাবেই চলছে এখন সব । এমন সব অবস্থার মাঝেই এলাকার তরুণরা একদিন তোরাব মিয়ার কাছে যায় স্কুলের নানান সমস্যা নিয়ে । তাঁদের মধ্যে অরুণ বলে- ‘চাচা সবইতো জানেন, দেখছেনও । কিছু একটা করুন’ । তোরাব মিয়া উত্তর দেয়- ‘’হবে, সবই হবে এত ভাবনা কেন ? সামনের মাসে বড় মেয়ের বিয়ে- দুই হাজার মানুষকে নিমন্ত্রণ করেছি । অনেক খরচ, ভাবতে হচ্ছে । তোমাদেরকেও আসতে হবে কিন্তু’’ । তাঁর কণ্ঠে বদলে যাবার সুর শুনতে পায় তরুণরা । আশাহত হয় । সবাইকে অবাক করে দিয়ে তোরাব আলী চলছে যে পথে সে পথেই হেঁটেছে আগে সবাই । এটাই নিয়ম ওপথের । এই পথ এমন করে হাঁটবার সকল ব্যবস্থাই করে রাখে । কেবল যোগ্য মানুষ চাই যে কিনা পথে পথে এঁকে যাবে কলঙ্কের দাগ-শুরু এবং শেষ মিলে মোট পাঁচ বছর ।