somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিঠা বিক্রেতা ঠেলাচালক এখন রাজপ্রাসাদের মালিক

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :








আমির আহমদ কয়েক বছর আগেও রাস্তার পাশে ভ্যানগাড়িতে পিঠা বিক্রি করতেন। দৈত্যের চেরাগবাতির কল্যাণে দ্রুত পাল্টে গেছে তার জীবনযাপন। সেই আমির এখন ভ্যানগাড়ি ছেড়ে চড়েন কোটি টাকা দামের বিলাসবহুল পাজেরো জীপে। থাকেন নিজের ডুপ্লেঙ্ বাড়িতে। ঘুরে বেড়ান দেহরক্ষী নিয়ে। পরিবর্তন এসেছে তার ব্যবসা-বাণিজ্যে। ভ্যানগাড়িতে পিঠা বিক্রির পরিবর্তে এখন বিক্রি করেন মরণনেশা ইয়াবা! আর ইয়াবার ঝলকেই একসময়ের ভাসমান পিঠা বিক্রেতা আমির এখন কোটিপতি 'লেইট্যা' আমির। হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়ে ইয়াবার ছোঁয়ায় নিজেদের জীবনধারা পাল্টে ফেলা এমন অনেক আমিরের অজস উদাহরণ আছে দেশে ইয়াবা প্রবেশের প্রধান রুট টেকনাফে। সরেজমিন জানা যায়, বছর কয়েক আগেও যাদের অনেকেই ছিলেন কৃষক, কেউ গরু ব্যবসায়ী। কেউবা ছিলেন ঠেলাগাড়ির চালক। ইয়াবার ছোঁয়ায় শুধু আমির আহমদ নয়, তার মতো নুর মোহাম্মদ, নুরুল হুদা, আলী হোসেন, মঞ্জুর আলমরা এখন টেকনাফের কোটিপতি। এই সীমান্ত উপকূলীয় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সদ্য নির্মিত রাজপ্রাসাদের মালিকও। এসব ভয়ঙ্কর ইয়াবা ব্যবসায়ী মাদকের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে একেকজন গডফাদারে পরিণত হয়েছেন। গড়ে তুলেছেন ইয়াবা চোরাচালানের নিজস্ব সিন্ডিকেট এবং দুর্ধর্ষ ক্যাডার বাহিনী।

সরেজমিন খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, মাদকদ্রব্য চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য টেকনাফের অধিকাংশ মানুষ এখন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছেন ইয়াবা ব্যবসায়। তাদের এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার মতো স্থানীয় মানুষের সংখ্যা খুবই কম। অতীতে যারা ইয়াবা চোরাচালানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন, তাদেরকেই কৌশলে হয় ইয়াবা ব্যবসায়ী, নয়তো অপরাধী হিসেবে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। যে কারণে ভুলেও কেউ ইয়াবার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় না। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথাও বলতে চায় না কেউ। টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এতটাই শক্তিশালী যে, মাঠপর্যায়ে রয়েছে তাদের এজেন্ট। শহরে নতুন কেউ পা রাখলে সেই সংবাদ পৌঁছে যায় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছে। পানের দোকানদার থেকে শুরু করে রিকশাচালক, বাস চালক, ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকেই এখানে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সোর্স হিসেবে কাজ করছেন। টেকনাফের এমন কিছু প্রত্যন্ত গ্রাম রয়েছে, যেখানে বহিরাগতদের প্রবেশে অনুমতি নেই। মৌলভীপাড়া, জাইল্যাপাড়া, লেদা, হ্নীলা এলাকায় এমন বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে যেখানে রাজপ্রাসাদের মতো বাড়ির সংখ্যা কম নয়। নিভৃত এসব পল্লীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দোতলা, তিনতলা প্রাসাদোপম অট্টালিকা। এসব এলাকাকে 'টেকনাফের সিঙ্গাপুর' বা 'টেকনাফের দুবাই' প্রভৃতি শহুরে নামে ডাকা হয়ে থাকে। দৃষ্টিনন্দন এসব বাড়িতে নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। পাকা রাস্তার মাঝে হঠাৎ কিছু অংশ শুধু বালু ফেলে রাখা হয়েছে। অপরিচিত বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ির চাকা আটকে দিতেই বালু ফেলে ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝেমধ্যে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের প্রাসাদে অভিযান চালায়। কিন্তু অভিযানের আগেই হাওয়া হয়ে যান ইয়াবার গডফাদারেরা। টেকনাফ বাস টার্মিনাল থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে এমনই একটি এলাকার নাম মৌলভীপাড়া। মৌলভীপাড়াকে বলা হয়ে থাকে 'টেকনাফের সিঙ্গাপুর'। বাস টার্মিনাল থেকে অটো নিয়ে মৌলভীপাড়ার দিকে যেতেই পথিমধ্যে এ প্রতিবেদক একাধিকবার বাধার মুখে পড়েন। প্রথমে ৮/১০টি মোটরসাইকেলে করে আসা যুবকরা অটো ঘিরে ফিলে পরিচয় জানতে চান। অধিকাংশ মোটরসাইকেলের কোনো নম্বরপ্লেট ছিল না। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তল্লাশির মুখোমুখিও হতে হয়েছে প্রতিবেদককে। মোটরসাইকেল আরোহী আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার পর মৌলভীপাড়ায় ঢোকার মুখেই অটো চালকের সাবধান বাণীতে সেখানেই থমকে দাঁড়াতে হয়। তরুণ অটোচালক সোহরাব (ছদ্মনাম) জানান, নিজের নিরাপত্তা নিজেকে নিয়েই তবে মৌলভীপাড়ায় ঢুকতে হবে। এখানে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আস্তানা। তারা যদি আপনার পরিচয় জানতে পারে, হয়তো বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সাধারণ অনেক মানুষই এখানে এসে ভয়াবহ বিপদে পড়েছেন। কাউকে মাদক ব্যবসায়ী, আবার কাউকে অপরাধী হিসেবে পাকড়াও করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে।

মৌলভীপাড়ার চোখধাঁধানো বাড়িগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কোনো গ্রাম এটি। বাহারি নকশার ভবনগুলোর চারপাশ ঘিরে লাগানো হয়েছে দামি দামি রং বেরংয়ের টাইলস। রোদে দূর থেকেই বাড়িগুলো ঝিলিক দিচ্ছিল। গ্রামের প্রথম বাড়িটির মালিক আলী হোসেন। পেশায় তিনি গরু ব্যবসায়ী হলেও বাড়ি তৈরির টাকা উপার্জিত হয়েছে ইয়াবা ব্যবসার মাধ্যমে। ইয়াবা ব্যবসা করেই কোটিপতি হয়েছেন ফজল আজিজের ছেলে আলী হোসেন। তার আরেক ভাই মঞ্জুর আলমও গড়েছেন আলিশান বাড়ি। ভাইয়ের মতো তিনিও গরু ব্যবসা ছেড়ে ইয়াবা ব্যবসা ধরেছেন। লবণ চাষ বাদ দিয়ে রহিম বেপারি শুরু করেন ইয়াবার ব্যবসা। আলিশান বাড়ি তৈরি করেছেন মৌলভীপাড়ায়। কক্সবাজার, রাজধানী ঢাকায় অভিজাত এলাকায় রয়েছে তার দামি দামি ফ্ল্যাট। কঙ্বাজার থেকে টেকনাফে ঢুকতেই হাতের ডান পাশে দেখা যায় রংবেরংয়ের বিশাল এক অট্টালিকা। ঠেলাগাড়ির চালক নূর মোহাম্মদ বিশাল এই বাড়ির মালিক। ঠেলাচালক নূর মোহাম্মদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় মাত্র বছর তিনেক আগে। ঠেলাগাড়ির চাকার ভেতর করে টেকনাফ থেকে কঙ্বাজারে নিয়ে যেতেন ইয়াবার চালান। ঠেলাগাড়ির চাকাই তার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয়। কিন্তু গত মাসে টেকনাফে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন ইয়াবার এই গডফাদার নূর মোহাম্মদ।

হঠাৎ করে কোটিপতি বনে যাওয়া নয়াপাড়ার (জিনাপাড়া) নুরুল আলম গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন। ইয়াবা চোরাচালান মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত নুরুল আলম জেলখানায় কোটিপতি আসামির মতোই রাজসিক দিন কাটাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তার অনুপস্থিতিতে ব্যবসা চালাচ্ছেন নিজস্ব ক্যাডাররা। একই এলাকার আরেক মাদক ব্যবসায়ী নুরুন নাহারও এখন একটি একতলা বাড়ির মালিক। শিলবুনিয়া পাড়ার হানিফ ম্যানশনের সাইফুল এবং কুলালপাড়ার আলমগীরও অল্প সময়ে মালিক হয়েছেন বিপুল বিত্ত-বৈভবের। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নাইট্যংপাড়া এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা করে সর্বপ্রথম আলিশান বাড়ি তৈরি করেন রমজান। তিনি ইয়াবা রমজান নামে পরিচিত। কয়েকবছর আগে এই ভবনটি তৈরি করার পর সবার নজরে আসে রমজান। পুলিশ তার খোঁজ করতে থাকে। রমজান এলাকা ছাড়লেও ইয়াবা ব্যবসায় তার চোরাচালান সিন্ডিকেটে যোগ দিয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। টেকনাফের সার্বিক অবস্থা এমন এক পর্যায়ে এসেছে, প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন ইয়াবা ব্যবসায়ী। ইয়াবা ব্যবসাকে অনেকেই বৈধ ব্যবসা হিসেবে মনে করেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা জানান, এখানকার ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ক্ষমতাধর এবং সংঘবদ্ধ। তারা বিভিন্নভাবে অভিযানের সংবাদ পেয়ে যান। যে কারণে তাদের গ্রেফতার করা দুষ্কর হয়ে পড়ে।

- See more at: Click This Link
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×