চলে গেলেন লেখক-সাংবাদিক খুশবন্ত সিং। উপমহাদেশের সাংবাদিকতার এই দিকপাল আইনের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও শেষ পর্যন্ত পেশা হিসেবে বেছে নেন সাংবাদিকতাকে। তার কর্ম সাংবাদিকতাকে যেভাবে মহিমান্বিত করেছে তাতে বলা যায়, খুশবন্ত সিং যদি এ পেশায় না আসতেন তাহলে উপমহাদেশের সাংবাদিকতা অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত থাকত।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ছিলেন এমন একজন লেখক- যার লেখনিতে উঠে এসেছে ভারত বিভক্তির এক নির্মম উপাখ্যান। ট্রেন টু পাকিস্তান যারা পড়েছেন তারা দেখেছেন, একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ হয়েও সত্যকে কিভাবে ধারণ করতেন খুশবন্ত সিং। ভারত বিভক্তিতে তিনি প্রিয় মাতৃভূমি হারিয়েছেন। তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন স্বজন হারানোর নৃশংস চিত্র। তারপরও পাঞ্জাব বিভক্তির দিনগুলোতে হিন্দু-মুসলিম-শিখ সম্প্রদায়ের নৃশংসতা ও মানবিক বিপর্যয়ের যে চিত্র তিনি এঁকেছেন, তা ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে বিবেকবান মানুষের মনে আজও প্রশ্ন তুলে ধরে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ সত্যই কি জরুরি ছিল?
খুশবন্ত সিং ভারত রাষ্ট্রে অনেক বড় সরকারি দায়িত্ব পালনও করেছেন। তার কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্র তাকে সর্বোচ্চ সম্মানে সম্মানিত করেছে। কিন্তু স্বাধীন ভারতে শিখদের পবিত্র স্থান স্বর্ণমন্দিরে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সশস্ত্র হামলার প্রতিবাদে তিনি তা প্রত্যাখ্যানও করেছেন। যদিও রাষ্ট্র তাকে আবারও সম্মানিত করেছে। বলা যায়, রাষ্ট্র এই পদক দিয়ে খুশবন্তকে নয় নিজেকেই মহিমান্বিত করেছে।
পরিণত বয়সে খুশবন্ত সিংয়ের চলে যাওয়া নিয়ে দুঃখ পাওয়ার কিছু থাকে না। তারপরও মনে হয়, তার এই চলে যাওয়া উপমহাদেশের সাংবাদিকতায় এমন এক শূন্যতা সৃষ্টি করল, যা পূরণ হওয়ার জন্য আমাদের বহুকাল অপেক্ষা করতে হবে।
বিশ্বাসী মানুষ হিসেবে আমরা মনে করি, ইহলৌকিক কর্মের জন্য খুশবন্ত সিং তার পারলৌকিক জীবনে নিশ্চয়ই পুরস্কৃত হবেন।