প্রথমবারের মত কোন রাজপুত দুর্গে যাচ্ছি, ভেবেই গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে। বিশাল পাহাড়ের উপর দুর্দান্ত কেল্লা, চারিদিকে গভীর পরিখা কাটা আর পানি থৈ থৈ করছে। টুং টাং ঘন্টা বাজিয়ে বিশাল বিশাল হাতি ঘুরছে রাস্তায়। ৯০০-১০০০ রুপীতে হাতির পিঠে চড়িয়ে দুর্গে নিয়ে যাবে মাহুত। আমাদের সালিম ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে একেবারে কেল্লার টপে হাজির করালো। এখানে একটা কার পারকিংও আছে। আমরা চললাম আম্বর কেল্লা দেখতে।
নাম শুনে মনে হয় মুসলমান কেল্লা, কিন্তু আম্বর নামটি রাখা হছে আম্বা নামের এক দেবীর নামানুসারে।
পানির পরিখা - মুসলিম, হিন্দু আর রাজপুত স্থাপত্যের অপূর্ব মিশ্রণ এই আম্বর কেল্লা।
আম্বর কেল্লা। ষোড়শ শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেন রাজা মানসিংহ।
কেল্লার মূল ফটক
দুর্গের মূল মন্দিরে যাবার সিড়ি
গম্বুজগুলো মুঘল স্থাপত্যের কথা মনে করিয়ে দেয়।
এ সৌন্দর্য চোখে না দেখলে বোঝা কঠিন
শীষ মহল - কাচ আর আয়নার টুকরোয় ঘেরা এই প্রমোদভবন যোধা-আকবর মুভির কারণে সবাই চেনে !!!
কেল্লার তলদেশে ঢুকে একটা সুড়ঙ্গের সন্ধান পেয়ে আমরা হেটে চললাম............ কিছুদূর গিয়েই সেটা আটকে দেয়া !!!
মনে হচ্ছিলো আমরা হেলিকপ্টারে :p :p দুর্গের ছাদের পাচিল থেকে তোলা ছবি
পাহাড়ের উপর অজেয় জয়গড় দুর্গ। ঐ দুর্গটা নাকি কখনো কারো দ্বারা বিজিত হয়নি। তবে সময়ের অভাবে ওই দুর্গটা আমাদের দেখা হয়নি ।
এরপ সালিম আমাদের নিয়ে আসলো স্যুভেনির শপে। এরকম গাড়ী রিজার্ভ করে ট্যুরিস্ট হিসেবে ঘুরলে এই এক ভ্যাজাল। দোকানের যা কিছু আছে সব কিছুর অসাধারণত্ব আর গুণগান শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। সারোয়ার ভাই একটা ষোলশ রুপীতে নাগরা কিনে নিলেন, খাটি উটের চামড়ায় তৈরি নাকি!!! দাম শুরু ১০০০ রুপী থেকে, উপরে যত যাওয়া যায়। আর যে ড্রাইভার এরকম দোকানে ট্যুরিস্ট নিয়ে আসবে, সেই লোক কিছু কিনলে ড্রাইভার কমিশন পাবে তার ৫%। এই দোকানে আনার কারণে এখন সালিম পাবে আশি রুপী !! জিনিসগুলো আমরা আস্তে আস্তে বুঝেছিলাম।
আম্বর কেল্লার ছাদ থেকে পাহাড় ঘেরা জয়পুরের ল্যান্ডস্কেপ
চীনের প্রাচীর নয়, এ হলো রাজপুত প্রাচীর !!!
এরকম হাতি ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় রাস্তায়। দরদাম করে চড়ে বসলেই হলো !!!
জল মহল - মান সরোবরের (মানস সরোবর নয়!!) কোলে রাজপুত প্রমোদ ভবন। তবে শীতকালে নাকি লেকটি শুকিয়ে যায়।
ট্র্যাভেল হেল্প -
কোলকাতা থেকে প্রায় প্রতিদিনই জয়পুরের ট্রেন আছে। হাওড়া-যোধপুর এক্সপ্রেস কিংবা শিয়ালদা-আজমীর এক্সপ্রেস ভালো ট্রেন। সময় লাগবে ২৪-২৫ ঘন্টা, ভাড়া এসি টু -টিয়ারে ১৮৪০ রুপী, থ্রি টিয়ারে ১১৭৫ রুপী আর নন এসি স্লীপারে ৪৩৮ রুপী। আর দিল্লী থেকেও অনেক ট্রেন আছে, সময় লাগবে চার ঘন্টা। শতাব্দী এক্সপ্রেসটা জনপ্রিয়, ভাড়া পড়বে এসি চেয়ারে ৪৬৫ রুপী, এক্সিকিউটিভ ১০০০ রুপী। আর দিল্লী থেকে বাসেও আসা যায়, ৬-৭ ঘন্টা সময় লাগবে। ভাড়া এসি ভলভোতে ৬০০ রুপী, নন-এসি লোকাল টাইপের বাসে ২৫০ রুপী (আমরা এটাতে করেই দিল্লী গিয়েছিলাম)। জয়পুরের বাসস্টান্ডের নাম সিন্ধি ক্যাম্প, এখান থেকে দিল্লী, আগ্রা’র বাসও পাবেন আবার যোধপুর, জয়সলমীর বা আজমীরের বাসও পাবেন। তবে ভারতে চলাচলের জন্য অবশ্যই ট্রেন প্রেফারেবল, ফরেইন ট্যুরিস্ট কোটায় টিকেট কাটার সুযোগ রয়েছে।
জয়পুরের সাধারণ রাস্তার মাঝেও এরকম স্থাপত্য শৈলী অহরহ চোখে পড়ে
জয়পুর স্টেশনের আশেপাশেই হোটেল পাবেন। এছাড়াও বাণী পার্ক কিংবা মতিলাল আট্টাল রোডে প্রচুর হোটেল আছে। আমরা তিনজন মাঝারী মানের হোটেলে একরাত ছিলাম সাতশো রুপী দিয়ে। খাবার-দাবারের ক্ষেত্রে রাজপুতরা ভেজিটেরিয়ান, সেটা ধাতে সইলে তো ভালোই আর তা নইলে শহরের পুরনো অংশে (জায়গাটার নাম মনে হয় মুহাম্মদবাগ) পাবেন হাজারো বিরিয়ানীর দোকান, অনেকটা পুরনো ঢাকার মত। ভারতে খাবার-দাবারের দাম অস্বাভাবিক কম।
হাতুড়ি শাবল গাইতি চালায়ে কাটিল যারা পাহাড়............... :p :p
ঘোরাঘুরির জন্য একদিন বা দুইদিনই যথেষ্ট যদি সারাদিনের জন্য গাড়ী নিয়ে নেন, হাজারখানেক রুপী পড়বে ডেইলি। টাটা সাফারি বা ইন্ডিকা ভি-২ নিয়ে ঘুরতে পারবেন। টিকেটের ক্ষেত্রে একটা কম্পোজিট টিকেট আছে, আম্বর ফোরট - যন্তর মন্তর - হাওয়া মহল - আলবার্ট হল - নাহারগড় কেল্লা, এই পাচটা স্পটের টিকেট ইন্ডিয়ানদের জন্য ৫০ রুপী, বিদেশীদের জন্য ৩০০ রুপী। ছাত্রদের জন্য হাফ, আর এই টিকেটের মেয়াদ দু’দিন অর্থাৎ দু’দিনের মধ্যে স্পটগুলো ঘুরতে হবে। ঐ পাচটা স্পটের যে কোনটার টিকেট কাউন্টারেই কম্পোজিট টিকেট পাওয়া যায়। আলাদা আলাদা করে ঘুরলে কোনটার ২০ রুপী, কোনটার ৩০।
থর মরুভূমির দেশ রাজস্থানে উট চলবে না তাই কি হয় !!!
আম্বর কেল্লার শীষ মহল
এছাড়া সিটি প্যালেস আর জয়গড় দুর্গ, এ দুইটির জন্য ৩০০ রুপীর টিকেট, যার মেয়াদ এক সপ্তাহ। এখানে ক্যামেরা পারমিট নেয়া লাগতে পারে, আরও ৫০ রুপী খসবে।
সময় করে ঘুরে আসুন মান সিং, জয় সিং আর যোধা-আকবরের এই জয়পুর।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৯:০৯