somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারত মন্থন - রাজস্থান (জয়পুর) পর্ব : রাজপুতানার গোলাপী শহরে - ১

১৭ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পোস্ট : ভারত মন্থন - গুজরাত পর্ব ২ (শেষ পর্ব উইথ ট্র্যাভেল হেল্প) Click This Link

জয়পুর যেতে চাই, এটা শুনেই কেন যেন নির্মা ভার্সিটির ছেলেপেলে খুব খুশী হয়ে উঠলো। আসলে গুজরাতের এই ক্যাম্পাসের বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রীই রাজস্থানের, ওখানে ভালো প্রতিষ্ঠান থাকার পরও এখানে কেনো আসে জানি না।

সাড়ে তিনশো রুপীর নরমাল সিটিং টিকেট কেটে আমাদের বাসে উঠিয়ে দিলো রাহুল বিকেল পাচটায়। দূরত্ব সাড়ে ছয়শো কিঃমিঃ, সময় লাগবে ষোল ঘণ্টা। ভারতের ট্র্যান্সপোরট সিস্টেমে সবচেয়ে খারাপ জিনিস হলো এই বাস। ট্রেনের টিকেট না পাওয়ায় আমরাও শুরু করলাম এই কষ্টযজ্ঞ।
অদ্ভুত সব পাহাড়ী বাক আর উঁচু-নিচু পথ পেরিয়ে আহমেদাবাদ থেকে জয়পুর পৌছাতে আমাদের সময় লাগলো সতেরো ঘণ্টার কিছু বেশি। আকাশে চাঁদ ছিলো উজ্জ্বল - দুর্দান্ত সব পাহাড় দেখে কেমন যেন একটা রাজপুত রাজপুত ফিলিং চলে আসলো মনের মাঝে। চেনা জায়গা (শুধু নামটা জানি !!!) ক্রস করেছি বলতে উদয়পুর আর আজমীর। বেশ কিছু যাত্রী আজমীরে নামলেন। মুসলিম গুজরাত থেকে জয়পুরের যাত্রীর চেয়ে আজমীরের যাত্রী বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক।

সকাল দশটায় আমরা নামলাম জয়পুরে। শহরে ঢোকার মুখেই বিশাল ক্যান্টনমেন্ট। রাজপুত সামরিক শক্তির কথা স্মরণ হলো আবার। কৌশলগত কারণেও দিল্লীর নিরাপত্তার জন্য জয়পুর একটা বড় ঘাটি। বাসস্টপ থেকে এক মুসলমান অটোওয়ালা (সাব্বির চাচা) তুলে নিলো আমাদের, ড্রপ করলো এক মুসলমান হোটেলেই।

রাজা জয় সিংহ স্কোয়ার
উইকিট্র্যাভেল আর ব্লগ ঘেটেঘুটে যা শিডিউল ছিলো আমার, তাতে একদিনেই মোটামুটি কভার করা যাবে বড় স্পটগুলো। আমাদের সময়ের টানাটানি, পকেটে পয়সারও টানাটানি। সাব্বির চাচা মারফত তার ভাতিজা সালিম হাজির হলো ইন্ডিকা ভি-২ নিয়ে। চোস্ত ইংরেজি বলে, দিব্যি স্মার্ট কিন্তু দেখে মনে হয় কলেজ পেরোয়নি। সারাদিন সব ঘোরাঘুরি ১০০০ রুপী নেবে, তাছাড়া পাহাড়ী পথে অটো বা অন্য কিছু চলবেও না। টুক করে আমরা উঠে পড়লাম।

আলবার্ট হল - জয়পুর ন্যাশনাল মিউজিয়াম
প্রথমে রাজা জয় সিংহ স্কোয়ার। জয়পুর শহরের স্থপতিকে একবার দেখে নিয়ে আমরা ছুটে চললাম জয়পুর ন্যাশনাল মিউজিয়ামে, যেটাকে আলবার্ট হল বলা হয়। মিউজিয়ামটার রেলিক্স সবই রাজপুত সম্পর্কিত, মুঘল-রাজপুত কানেকশনের কিছু বিষয়ও তুলে আনা হয়েছে। আর আছে একটা মমি। এই জিনিস আগে কখনো দেখিনাই, তাই লাল পাগড়ী পরা দারোয়ান ঘেউ ঘেউ করার আগেই ক্লোজ থেকে আমরা ছবি টবি তুলে পগারপার !!!


দ্য মামি !!!!

শহরের সাধারণ বাড়ীঘর............

সালিম বুদ্ধি দিলো ইন্ডিয়ান টিকেট কিনতে, তাতে পাচগুণ খরচ কমে যায় কারণ বিদেশী নাগরিকদের টিকেটের দাম সেইরকম। হিন্দি ভাষার জ্ঞানের যে অবস্থা, ভয়ে ভয়ে কাউন্টারে গেলাম। ওদের একটা প্যাকেজ আছে, একই টিকেটে ছয়-সাতটা স্পটের প্যাকেজ। ইন্ডিয়ান টিকেট তো নিলামই, আবার তার মধেয়ো সস্তাতর স্টুডেন্ট প্যাকেজটা নিলাম। আমাদের আর পায় কে :D:D:D

শহরের সিটি স্কোয়ারের দিকে যতই এগোচ্ছি, ভুরু ততই উপরে উঠছে। সব গোলাপী, সব গোলাপী। আসলে পিঙ্ক সিটি নামটা বজায় রাখার জন্য এরা মনে হয় বাধ্যতামূলকভাবে বাসা-বাড়ী আর মার্কেটে গোলাপী রঙ লাগায়। ঢুকলাম সিটি প্যালেসে। রাজস্থানের বর্তমান রাজামশাই এখানেই বসবাস করেন।

সিটি প্যালেসের দেয়াল

এই গেট দিয়ে ঢুকলাম, ভিতরের কান্ড-কাহিনী দেখে চোখ টেরিয়ে গেলো !!!

সিটি প্যালেসের দিওয়ান-ই-খাসঃ যাকে বলা যায় খাস মহল

দিওয়ান-ই-খাসঃ গঙ্গাজল রাখবার এই রুপোর জালাটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিলভার পট

এই মহলেই বাস করেন রাজামশাই। ছবি তোলায় ঝামেলা আছে, হু কেয়ারস B-)

এটি সিটি প্যালেসের মহারাজা প্যালেস............ এখানেই সম্ভবত আসল রাজা থাকতেন।

রাজামশাইয়ের প্রাইভেট গ্যারাজের সন্ধান পেলাম !!! ঘোড়ায় টানা গাড়ীও যে এতো ব্রান্ডের আছে তা কে জানতো ?

এই পাগড়ীওয়ালা রাজপ্রহরীদের সাথে সবাই দেখি ছবি তোলে। সারোয়ার ভাই একটা চান্স নিলেন !

রাজপ্রাসাদের ঝলকানি থেকে বেরিয়ে চলে আসলাম রাজা মানসিংহের অমর কীর্তি.......... যন্তর -মন্তরে। এইসব বিশাল বিশাল স্ট্রাকচার দিয়ে কিভাবে মহাকাশ গবেষণা আর তারার গতিপথ মাপা যায়, রাজপুত বিজ্ঞানীরা ভালো জানেন। সমগ্র ভারতে এরকম তিনটা যন্তর-মন্তর আছে, এখানে একটা, দিল্লীতে একটা আর আরেকটা সম্ভবত আগ্রায়। সবকটাই রাজা মান সিংহ তৈরী করে যান।

এটার হাইট সম্ভবত একশো ফুট। সূর্যঘড়ি টাইপের কিছু হবে।

জানিনা বাবা কি কাজ তোমার !!!

তারার গতিপথ মাপতে ব্যবহার হয় এটি।

এটার কাজ যাই হোক, ফটো শ্যুট করতে ভালোই লাগে :p :p :p

ছু মন্তর - ড্যাম ইয়োর যন্তর ;) ;)
এখানে থেকে বেরিয়ে আমরা আসলাম হাওয়া মহলে। আমার জানামতে মুসলমানদের বাইরে এই রাজপুতরাই মহিলাদের জন্য কঠোর পর্দাপ্রথা চালু করেছিলো, সাথে সাথে জওহরব্রত টাইপের জিনিস তো ছিলোই।

হাওয়া মহল
এই হাওয়া মহল ছিলো এক্সক্লুসিভলি রাজ পরিবারের মহিলাদের জন্য। সাত-আট তলা উচ্চতার পুরো জিনিসটায় জানালা আছে প্রায় ন’শো !!! অসাধারণ বায়ুপ্রবাহ, আর সাথে এখানে বসে রাজ্যের লোক-জন, কাজকর্ম দেখবার সুযোগ।

আমাদের পরের স্টপ আম্বর দুর্গ। প্রথমবারের মত কোন রাজপুত দুর্গে যাচ্ছি, ভেবেই গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে। বিশাল পাহাড়ের উপর দুর্দান্ত কেল্লা, চারিদিকে গভীর পরিখা কাটা আর পানি থৈ থৈ করছে। টুং টাং ঘন্টা বাজিয়ে বিশাল বিশাল হাতি ঘুরছে রাস্তায়। ৯০০-১০০০ রুপীতে হাতির পিঠে চড়িয়ে দুর্গে নিয়ে যাবে মাহুত। টাকা কি গাছে ধরে নাকি.................. !!!


ভারত মন্থন - রাজস্থান (জয়পুর) : রাজপুতানার গোলাপী শহরে -শেষ পর্ব Click This Link


সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৯:০৭
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×