somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিশন হাফপসিবল - লাউয়াছড়া জঙ্গলে বৃষ্টিভেজা ট্রেকিং :P :P !!!

২০ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ট্রেন শ্রীমঙ্গলে ঢোকার বহু আগে থেকেই বৃষ্টি, সিলেট শহরেও বৃষ্টি, আর লাউয়াছড়া রিজার্ভ ফরেস্টের গেটে এসেও বৃষ্টি। ভাগ্যিস একটা হার্ডওয়ারের দোকান থেকে তিরিশ টাকা গজে পলিথিন কিনে নিয়েছিলাম সবাই, শীতের চাদরের মত করে গায়ে মাথায় পেচিয়ে আমরা ঢুকে গেলাম জঙ্গলে। ঢোকার সময়ে প্ল্যান ছিলো এক ঘন্টার একটা ট্রেইলে হাটবো, এক বেরসিক গাইড বললো রক্তদান করতে হবে ঐ ট্রেইলে গেলে !!! মঞ্চাইতেসিলো শালারে ধইরা............ !

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ৮ কিঃমিঃ দূরে, ভানুগাছা রোডের পাশে রিজার্ভ ফরেস্ট লাউয়াছড়া সম্ভবত সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত বন। যদিও ঢোকার মুখের বোর্ড বলছে এ জঙ্গলের সবচেইয়ে উল্লেখযোগ্য প্রানী হলো উল্লুক, পঞ্চাশের দশকে এখানে নাকি ভালুক আর চিতাও দেখা যেতো। দশ টাকার টিকেট কেটে আমরা ঢুকে গেলাম, গাইড ছাড়াই। তিনটা ট্রেইল রুট আছে, আধা ঘন্টার, এক ঘন্টার আর তিন ঘন্টার। সৌখিন ট্যুরিস্টরা সাধারনত আধা ঘন্টার ট্রেইলটাই বেশি প্রেফার করেন, বাধানো রাস্তায় হেটে হেটে জঙ্গল দেখা !!!

আধা ঘন্টার ট্রেইল ম্যাপ

বৃষ্টি ঝরছে অঝোরে, আমরা গাইড ছাড়াই ঢুকে গেলাম ট্রেইলে। কপালে কি আছে দেখাই যাক না। বর্ষার মাঝে একটা দুইটা সাপও কি বেরোবে না! পাখির ডাক বন্ধ, রিমঝিম বৃষ্টির আওয়াজ আর একটানে ডাকা ঝিঝি পোকার লহরী। কাদামাখা পায়ে ছপ ছপ শব্দ করে নিঃশব্দে (??!!) হেটে যাচ্ছি আমরা। ইতোমধ্যে অবশ্য রক্তদান প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে, পা থেকে টেনে জোক ঊঠালাম দুইটা। সামনে ট্রেইলটা আরো সরু, জঙ্গল বর্ষার পানিতে একদম ঘন হয়ে গেছে।

ট্রেইলের শুরু


বয়ে যাওয়া ছড়া

মাঝে মাঝে ছড়া বয়ে গেছে বেশ কিছু। খুব বেশি হলে হাটু পানি হবে, মানে এগুলো বর্ষাকালীন ছড়া। পাড়ের বালুটা খুব নরম, নাজমুল ভাই (দারাশিকো) পা দিতেই চোরাবালির মত দেবে গেলো। একটু টিলার মত জায়গা পেরিয়ে আবার মোটামুটি সমতল।

গাছের সেতু - পিচ্ছিল এই জিনিস পার হওয়ার সাধ্য কারো নাই !!


এই পর্যায়ে বসে বসে এগোনো ছাড়া আর কোন উপায় নাই।

এক পর্যায়ে জঙ্গল এমনই গভীর হয়ে গেলো যে, আর হাটা যাচ্ছে না, শুরু হল বসে বসে ক্রল করা। উপরে আবার বেতের ঝাড় আর কিছু নাম না জানা কাটাগাছ। হাতে পায়ে গায়ে সমানে আটকে যাচ্ছে কাটাগুলো, আমরা বসে বসে এগোচ্ছি আর উপরে বৃষ্টি। ঐ সময়ে সাপ-জোকের চিহ্ন মনেই ছিলো না কারো! কিছুক্ষন পর আবার হাটার রাস্তা পাওয়া গেলো। ঘন জঙ্গল, বিশাল লম্বা লম্বা দেশী বিদেশী গাছে ঢাকা পথ হেটে আরও দুয়েকটা ঝিরি পার হলাম, সামনে এসে দাড়ালো দুর্ভেদ্য জঙ্গল। একদম ডেড এন্ড, গাছ না কেটে আগানোই যাবে না। দা ছাড়া এসেছি আমরা, ছুরি-টুরিও নেই সাথে। পায়ের দিকে তাকালেই ঝামেলা, জোক তুলতে হয়। এই চিনা জোক জিনিসটা খুবই খারাপ। পা থেকে হাত দিয়ে টেনে তুললাম, শালা চাইনিজ অ্যাক্রোব্যাটিক্স দেখিয়ে আমার হাতেই আবার কামড়ে ধরলো!!! তবুও এগুলো সাইজে বা দেখতে বান্দরবানের পাহাড়ী জোকগুলোর চেয়ে বেশ ভদ্র। উপায় না পেয়ে আমরা আবার ফিরে চললাম ট্রেইল ধরে। ততক্ষণে অবশ্য এক ঘন্টার বেশিই হয়ে গেছে। বুঝতে পারছিলাম না ট্রেইলেই আছি, না কি বেরিয়ে গিয়েছি। বৃষ্টি মাথায় লাউয়াছড়া ট্রেক করার মিশনটা ঠিক ইম্পসিবল ছিলো না, আবার আমাদের জন্য সেটা অ্যাকমপ্লিশ করাও সম্ভব ছিলো না। তাই মিশনটা আপাতত............... হাফ পসিবল !!!

বেত ফল - এখনও কাচা, তবে এদের কাটায় আমাদের অবস্থা খারাপ


জঙ্গল এখানে খুবই ঘন

হেটে পৌছালাম রেললাইনের ধারে। লাউয়াছড়া জঙ্গল কেটে তিন টুকরো করেছে এরকম দু’টি রেললাইন। এখানেই কোথায় যেন ১৯৫৫ সালে শ্যুট করা হয়েছিলো জুলভারনের ক্ল্যাসিক মুভি - অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটটি ডেইজ। সঠিক লোকেশন কোথায় তা জানা ছিলো না। এখানে মিনিট দশেক বসে আবার আধা ঘন্টার ট্রেইলটা ধরে হাটা শুরু করলাম। এখানকার সবকিছুই কৃত্রিম, নার্সারি - রাবার বাগান বাশবাগান আর লেবুবাগান। মিনিট দশেক পরই দেখি শেষ মাথায় চলে এসেছি............ কি হলো বুঝলাম না। ঘন্টা দুই লাউয়াছড়ায় ঘোরাঘুরি করে এক জোক ছাড়া দ্বিতীয় কোন প্রাণী চোখে পড়লো না, আমাদের এই আক্ষেপ দূর করতেই যেন পাইন গাছের মাথা থেকে আবির্ভূত হলেন কিছু বানর............। হঠাত দূর থেকে গম্ভীর কিছু ডাক শোনা গেলো, সেটা মায়া হরিণ না কাকার হরিণের ডাক (??!!!) সেটা ভাবতে না ভাবতেই একটু সামনে একটা গোয়াল ঘর দেখা গেল। গরু দেখে এতো বিরক্ত আর কখনও লাগে নি !!!

রেল লাইন চলে গেছে বহুদূর............


যাত্রা শেষ............ ফেরার পথ ধরি

সব কিছু শেষ করে বেরিয়ে আসলাম গেটে, প্রায় আড়াই ঘন্টা পর। ওখানে শমশেরনগর থেকে শ্রীমঙ্গলগামী চা বাগানের ছোট ছোট পিকআপগুলো ফেরত যায়। তারই একটা থামিয়ে জনপ্রতি দশ টাকায় ফেরত আসলাম শ্রীমঙ্গল। ভেজা রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে ড্রাইভার বেটা গাড়ী চালাচ্ছিলো না, স্রেফ উড়াচ্ছিলো। স্কিড করে কিনা এই ভয়ে ভয়ে পৌছে গেলাম আমাদের পরের স্টপ - বিটিআরআই ক্যাম্পাসে। শ্রীমঙ্গলের বড় বড় সবগুলো চা বাগান এখান থেকেই শুরু।

ভেজা রাস্তায় গতি - দ্য স্পীডে চলছে গাড়ী

একটা ছোট্ট ঘটনা দিয়ে শেষ করি। আমাদের রিজার্ভ গাড়ী ছিলো না, কি করব ভাবছি এমন সময় ঘ্যাচ করে একটা হাইয়েস মাইক্রোবাস থামলো গেটে। দুদ্দাড় করে তিন তরুণী দুই তরুণ নামলো। লাউয়াছড়া গেটের সামনে নানান পোজে ছবি তোলা হলো, গাড়ীর ভিতরে সম্ভবত তাদের গার্জিয়ানরা বসে, মুগ্ধ হয়ে দেখছিলেন তাদের সন্তানদের। নানারকম ছবি তুলেটুলে অবশেষে সাই করে দরজা লাগিয়ে মাইক্রোবাস আবার চলে গেলো। নিশ্চয়ই তারা ঢাকায় বা সিলেটে ফিরে বন্ধুদের বলবেন, লাউয়াছড়া থেকে ঘুরে এসছি, দেখ দেখ ছবি !

কি চমৎকার বন ভ্রমণ, তাই না !!!! ;);)

দেখতে পারেন এটাও - ঝুম বর্ষায় মাধবকুন্ড হয়ে পরীকুন্ড - পরীরা যেখানে স্নান করে !!! (ছবি ব্লগ)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×