somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারত মন্থন - গুজরাত পর্ব ১

৩১ শে মে, ২০১২ বিকাল ৪:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারত মন্থন - কোলকাতা পর্ব (একটি ট্র্যাভেল গাইডও বটে !!!) Click This Link

নেহায়েত ভালো কিছু মুট কম্পিটিশন এখানে হয়, তা না হলে বাংলাদেশ থেকে ট্যুরিস্ট হিসেবে গুজরাত এবং এর শহরগুলোতে আসবার কোন অ্যাপারেন্ট কারণ নেই, যদি না.........

যদি না কোন বিশেষ উদ্দেশ্য না থাকে। ভিসা নিতে গিয়ে আমাদের তিনজনকেই এই প্রশ্নটার জবাব দিতে হয়েছিলো - গুজরাতে কি, কে আছে, কেন যাবো ? সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হোক বা নরেন্দ্র মোদীর এলাকা হোক, ট্যুরিস্টরা খুব কমই ওখানে যান। তবে এটা ঠিক, আহমেদাবাদ শহরটা একদমই আলাদা, অন্য সব শহরের চেয়ে। নিরামিষ খাবার কারণেই হোক বা গান্ধীজির কারনেই হোক, এ শহরের মানুষগুলো খুবই বন্ধুবৎসল আর হাসিখুশি। ইনফ্যাক্ট, চার-পাচ দিন ওখানে থেকে আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিলো এই শহরে কিভাবে দাঙ্গা হওয়া সম্ভব!!!

গান্ধী আশ্রমে আবক্ষ মূর্তি

হাওড়া থেকে আমাদের ট্রেন সময় মতই ছেড়ে দিল। ৩৬ ঘন্টার জার্নি, ট্রেনে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্যই ছিলো সাধারণ ভারতীয়দের সাথে মেশার সুযোগ পাওয়া। কিন্তু আমাদের থ্রি টিয়ার কম্পারটমেন্টে সহযাত্রীদের দেখে একটু দমে গেলাম, একটি পরিবার......... বুড়োবুড়ি আর মা-বাচ্চা, আর একটা চ্যাংড়া ছেলে। চ্যাংড়া দেখি উঠেই সিটের তলায় তার স্যুটকেস রেখে একটা চেইন বেধে তালা মেরে দিলো। আমাদের কাছে জিনিসটা একদমই নতুন। জিজ্ঞাস করলাম এটা কি খুবই দরকার? (এসি কম্পারটমেন্টেগুলো এমনিতেই লকড থাকে)। বলল, এসি কামরা মে তো কোই জরুরত নেহি !!! মনে মনে বলি, জরুরত নেহি তো তুমি হালায় বান্ধলা ক্যান !!!! ;)

ট্রেন ছাড়লো, আর জানা গেলো আমাদের সাথের পরিবারটা খাস গুজরাতি। এদের লাইফস্টাইল সম্পর্কে জানার ব্যাপক আগ্রহ। তাই কতক্ষণ পরই যখন সিটের তলা থেকে একটা অদ্ভুত কাঠের বাক্স (লোকমান ভাই এটার নাম দিসিলেন জাদুর বাক্স) টেনে বের করলো, আমি আপার বাঙ্ক থেকে উকি দিলাম। বাক্স খুলতেই দেখলাম টমেটো, তেলের বোতল টাইপের কিছু হাবিজাবি আর বিশ্বাস করবেন না, চানাচুর !!! (বেসন বা এই জাতীয় কুড়মুড়ে জিনিস গুজরাতিদের কেন এতো প্রিয় আল্লাহই জানেন) সারাটা জার্নিতে এদের ট্রেনের কিছু খেতে দেখি নাই, আর একদিনে গড়ে আট থেকে দশবার এই জাদুর বাক্সের কেরামতি দেখা গেছে। এমনকি সুধীর দা (সেই চ্যাংড়া, যার সাথে আমাদের দুর্দান্ত বন্ধুত্ব হয়ে যায়) নিজেও এদের ফুড হ্যাবিটসে অবাক। উড়িশ্যার ছেলে সুধীর পান্ডে, রিলায়েন্সের ইঞ্জিনিয়ার পোস্টিং গুজরাতেই।

লোকমান ভাই - "চ্যাংড়া" সুধীর দা - সারোয়ার ভাই

একে একে উড়িষ্যা, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ছাড়িয়ে গুজরাতে ঢুকল ট্রেন। সারা রাত আর দিন ল্যাপটপে মুভি, সুধীর দা’র সাথে তুমুল আড্ডা (বিষয়বস্তু অবশ্যই ১৮+, গুজরাতি আন্টি আর আপু দেখলাম অন্য কোথাও সরে গেলো) শেষ করে নেমে পড়লাম আহমেদাবাদ। স্টেশন থেকে বেরোতে আবার চেকপোস্ট। ‘আপ কাহা সে আয়া !’ বাংলাদেশ। ‘হুম, বৈদেশি নাগরিক !!’ ব্যাগের চেকিংটা আরো একটু কড়া হল। মুট কোর্ট কমিটির পক্ষে আমাদের পিক আপ করলো আদিত্য।

আহমেদাবাদ শহরটা দুই ভাগে বিভক্ত - ওল্ড পার্ট আর নতুন শহর, মাঝখানটায় সবরামতী নদী। পুরোন অংশটা মুসলিম প্রধাণ, যথারীতি ঘিঞ্জি আর ভাঙ্গাচুরা টাইপের। পাচ টনি বিশাল অশোক লেল্যান্ডের পাশাপাশি যখন দেখি উট-টানা গাড়ীও মালপত্র নিয়ে হেলেদুলে চলছে হাইওয়ে ধরে, তখন দারুণ লাগছিলো। আমরা তো আর শহরের এই ব্যবধান জানি না, টাটা সাফারি জীপটা আমাদের নিয়ে একেবেকে এইসব এলাকার মধ্য দিয়ে যখন যাচ্ছিলো, তখন ঢাকাইয়া গৌরবে আমার ভাব দেখে কে............ এ কোন শহর হইল !!! তবে নদীটা পার হবার পর থেকেই মোটামুটি আমি ধরা, দুর্দান্ত ইনফ্রাস্ট্রাকচার। আমি প্রেম করি গাড়ীর সাথে, তাই মার্সিডিজ বা বিএমডব্লিউ পর্যন্ত সহ্য করলাম, কিন্তু অডি’র শোরুম আর রাস্তায় ডিসপ্লে করা সারি সারি ব্রান্ড নিউ অডি দেখে আমার মাথা পুরা শেষ। এই জিনিস ঢাকায় নাই !!! নির্মা ভার্সিটির ক্যাম্পাসে গিয়ে ওদের হলে না উঠা পর্যন্ত মাথা ঠান্ডা হলো না :P

সবরামতী নদী

মুট কম্পিটিশন চলাকালীন বের হওয়ার কথা ভাবতেও পারিনাই, তাই প্রোগ্রাম শেষ করে আমরা বের হয়ে গেলাম। আহমেদাবাদ শহরে দেখার মত জিনিস খুব অল্প। প্রথমেই গান্ধী আশ্রম। সবরামতী নদীর তীরে ছায়াঘেরা এই আশ্রমে মহাত্না গান্ধী ছিলেন বহুদিন, অসহযোগ আন্দোলনের জন্মও হয়েছিলো এই আশ্রমে। গান্ধীজির নিজের ব্যবহ্রত চরকা দেখে মনে পড়ল স্বদেশী আন্দোলনের কথাও। শান্ত নিস্তরঙ্গ নদীর পাশের চৌচালা একটি ঘর থেকেই শুরু হয়েছিলো ব্রিটিশ রাজ বিতাড়নের নীলনকশা............ ভাবতেই অবাক লাগে। গান্ধী মিউজিয়ামটা পাশেই। সেখানে গান্ধীজির নোয়াখালিতে অবস্থানের কিছু রেলিকস দেখে অদ্ভুত আনন্দ পেয়েছিলাম।

গান্ধী আশ্রম - এখানেই বাস করতেন মহাত্না গান্ধী

এরপর সিদি সায়িইদের মসজিদ। পুরো পাথরের এই মসজিদটার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এক ধরণের গাছের ডিজাইন করা পাথরের জাল......... যার পুরোটাই এক টুকরো পাথর খুদে বের করা। এই জিনিস উপমহাদেশে আর কোথাও নেই।

এই ডিজাইনটা এক টুকরো পাথর থেকে বানানো

সিদি সায়িইদের মসজিদ থেকে এরপর খাস পুরনো আহমেদাবাদ শহর। পথে পড়ল আহমেদাবাদ ক্রিকেট স্বর্গ - সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল স্টেডিয়াম। পাশ কাটিয়ে কিছুদূর এগোলে তিন দরওয়াজা নামের একটা প্রাচীন স্ট্রাকচার, তার মধ্য দিয়ে সরু ভীড়ের রাস্তা। অনেকটা আমাদের ঢাকা গেটের মতই তবে আরো গর্জিয়াস এবং......... নোংরা! পুরো এলাকাটা ঢাকার গুলিস্তানের মত, কোন ডিফারেন্স নাই। একটা ছোট গেটের সামনে এসে অটো ড্রাইভার আমাদের নামালো। চারপাশে বিশাল বিশাল হাড়ি নিয়ে দোকান দিয়ে আছে লোকজন......... বিরিয়ানির মন উদাস করা সুবাস মনে করে দিলো এই শহরের মুসলমান জনগোষ্টীর কথা। নির্মা ক্যাম্পাসে গত পাচ দিনের ডাল-ভাত-আলু চচ্চড়ি খাওয়া (যদিও ওদের মেন্যুতে ছিলো সবচেয়ে দামি ভেজ ডিশগুলো - পনির মাসালা, আলু গোভি, ডাল দু’তিন রকম কিন্তু আমাদের কাছে ওগুলো স্রেফ আলু চচ্চড়ি আর কচুপোড়া !!!) আমাদের পেট চুইচুই করছে ওদিকে ঢু মারার জন্য, কিন্তু সাইট সিয়িং আগে।

সরু দরজা, ভিতরে কোন সুবিধজনক জিনিস আছে বলে ভরসা হয় না। যা হোক, ঢুকে গেলাম, আর সাথে সাথে চক্ষু চড়কগাছ।

আগামী পর্বে সমাপ্য.....................


গান্ধীজির খাস কামরা


তিনটি জ্ঞানী বানর, যাদের মূলমন্ত্র - Speak No Evil - See No Evil - Hear No Evil


সিদি সায়িইদের পাথুরে মসজিদ - এখনো নামায হয়
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১০:৪৮
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×