বাঙালির গোড়ায়ই যদি গলদ থেকে যায়, তাহলে একুশ শুধু সাদা শাড়ি আর কাল পাড়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।
আসুন কয়েকটা সমস্যার আগে সমাধান করে নিই।
১. আপনি কি কাপড় পড়েন নাকি পরেন?
পরলে ঠিক আছে। কিন্তু “পড়লে”তো ভাই আমার দুটো কথা আছে। আপনার কাপড় পড়া বিদ্যাটা আমাকে একটু শিখিয়ে দিতে হবে যে! কারণ, আমার মা-বাপ আমাকে শুধু বই পড়া শিখিয়েছে! আমার নানীজানের কাছে কখনো কখনো পানি পড়া জাতীয় শব্দও শুনেছি। বৃষ্টিও পড়ে; কখনো টুপটাপ পড়ে, আর টিনের চালে তো বেশ সশব্দেই পড়ে। আরও কতরকম পড়া হয়! প্রেমে পড়া, জলে পড়া, অসুখে পড়া, কাদায় পড়া।
এই দুইরকম ‘পড়া’তেই -অর্থাৎ, পাঠ এবং পতন অর্থে যদি আপনি পড়েন তবে অনুগ্রহ করে ‘ড়’ সহযোগে পড়বেন। কেমন?
আমার সাধারণ বুদ্ধিতে বলে, কাপড়কে পড়া যায় না। সেটা ফ্যাশন ডিজাইনার বা টেক্সটাইল ইঞ্জিনীয়ারদের পক্ষেও সম্ভব নয়। তারা বড়জোড় কাপড় সম্বন্ধে পড়েন। কাপড়কে পড়ে ফেলা বা কাপড়ের ভূত ভবিষ্যৎ পড়ে ফেলা তাদের পক্ষেও সম্ভব নয়।
২. আরো একটা সমস্যা দেখছি ইদানীং। রহিম, করিম, অন্তু, বিন্তু, তন্তু-এরা কেউই আর ঘুমে থেকে ওঠে না। এরা সবাই ঘুম থেকে “উঠে”-
হ্যাঁ, তারপর? ঘুম থেকে উঠে তারা কী করে? দাঁত মাজে, খায়, না আড়মোড়া ভাঙ্গে? উঠে তারা কিছু তো করে? কী করে?
বোঝা গেল না? বেশ, বুঝিয়ে বলি। “উঠে” একটি অসমাপিকা ক্রিয়া। “উঠে” বললে আপনার বক্তব্যটা সম্পূর্ণ হবে না।
যেমন: ১.সে ঘুম থেকে উঠে…
২. আমি এই চিঠিটা লিখে…
৩. আমি এই কাজটা করে…
৪. আমি কফি বানিয়ে..
এই প্রতিটা বাক্য শুনেই আপনার মনে প্রশ্ন জাগবে- তারপর? কারণ আপনি আরো কিছু শোনার প্রত্যাশা করছেন ওই ‘লিখে”, ‘করে’, ‘বানিয়ে’ এবং ‘উঠে’শব্দগুলোর কারণে। আসুন, বাক্যগুলো শেষ করি। প্রথমটি হতে পারে- সে ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজে। আপনি চাইলে বলেতে পারেন সে ঘুম থেকে উঠে গান গায়। সুযোগ যখন পেয়েছেন, যা খুশি তাকে দিয়ে করিয়ে নিন। ব্যাকরণে ভুল না হলেই হল। বাকিগুলো আর বললাম না, আপনারা করে নিন না! দেখা যাক, কে কত সৃষ্টিশীল হতে পারে বাক্য গঠণে।
ওহ হ্যাঁ, যদি একটা ক্রিয়া বা কাজ দিয়েই শেষ করে দিতে চান তাহলে বলবেন- সে ঘুম থেকে ওঠে, আমি এই চিঠিটা লিখি। আমি এই কাজটি করি। আমি কফি বানাই।
৩. যখন কারো জন্য কাঁদবেন বা কাউকে খুঁজবেন, কিংবা কোথাও হাঁটবেন তখন চন্দ্রবিন্দু সহযোগে করবেন, কেমন? কাজগুলো জোর পাবে।
হ্যাঁ বলার সময়ও চন্দ্রবিন্দু সহযোগে বলবেন। লিখবেনও তাই।
ভাল কথা, আমি এই পোস্টটা পণ্ডিতি ফলানোর জন্য লিখি নি। আমি ব্যাকরণবিদ নই। আমারও অনেক বানান নিয়ে এখনো অনেক সংশয় জাগে, ভুল হয়। কিন্তু এই তিনটি জিনিস বাঙ্গালী হিসেবে আমাদের সবার জানা জরুরি। তাই, শেয়ার করলাম।
আমার বেয়াড়া কীবোর্ডে অভ্র সফ্টওয়্যারে বেশ কয়টি কী ‘ইউনিবিজয়’ মোডে কাজ করে না। যেমন চন্দ্রবিন্দু, র-ফলা, ৎ। লেখার সময় কম্পিউটার স্ক্রীণে যুক্তাক্ষরগুলো সব ভাঙ্গা দেখায়। কিন্তু অভ্র ফনেটিক দিয়ে টাইপ করে আমার পোষায় না। তাই, প্রথম বার এক দফা লিখে নিয়ে আবারো কয়েক দফায় ফিরে ফিরে আসি মোবাইল দিয়ে অন্য মোডে সেই জানা বানানগুলো শুধরে দিতে।
এত কষ্ট কেন করি? যা খুশি লিখলেই তো হয়? বানানে আর কী আসে যায়? কী আর বলব! আজকে যেন কী দিন?
নরেন বিশ্বাস বলেছিলেন,"এই ভাষা তোমার মা। আজ থেকে প্রতিজ্ঞা কর, তোমার ভাষাকে তুমি বিকৃত করবে না, বিবর্ণ করবে না, বিকলাঙ্গ করবে না।"
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:০৯