কোথায় যেন সমাজবিজ্ঞানীর একটি দুর্দান্ত সংজ্ঞা পড়িয়াছিলাম-"সমাজবিজ্ঞানী হইল সেই ব্যক্তি যিনি কোন অপরাধের পেছনে একমাত্র অপরাধী ব্যতীত অন্য সকলের অপরাধ দেখিতে পান।"
ধর্ষণ বিষয়ে মানুষের যুক্তিগুলো দেখিলে কেন জানি এই সংজ্ঞাটি মনে পড়িয়া যায়।
এ্ইবার মূল প্রসঙ্গে আসি।নিজের নারী পরিচয়ের মুখে লাথি মারিয়া পৃথিবীর তাবৎ ধর্ষক এবং ধর্ষকামীর পায়ের নিচের মাটিকে শক্তিশালী করিবার জন্য আশা মীর্জাকে অভিনন্দন। তাহার অভিনব বক্তব্য থেকে আমি কিছু সিদ্ধান্তে পৌছাইলাম:
১. পুরুষ নিতান্তই আত্মনিয়ন্ত্রণহীন জন্তুবিশেষ। তাহার বিবেকবুদ্ধি, ধর্ম-অধর্মবোধ বলিয়া কিচ্ছু নাই। নারীকে একা পাইলেই তাহাকে ধরিয়া ধর্ষণ করা পুরুষের পক্ষে সবচাইতে স্বাভাবিক কাজ। উহাই পৌরুষের সর্বাপেক্ষা স্বত:স্ফূর্ত প্রকাশ।
২. নারী দেখিলেই যেহেতু পুরুষের ঈমান বিপন্ন হইয়া পড়ে, অতএব নারীকে ধরিয়া বস্তাবন্দী কর, নয়তো আটকাইয়া রাখ।বিষয়টি এইরূপ, জিহ্বা থাকিলেই তোমার সন্তান মিথ্যা বলিতে পারে, অতএব, তাহাকে সুশিক্ষা দেওয়ার বৃথা চেষ্টা না করিয়া তাহার জিহ্বা কাটিয়া দাও। দেশে অপরাধীর সংখ্যা বাড়িয়া গিয়াছে, তাই সাধারণ মানুষকে ধরিয়া জেলে পোরো। তবেই সকলে নিরাপদে থাকিবে।
৩. নারী কোন কর্মী হইতে পারে না, তাহার কোন কাজ থাকিতে পারে না, কর্তব্য থাকিতে পারে না। তাহার দুইটি মাত্র পরিচয়- প্রথমত সে একটি অতি কাঙ্ক্ষিত খাদ্যবস্তু যাহাকে দেখিলেই খাইতে মন চায়। দ্বিতীয়ত, সে এমন একটি প্রজনন যন্ত্র যার মাধ্যমে আরো কিছু ভবিষ্যৎ ধর্ষক এবং প্রজনন যন্ত্র উৎপাদন করা সম্ভব। ইহা ছাড়া নারীর আর কোন দায়িত্ব নাই।
এইবার তাহার এবং তাহার সমমনাদের কাছে আমার কয়েকটি নালায়েক প্রশ্ন:
১. ৪-৭ বছর বয়সী যেসব মেয়েরা ধর্ষিত হইতেছে, তাহাদের জন্য একটা যথাযথ ড্রেসকোড এবং জনসম্মুখে বাহির হইবার একটি নিরাপদ সময়ের উল্লেখ করিয়া দিন যাহাতে তাহারা বেচারা আত্মনিয়ন্ত্রণহীন অসহায় ধোয়া তুলসী পাতা পুরুষগুলোর চরিত্রবিচ্যুতির কারণ না হয়।
২. মাদ্রাসায় যেসব পুরুষ শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হইয়া থাকে, তাহারা কী ধরণের উত্তেজক পোশাক পরিধান করে, সে বিষয়ে আমি সবিশেষ কৌতুহলী।
******
"নারীবাদী" তকমা আটা মানুষদের প্রতি আমার কোনকালেই বিশেষ সম্মান ছিল না। আমার সেই পূর্বধারণা ঠিকই ছিল দেখছি।(বিশেষ করে একজন নারী নেত্রীর সাথে ্কজন ভণ্ড অশিক্ষিত হুজুরের কোনই প্রভেদ যখন দেখতে পাচ্ছি না।) নারীকে সম্মান করতে নারীবাদী হবার দরকার নেই, ভিতরে একটু মনুষ্যত্ব থাকলেই চলে।
আমি অনেক পুরুষকে জানি, যারা বিবেকচালিত, শুধুই প্রবৃত্তিতাড়িত নন; যারা ধ্রুপদী, 'ত্রিপদী' নন।এইসব তথাকথিত হুজুর বা হুজরানীর কথা শুনে সেই শুভবুদ্ধির মানুষগুলোর অসম্মান করতে আমি কোনদিনই চাই না।নারী পুরুষ নির্বিশেষে, জয় হোক ঐশ্বরিক মনুষ্যত্বের।