তো ভাবলাম ব্লগে খবরটা জানাই।
বইটা প্রকাশ করবে- আদর্শ/ প্রচ্ছদ করছেন- মামুন হোসাইন। বইটা আগামী সপ্তায় বাজারে আসবে।
যদি নিয়মিত আপডেট পাইতে চান- Click This Link
উপনাসের একটা ছোট অংশ-
পরকীয়ার মতো জ্বর
ঝিলকীর জ্বর এসেছে আজ অনেক দিন পর। মাঝে মাঝে জ্বর তার ভালো লাগে। মনে হয় কোনো অস্তিত্ব যেন ভর করেছে তারে। ভাবায়ে তুলবে, হাঁফায়ে তুলবে, জীবনে একটা ফুরসত এনে দেবে। কাঁথা মুড়িয়ে দিয়ে, হাঁটু গুটিয়ে হি হি করে কাঁপবে সে। ঢেউয়ের মতো জ্বর আছড়ে পড়বে শরীরে, বকবক করবে আনমনে। কেমন হলুদ বিবর্ণ হয়ে আসবে সকালের আকাশ। কাকের কা কা জ্বর এমন বিচ্ছিরি ঠেকবে। জানালা দিয়ে দেখা আকাশে সে চাতক চেয়ে থাকবে। গনগনে চোখ, চোখের কোনা, পোড়া ঠোঁট, শুকনো গলায় এক পসলা বাতাস জুড়ায়ে দেবে ক্ষণিকের জন্য। সেই বাতাসে জ্বর বাড়বে আরো, তবু বাতাসটা তার ভালো লাগবে। খুব বৃষ্টি হোক চাইবে সে মনে মনে। ভাদ্রের দুপুরের ভেড়া-ভেড়া মেঘগুলা চরে চরে বেড়ায় কেমন। তাদের দিকে তাকায়ে কেমন কিশোরী হয়ে উঠবে ঝিলকী। জ্বর না আসলে তো এসব আবেগ জমে না।
মুস্তাফিজকে তার ফোন দেয়ার কথা কিন্তু দেয় না। তার মনেও থাকেন না কখনো, মনে আসলে আলসেমি জাগে। থানা থেকে ফেরার পরই জ্বরটা বাড়ল। ওই লাশ দেখতে যাওয়ার পরই জ্বরটা আসল মনে হয়। সেখান থেকে ফিরতে ফিরতে বিকাল। মুস্তাফিজের লগে ছিল কিছুক্ষণ। লোকটা মনে হয় আপসেট এই মৃত্যুতে। কোনো কারণ আছে হয়তো। আজকে আরো আলাপ করবে বলতেছিল। কিন্তু জ্বর বেড়ে যাওয়ায় ডিসিশন নিতে পারতেছে না ঝিলকী সে কি করবে। রাতে খুব যন্ত্রণা হইছে মাথায়। জ্বরটা যেন নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পায়া গোটা শরীরের দখল নিছে। আর দখল মানেই সে স্বৈরাচার চালাইছে। মাথার ভেতর, ঘুমের মধ্যে একটা সোনালি আলোর একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল রাতভর। আর অন্য কোনো আলোর অস্তিত্ব তাতে গায়েব হয়ে গিয়েছিল। মানে ছায়ার অবয়বে কিছু কিছু ফিগার দেখা গেলেও তারা স্বভাবে যেন সোনালি ছিল। সোনালি রঙটার মধ্যে কেমন নির্দয় একটা বিষয় আছে। তারা নিরেট। অথবা স্বাতন্ত্র্যহীন।
এই রকম স্বপ্নের মধ্যেই কয়েকটা মানুষ যেনবা তারা নিজেদের মাথাব্যথার যন্ত্রণায় মাথাটা হাতে নিয়ে ঘোরে আর ঝিলকীকে তাদের মাথাও ধরিয়ে দিতে চায়। তাদের মধ্যে যেনবা মরা লোকটা ছিল। সে আমি মরি নাই, মরি নাই বলতে বলতে ঝিলকীর দিকে ছুটে আসে অথচ কেউ ঝিলকীকে ছুঁতে পারে না। এই খেলা সারারাত চলে। গোল্লাছুট খেলার মতো, ঝিলকী বুড়ি হয়ে বসে থাকে।
ক্ষুধা পেয়েছে খুব। কিছু একটা খেতে হবে। হাত-মুখ ধুয়ে, দাঁত মেজে খাওয়ার উপায় খোঁজে ঝিলকী। হয় বাইরে গিয়ে খাইতে হবে, নয় তো বাইরের খাবার ঘরে এনে খাইতে হবে। ঝিলকীর তো তেমন ঘর নাই, সে বাইরেই থাকে। ঘর থাকলে আজ এমন জ্বরের ঘোরে তার মাথায় কেউ হাত বুলায়ে দিত, খাইয়ে দিত। ঘরের মানুষ সে আর নাই। ফলে বাইরে যাওয়া মানে আসলে দরজার এপাশ-ওপাশ। ঘরের আবদার ঝিলকীর মন বেচইন করে তোলে মাঝে মাঝে।
আজিজের সামনেটা আজ বেশ ফাঁকা। কারণ কি, আজ কি শুক্কুরবার! শুক্কুরবার ছাড়া আজিজের সামনেটা এমন ফাঁকা থাকে না। অন্তত জুম্মার আগ পর্যন্ত। তারপর ঘুম-লালায় মাখামাখি দুপুর পার করে বিকালের দিকে হয়তো আবার জমে ওঠে এই পাড়া। কিন্তু আজ শনিবারেও কেমন ফাঁকা লাগে। কয়টা বাজে? দশটা! এখন তো ফাঁকা থাকার কথা না। কে জানে? এখানে এখন একসঙ্গে অনেক কিছু কেনা যায়। দেশের আসলে অনেক উন্নতি হইছে, যেখানেই যাবেন একসঙ্গে অনেক কিছু কিনতে পারবেন। আগে যেমন সকালের নাশতা মানে পরোটা আর ভাজি ছিল, এখন সেখানে কত কিছু। দামের কোনো ঠিক নাই। রাতে রাতে দাম পাল্টায়। ঝিলকী নিজেও কখন কোন দরে বেচা হবে তার ঠিক নাই। সে নিজের দাম ঠিক করতে পারে না। প্রথম দিকে এটা খুব সমস্যা করত, তার দাম কত? এটা সে কিছুতেই ঠিক করতে পারত না। পরে বুঝল রেট আছে। রেট মতো চলতে হবে। রেট অনুযায়ী কিছুদিন বেচাকেনা চলল। শীলা তারে এই চাকরি নিয়া দিছিল। পয়লাবার সিলেটের এক চা বাগানে যাওয়া পড়ছিল তার । সঙ্গে আরো দুই কাস্টমার এবং লগে আরেক মাইয়া। সে জানতই না। শীলার লগে কন্ট্র্র্রাক্ট হইছিল কোম্পানির। শীলা এভাবে ওরে এই পথে নামানো সহজ কইরা দিছিল। এরপর আর কিছু ভাবতে হয় নাই। নাদিম এই বিষয়ক ভাবাভাবির সকল নীতি, যুক্তি ভঙ্গুর করে দিছিল। একটা ঘটনার দরকার ছিল সেসব ঝুরঝুর কইরা ঝইরা পড়ার, সিলেটে ফলে মোটেও কষ্ট লাগল না, অপমান লাগল না। কনডমের নিরাপত্তার আশ্বাসে সে নিজেরে বাজারি করে তুলছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০১