উৎসর্গ- সলিমুল্লাহ খান
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ আমার দেশ নামের পত্রিকার লিড নিউজ ছিল 'শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধবণি'। একই দিনে পিয়াস করিম টেলিভিশনে কইলেন- গণজমায়েতে ফ্যাসিবাদ সুপ্ত থাকে। প্রগতিশীলরা দুই জনরেই 'জামায়াতি' বইলা নিন্দা-মন্দ করতে শুরু করলেন। কিন্তু আসলে ঘটনাটা কি ঘটছে? এরা কই পাইলেন ফ্যাসিবাদ শব্দটা?
পিয়াস এবং আমার দেশ যে অর্থে শাহবাগে ফ্যাসিবাদ দেখতে পাইলেন সেটা ট্রটস্কি ১৯৩০ সালে বইলা গেছিলেন। লিও ট্রটস্কি বলতে চাইছিলেন, পেটি বুর্জোয়া বা যাদের আমরা মধ্যবিত্ত বলি তাদের জমায়েত ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে পারে কিছু শর্ত সাপেক্ষে। এর একটা হইল ক্ষমতাসীনদের বা বুর্জোয়াদের ব্যাকআপ যখন থাকে। বুর্জোয়া গণতন্ত্র যখন সংকটে থাকে তখন রিফর্মিস্টরা একটা আন্দোলন পাকাইতে চায়। সেই আন্দোলন আবার বুর্জোয়ারাই দখল করে নেয়, কারণ পেটিরা বিপ্লবে ভীত এবং তারা লুম্পেন দ্বারা প্রভাবিত। মোটামুটি ট্রটস্কি ইতালিয়ান ফ্যাসিজম বা জার্মান ফ্যাসিজমরে এভাবে দেখাইতে চাইছেন। রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিজম এবং আন্দোলনে ফ্যাসিবাদের সম্ভাবনা দুইটা কিন্তু ভিন্ন বিষয়। একটা মুসোলিনি আরেকটা ট্রটস্কি দিয়া আলাদা কইরা বুঝার ব্যাপার আছে ইতিহাসে।
এখন এই যে আমার দেশ বা পিয়াস করিম এরা বাংলার মাটিতে ট্রটস্কি আছর করাইলেন কেমনে? উভয়ে যার যার জায়গা থিকা আঁচ করলেন বিষয়টা, নাকি তাদের গোপন যোগাযোগ ছিল? আর সেই অদৃশ্য যোগাযোগের ভুতের নাম ট্রটস্কি। সত্যি পৃথিবীর কোথায় কোথায় আর কার কার মনে যে ট্রটস্কি লুকায়া আছেন?
পিয়াস করিম ট্রটস্কাইট ছিলেন। ন্যাশনালিজম বিচারেও। ট্রটস্কি যখন সোভিয়েত আগ্রাসনে কাবু পোল্যান্ড বা ইত্যকার দেশাদি নিয়া লিখতেছিলেন, তখনও ন্যাশনালিজম বিষয়ে 'একূল-ওকূল' দুই-কূল আলাপ করছিলেন। বলছিলেন পোল্যান্ডবাসীর এখন নিজেদের নেশন্যাল হওয়া যেমন দরকার তেমনি ফ্যাসিবাদ আবার যেন সেখানে না হাজির হয় সে বিষয়েও তকলিফ থাকা দরকার।
ট্রটস্কি আন্দোলন থিকা ফ্যাসিবাদ তাড়াইতে এতে নানা মত, পক্ষ ও দাবির উপস্থিতি হাজির রাখতে বলছিলেন। পিয়াসও তো এসব বলতেছিলেন টিভিগুলাতে। এমনকি আমার দেশও। তারা সেদিনের নিউজের শুরুটা করছে এভাবে-'রাজধানীর শাহবাগের মহাসমাবেশে গতকাল ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শোনা গেছে।... ভিন্নমত দলন-দমনের হুঙ্কার দিয়েছেন।'
শাহবাগের লোকজন ট্রটস্কি হয় পড়েন নাই, নইলে মনে নাই তাদের। যে কারণে ট্রটস্কিরেও তাদের কাছে মনে হইছে লোকটা বুঝি জামায়াত। হায় তার লাশ যদি শহীদ মিনারে যাইত, তাইলে?
জামায়াত যদি কাউরে এমন ফ্যাসিস্ট বলার বিদ্যা অর্জন করতে পারত তাইলে তো হইছিলই। বা হেফাজত যদি নাস্তিকদের ফাঁসি না চায়া ফ্যাসিবাদ হটাইতে রাস্তায় নামত তাইলে প্রগতিশীলদের কি অবস্থা হইত! শোকর যে সেটা ঘটে নাই। হেফাজত ট্রটস্কি পড়ে নাই। জামায়াতও পড়ে নাই।
পড়ছেন পিয়াস করিম আর হয়তো মাহমুদুর রহমান। বা অন্য কোনো পড়া লোক আমার দেশেরে কান পড়া দিছে। কিন্তু বাংলার আকাশে ট্রটস্কি আমদানী হইল কেমনে? পিয়াস ছাড়া কি আরও কেউ আছেন?