somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিছক বাঙালরাই কি মুক্তিযুদ্ধ করেছিল?

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঔপনিবেশিকতার ঔরসে গড়ে ওঠা ‘বাঙালি’ একটি অসাম্প্রদায়িক ধারণা নয়। ঘোরতর ভাবে সাম্প্রদায়িক ধারণা এবং জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিবাদের গুরুত্বপূর্ণ ক্যাটাগরি। কিন্তু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এই পরিচয় ধারণ করেই জনগণ শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, বাংলাদেশের জনগণের দিক থেকে এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা- ফরহাদ মজহার


বাংলাদেশে একাত্তরে সংগঠিত মুক্তিযুদ্ধের একাট্টা, একরৈখিক অথবা একদেশদর্শী কোনো বয়ান থাকতে পারে না। ইতিহাসের নানা হাজির-নাজির থিকা জানা এবং বোঝা যায় যে গোটা জাতি সুনির্দিষ্ট চিহ্ন, পরিচয় নিজেদের মধ্যে স্থাপন করতে সক্ষম হয় নাই। শত্রু মোকাবিলার সাধারণ উপায় হিসাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। স্বাধীন হবে কিনা দেশ সে বিষয়েও পরিষ্কার ধারণ সবার মধ্যে তৈরি হয় নাই। অত্যাচরি মুসলমানের বিপক্ষে ন্যায় ও ইনসাফ পালনকারী মুসলমানদের শাসনই মূলত বেশিরভাগ মানুষের কাম্য ছিল। একই সঙ্গে ইসলামের নামে জুলুম না করা এবং ভালো থাকতে দেয়ার, তবিয়ত ভালো এমন নেতার শাসনে মানুষ থাকতে চাইছে।

বাঙালিত্বের প্রশ্ন ইতিহাসের সেই সময়ে যেমন এখনও তেমন শহুরে শিক্ষিত মানুষের আত্মপরিচয় অনুসন্ধানের উপায়। একাত্তরকালীন তারা যেহেতু শিক্ষিত (মানে সেক্যুলার থাকতে চায়) সেহেতু নিজেদের মুসলমান দাবি করে কিভাবে? তারা যেহেতু পাকিস্তানের সঙ্গে থেকে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে সক্ষম না ফলে পাকিস্তানের বিপরীতে বাঙালি পরিচয় নির্মাণ হইতে থাকে। অন্য কোনো পরিচয় তো আর বিরাজ করে না। তাছাড়া এই পরিচয়ের মধ্য দিয়া তারা নিজেদের জাত তৈরি করতও সক্ষম হন, সমাজে একটা মর্যাদাবান পরিচয়ের নোকতা হইল বাঙালি থাকা। তুমি যদি বাঙাল না হও তাইলে তুমি আমাদের দদলভুক্ত না। মধ্যবিত্তের তৈরি করা এই সেক্যুলার পরিচয় মূলত শহর এবং গ্রামের ভেদ রচনা করছে, মজদুর এবং মালিকের এক অভেদে লুকায়া ফলতে চাইছে। মালিক বাঙালি হেতু শ্রমিকও বাঙালি হয়ে ওঠার তাড়নায় তাকে মান্য করতে বাধ্য থাকে। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে মালিকরাই অধিক বাঙলি। শ্রমিকদের মধ্যে বাঙালিত্বের বহুতর ঘাটতি আজও রয়ে গেছে।
ফলে মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রশ্ন বাঙালিত্বের ছিল না। মূল প্রশ্নই ছিল পাকিস্তানি শাসনের উৎখাত এবং ইনসাফ কায়েম। ফরহাদ মজহার এই সময়ে বাঙালি পরিচয়কে সাম্প্রদায়িক এবং নখরযুক্ত এক পরিচয় হিসাবে দাঁড় করাতে চান শহুরে শক্ষিত মহলের সঙ্গে বোঝাপড়ার পাঠচক্র হিসাবে। গোটা জাতির সম্পর্ক সেখানে অনুপস্থিত। বাঙালি পরিচয়ের এই সংঘাত ধর্মীয় ভাগাভাগি হিসাবে আর টিকে নাই। বরং এটা শ্রেণী বাঙালের প্রশ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। হেফাজতে ইসলামের ভাইয়েদের বাঙাল বিষয়ক সমস্যাই গোড়র সমস্যা না। তাদের সমস্যা এবং বাঙালি পরিচয়কে প্রধান করে বসবাস করা শিক্ষিতদের সমস্যার বৈষয়কি মিল আছে। উভয়েই নিজেদের পক্ষের শাসন কায়েম করতে বা বলবৎ রাখতে চায়। জাতি পরিচয়রে এই প্রশ্ন এখন আর প্রধাণ সমস্যা হিসেবে টিকে নাই। অপরাপর জাতিগোষ্ঠিও বাংলাদেশে বেশ সোচ্চার ও সরব, তাদের সংকটগুলোও সমান মর্যাদার দাবি রাখে। ফলে নিছক বাঙাল পরিচয়ের মধ্যেই দেশের গণতান্ত্রিক চর্চা আটকে নাই। দেশের গণতান্ত্রিক সম্ভাবানও আসল বাঙালি খোঁজার মধ্যে আর নিহিত নাই। মার্ক্সবাদি রাজনীতির প্রাথমিক শিক্ষাই হলো শ্রেনী প্রশ্ন মোকাবিলা করা। সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজত নিজেদের শ্রেনীলক্ষণসমতে হাজির হয়েছে। যদিও সঠিক রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দিশার অভাবে তারা নিজেদের বক্তব্য যথাযথ হাজির করতে পারে নাই। তবে তাদের লড়াইয়ের এসেন্স গরিষ্ঠ মানুষের মর্যাদা নিশ্চিত করা। বাঙাল প্রশ্নের মধ্য দিয়া তার সমাধান আসবে না। বরং তা বৈরি মনোভাবের পরিবেশ তৈরি করে ফেলতে পারে, পুরাতন কাসুন্দিও ঘাঁটতে হবে এই প্রশ্ন মোকাবিলার জন্য। এতে বাঙালিত্বের ঠিকাদারেরা সুবিধা পাবেন হয়তো। ফরহাদ মজহার সেই ঠিকাদারি তো নিতেই চান। আমারও আপত্তি নাই তবে এই প্রশ্নকে গণতন্ত্র কায়েমের মূল প্রশ্ন সাব্যস্ত করা যাবে না। মূল প্রশ্ন মজুরির, ন্যায়বিচারের, অধিকারের সমতার।


Click This Link
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×