somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি রাজনৈতিক জ্বর- গল্প

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(পত্রিকার লোকেরা অশ্লীল গল্প ছাপতে চায় না)

মোমেন নিজের গোয়ায় আগুনগরম কিছুর অনুপ্রবেশ টের পায়। এমনতিইে তার শরীর গরম হয়ে আছে। নাক দিয়ে ভাপ যায়। মাথায় খানকতট কাঁচা ইট বসিয়ে দিলেই দেখা যেত কেমন লাল হয়ে উঠেছে সেগুলা। পিঠের ওপর কিছু চাল ছড়িয়ে দিলেই হয়েছে, তাতে খই ফোটা শুরু হবে। বুকে হাপর উঠছে। কানজোড়া রেলের ইঞ্জিন যেন, ভোঁ-ভোঁ করেই চলেছে। সব মিলায়ে মোমেন আস্ত একটা লু হাওয়া হয়ে শুয়ে আছে। এর মধ্যেই তার গোয়ায় গরম কিছুর অনুভূতি তারে গরম সম্পর্কেই সজাগ করে তোলে। গরমের উপরও গরম আছে, তা সে টের পায়। কি ঢুকেছে সে পরে, আগে এতক্ষণ গরম শরীরের অবশ ভাবটা তার দূর হতে শুরু করে। ভেতরে-বাইরে গরমভাবের ফেরে পড়ে সে বে-হুঁশ পড়েছিল। এত গরম গায়েও হুঁশ টিকে থাকে। হুঁশও কি গরম হয়ে উঠেছিল। কিন্তু গোটা শরীরের হুঁশের বাসা কোথায়। তা-ই ভাবছিল, হুঁশ খুঁজতে-খুঁজতে নিজেই হারায়ে গিয়ছিল, আবার নিজেরে ফিরে পেলে হুঁশের সন্ধানে নেমেছিল। নিজেরে ফিরে পাওয়ার জন্য সে এখন এখানে কেমন আর কিভাবে আছে, আর ছিলই বা কোথায়, এসেছেই বা কি করে, গরম হয়ে উঠল কখন, গরম হতে শুরু করেছিল কখন- এসব ভাবতে থাকে। ফলে সে নিজেরে খুঁজে পায়। নিজেরে খুঁজে পেতে গেলে হুঁশ যায় হারায়ে। গরমে গলে গিয়ে হুঁশ তারে তালাক দিয়ে চলে গেছে কি। হুঁশ যার নাই সে বিধবা। বিধবা মোমেন গরম গায়ে কোনো শক্তি পায় না। হুঁশ থাকে না বলে কি করতে হবে এখন সেই বোধটাও আসে না। কি করলে সে আবারও গায়ের তাপ কমাতে পারবে তাও বুঝতে পারে না। এখানেই পড়ে থাকবে না উঠে অন্য কোথাও যাবে, তার ক্ষিধা পেয়েছে, খাবে কিছু, কলা-রুটি-বন-পুরি, ইতি-আদি যা কিছু খাওয়ার যোগ্য বলে সে জানে, তেমন কিছু কি খাবে। খাওয়ার কথা ভাবতে গেলে ক্ষুধা যায় হারায়ে। ক্ষুধা ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় সে আবার রত হয় যখন, তখনই সব অন্ধকার হয়ে আসে। অন্ধকারেও তার গা গরমই থাকে আর সে গরম গায়ে অন্ধকার বেড়েই চলে। নিজেও অন্ধ হয়ে যায়, অন্ধ হয়ে গেলে চোখ মেলার চেষ্টা করে, আর কি আশ্চর্য চোখ মেললে বা মেলার চেষ্টা করলে সে দেখতে পায় সে হাঁটছে। হাঁ, হেঁটেই সে এখানে এসেছে। কিন্তু সে তো এখন নয়, এখন সে শুয়ে আছে। কুত্তারা যেমন শুয়ে থাকে। কিন্তু সে নিজে চোখে দেখে যে সে হাঁটতেছে। হাঁটার সময়টাও তার মনে পড়ে যায়। আজ সারাদিন সে হেঁটেছে, গতকালও হেঁটেছে। হাঁটতে-হাঁটতে যেখানে দেখল যে একটা বাজারে আগুন লেগেছে, সে আগুন যেন এক বিশাল ডানা প্রজাপতি, যার পাখনার শেষ প্রান্তে ছাই রঙ, ক্রমশ সে ভেতরের দিকে হলুদ, কোথাও কমলা আর শরীরের সঙ্গে সেই ডানা যখন যুক্ত হইছে, তখন তা লাল। আর সেই প্রজাপতির চোখ জ্বলে, তাও লাল। লালচে একটা প্রজাপতির ডানায় বাতাস লাগলে, আকাশময় ধোঁয়া উড়ে। প্রজাপতিটা বসে আছে এক টিনের চালের উপর। মোমেন সেখানে গিয়ে দাঁড়াতেই প্রজাপতিটা লাল চোখে তার দিকে যখন একবার তাকায়েছিল না! তখন, তখনই তার গরম লাগে প্রথম। এরপরও সে হেঁটেছে অনেক দূর। কিন্তু সেই প্রজাপতি যে তার দিকে তাকায়েছিল, সেই তাকানোটা অনেকক্ষণ তার চোখে-চোখে ফিরেছিল। এখন শুয়ে থেকে সে অন্ধকারে হারায়ে গেলে সেই আগুন-চোখ তার না-দেখা চোখে দৃশ্যমান হয়। দাউ-দাউ প্রজাপতিটা দোকানের চাল জ্বালায়ে দিতেছিল, প্রজাপতিটার শরীরের তাপে টিনগুলা কেমন শুকনা পাতার মতো মড়-মড় ভাইঙ্গে পড়ে। কোথাও বসতে পারে না প্রজাপতিটা, সরে সরে বসার নতুন জায়গা খোঁজে। যেখানেই যায়, সেখানেই সব পুড়ে যায়। আগুনের কতো কষ্ট, কোথাও তার বসার জায়গা হয় না। সে একটা প্রজাপতি, তাতে কি, তার ঠাঁই হয় না। ফলে আগুন নিজেই তার আত্মারে হত্যা করে। আর সে যারে ছোঁয়, সে ছাই হয়ে যায়। মোমেনরে ছুঁতে পারে নাই। সে চলে এসেছে। জোরে জোরে হেঁটে দাউদকান্দি পার হয়ে এসেছে। কিন্তু একবার যে তাকিয়ে ছিল, তাতেই মোমেনের জ্বর চলে এসেছে। নইলে জ্বরটা বেড়েছে, জ্বর তার আগে থেকেই ছিল। মোমেনের গা মনে হয় এমন গরমই ছিল যে, সে যখন প্রজাপতিটার কাছে যায়, তার গায়ের আঁচে সেই প্রজাপতি আরও তেঁতে ওঠে। তাতেই সে বিরক্ত চোখে মোমেনের দিকে তাকায়। আর মোমেন ভয় পায়। ভয় পেয়ে জোরে হাঁটা দেয়। হাঁটতে-হাঁটতে এখন যেখানে শুয়ে আছে আরকি, সেখানে চলে আসে। সেখানে কি হয় সে কিছু দেখতে পায় না। যারা বর্তমান দেখে না, তারা কি অন্ধ। তাইলে তারা যে অতীত দেখে। সেইটা কি দেখা না। জ্বরের ঘোরে এমন সব নিয়ে ভাবতে-ভাবতে মোমেন ক্ষুধাও হারায়ে ফেলে, চোখের দেখাও হারায়ে ফেলে। গরমের তাপে আসলে সব উবে যায়। শরীর ছেড়ে চলে যায়। শুনতে পাইত এই কিছুক্ষণ আগে। এখন তাও পায় না। মন্ত্রীর গাড়ি যাইতেছিল তখন, সে সাইরেন শুনেছিল। মন্ত্রীরা সশব্দ গমন করে। মোমেনেরও মুত চাপছে তখন। সে যদি মুইতা দিত, নির্ঘাত মন্ত্রীর গাড়ির উপর গিয়া সেইটা পড়ত। ফলে অর্ধেক পথেই সে মুত থামায় দেয়, নিজের হাতের কোষে মুত জমা করে আশে-পাশে ছিটিয়ে দেয়। মন্ত্রীর গাড়ি চলে গেলে তারপর সে আবার মুততে বসে। সোডিয়ামের আলো আর গাড়ির আলো আর সাইনবোর্ডের আলো আর হাসপাতালের আলো আর দোকানের আলো আর প্রতিফলিত আলো আর মানুষের চোখে জোনাক-আলো তার চারপাশে বিচরণ করলেও মোমেন মুতের রঙ দেখতে পায় না। তাও সে ধরে নেয় এর রঙ হলুদ। এই ধরে নেয়াটা আসলে মোমেন ধরে না, অন্ধকার থেকেই বা অজ্ঞান থেকেই এমন একটা মত উঠে আসে যে, মুতের রঙ হলুদ। মুতা শেষ করে আগের জায়গায় যখন শুয়ে পড়ে তখন সে ভেবেছিল, অনেক বাঁচা বেঁচে গেছে। তাছাড়া সে যে ভদ্রতা দেখাইছে, তাতে নিজের বিষয়ে নিজের বিশ্বাস বাড়ে, তার জ্বর ভালো হয়ে যাবে এমনটাও মনে হয়। তারপর ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করে তারপর কাঁপুনি আসে তারপর মোমেন নিজেরে জড়ায়ে ধরে তারপর মোমেন অজ্ঞান হয়ে যায়। সেখানে সে কিছুই দেখে না, শোনে না, বুঝে না। এমনকি জ্ঞান ফিরে পাইলেও, মানে এই যে নিঃশ্বাস নিতে পারে সে, হাত পা নাড়াইতে পারে সে, অতীত দেখতে পারে সে, কি করছিল, কই আছে সব বুঝতে পারে সে- এতকিছু পারলে তারে জ্ঞানী কেন বলবে না লোকে। আলবাত বলবে। মোমেনরেও বলবে। তার গোয়ায় যে এখন গরম আর শক্ত কিছুর প্রবেশ ঘটেছে তাও তো সে বুঝতেছে। জ্ঞানীরা সব বুঝে। অজ্ঞান না হইলে জ্ঞানে ফেরা হইত না মোমেনের। জ্ঞানে ফিরলে একবার চোখ খুলে নিজের আশে-পাশেও সে তাকাইছিল। মনে হইছিল কেউ একজন তার সামনে দাঁড়ায়ে আছে, একটা লাঠি হাতে সে গুতা দিতেছে। তখন জ্ঞান আর অজ্ঞানের মাঝামাঝি কোথাও সে ছিল বলে আবছা লাগতেছিল চারপাশ। তারে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করেছিল বলে ভ্রম হইলেও সে কোনো কথার উত্তর দেয় নাই। বোল ফোটার মতো করে আঁহ-উঁহ করেছিল। আর মনে হয়েছিল যে লাঠির আগাটা তার শরীরে যখন ঘুরে বেড়াইতেছিল তখন লাঠিটা দুই পায়ের মাঝখানে বিচি আছে কি-না তা খুঁজতেছিল। তা মোমেনের আছে। বাপের কাল থেকেই আছে। লাঠিটা সেখানে এসে থেমে গেলে মোমেন আবারও কিছুই দেখতে পায় না। এতক্ষণ যারে ভেবেছিল মানুষ, পরে তারে কুত্তা বলে ভ্রম হইল। এতক্ষণ যারে ভেবেছিল অন্ধকার পরে তারেই দিন মনে হইল এতক্ষণ যারে ভেবেছিল সে নিজে পরে তারেই একটা লাশ মনে হইল। কুত্তার পাশেই সে দাঁড়ায়ে আছে। আজকেই দেখেছিল লাশটা। দাউদকান্দি তখনও কি সে পার হয়েছে। মনে হয় না। দাউদকান্দি এত সহজে পার হওয়া যায় না। সেখানে গুলি-খাওয়া লাশটার সাথে সে আর একটা কুত্তাই খালি দাঁড়ায়ে ছিল না। সে দাদীর কাছে যে গল্প শুনেছিল , জালিমদের গল্প। তেমন চেহারার কয়েকজনও লাশ ঘিরে দাঁড়ায়ে আছে। লাশের নাম আর সাকিন যা-ই হোক না কেন তারা বলে যে লাশটা তাদের। তাদের কারণেই সে লাশ। তারা এ বাবদে গল্পও শোনায়। আর মোমেন দেখে আরও কেউ-কেউ জীবনে লাশ অথবা গুলি-খাওয়া-লাশ দেখে নাই বলে গভীর মনোযোগে লাশ দেখতে থাকে। আর মানুষ কেমনে লাশ হয় বা মানুষ কেমনে গুলি খায় তা জানতে গভীর আগ্রহ নিয়ে কান খাড়া করে। কেবল কানের দিকে তাকাইলে মানুষের চেহারা পাল্টে যায়। চেহারার জায়গায় কান আর কানের জায়গায় চোখ-নাক থাকলে কেমন হইত। যাই হোক, জালিমরা গল্প বলে- লাশ-হওয়া লোকটা বজ্জাত আছে, সে খারাপ কাজ করেছিল,
: কি খারাপ কাজ
: সে নেশার ব্যবসা করত
: কিসের নেশা
: বাজে নেশা
: ও, ধুতুরার বিষ বেচত বুঝি
: আরও ভয়ানক নেশা আছে
: দেখতে কিরাম
: নেশার নির্দিষ্ট কোনো রং আর আকার নাই। আমাদের জানা মতে এমন কিছু লোক আছে যারা কথার-নেশা ফেরি করে। তাদের কথা শুনে কত লোক খারাপ হয়ে গেল।
: এ লোক কি নেশা বেচত ?
: গোল নেশা
: সেটা খালি কিরাম লাগে
: আমারা তো খাই নাই
: তালি বুঝলেন কেমনে
: আমাদের জানানো হয়েছে
: ও, তা লোকটার দেশ কোয়ানে?
: মুন্সিগঞ্জ
: এখানে এল কি করে ?
: অস্ত্র নিয়ে পালায়ে যেতেছিল
: তো সে আপনাগের গুলি করে নাই
: করেছে
: একটাও লাগে নাই গায়ে!
: না
গল্প এখানেই শেষ হয় যদিও, কিন্তু গুঞ্জন চলে। এমন লোকদের প্রথমে জালিম ভাবলেও পরে নিজেরেই নিজে গালি দেয় মোমেন। ছি, ভালো লোকগুলারে নিয়ে সে কি ভেবেছে। আর পুরা ঘটনাটা এই জ্বর-কাতর শরীরে মনে করার পর তার আবার ধন্দ জাগে। সে আসলে এমন কিছু কি দেখেছিল, নাকি শুনেছে। কোনো সিনেমার ঘটনা শুনেছে। এখন জ্বরের ঘোরে মনে হেেচ্ছ সে দেখেছে। এমন সিনেমা যেখানে কয়েকজন নায়ক আর একজন গুণ্ডা। নাহ, জ্বরটা বোধ হয় বাড়তেছে আরো। তা এতটা পথ মোমেন হাঁটতেছিল কেন। তার কি পকেটে পয়সা ছিল না? ছিল। তার কি বাসে বা ট্রেনে চড়া নিষেধ ছিল? না। তাইলে! কে জানে, মোমেনের তো জ্বর। সে হয়তো বাসে করে যাওয়ার পথেই এমন কিছু দেখেছিল। বা কেউ তারে বলেছিল। বা এখন তো আর এসব কথা জানার জন্য হাঁটতেও হয় না, বাসেও চড়তে হয় না। হয়তো মোমেন সিনেমাতেই দেখেছিল। আগুনও দেখেছিল। না হাঁটলেও যাওয়ার পথে দেখেছিল। যাওয়ার পথে যেতে-যেতে তার জ্বর বাড়তেছিল, জ্বর বাড়লে সে আর কোথাও যেতে পারতেছিল না, যার কারণে সে শুয়েই পড়েছে এখানে এসে। জ্ঞান হারায়, জ্ঞান হারালে অজ্ঞান হয়ে যায়। অজ্ঞান হয়ে গেলে সে এসব ঘটনা মনে করতে পারে। যা দেখত তা শুনে, যা শুনত বলে জেনেছিল তা দেখে। আর মনে করা কথার এত সত্য-মিথ্যা জানতে চাইলেও কি তার সত্য জবাব দেয়া সম্ভব? এখন তো আরও সম্ভব হয় না। নিজেরে দেখার জন্য মোমেন অজ্ঞানের তলা থেকে একটু-একটু ভেসে উঠতে থাকে, আর দেখে যে তার আশে-পাশে অন্ধকারেরা গায়ে চাদর দিয়ে বসে আছে, একটা-একটা করে অন্ধকার চাদর খুলে উঠে দাঁড়ালে, একটু-একটু করে রাত বাড়ে। এমন করে রাতের বাড়া দেখতে-দেখতে সে মনে করতে পারে যে সে জ্বরও দেখেছিল। তা বোধহয় তখন সে হেঁটে কি বাসে করেই মিঞারবাজারে এল মাত্র। তখনই তার পাশে একটা লোকের দেখা পায়। লোকটা একটা ছায়া, কাঁচা-মেঘের মতো রঙ। শ্যাওলার মতো চুল, মুখের ভিতর অন্ধকার, চোখের ভিতর কেতুর। সে তার ঠিক পাশেই দাড়ায়ে বলে-
: আমার নাম জ্বর
: হা, জব্বর?
: না জ্বর
: আ, মানে কি
: মানে আমি এখন আপনাতে ভর করব
: আ
: হ, আমার একটু ঢাকা যাওয়া দরকার
: আ
: হ, সেখানে কিছু লোকের শরীরে জ্বর আনা দরকার
কথা বলতে-বলতে জ্বরের, শরীর খসে যেতে থাকে আর নিজের শরীরে তার অনুপ্রেবেশ দেখতে থাকে মোমেন। প্রথমে পায়ের অংশ, তারপর হাতে, তারপর জ্বরটা যখন আর কোথাও দেখা গেল না, মোমেন বুঝল তার মাথা-ব্যাথা শুরু হয়েছে। এবং জ্বরের কথা স্মরণেই সে বুঝল যে সে ঢাকায় এসেছে। কাজের জন্য না কিসের জন্য। খাইতে পায় না বলে কাজ করবে, না দেখতে পায় না বলে দেখবে। অভাব পূরণের জায়গা হইল গিয়া ঢাকা। যে জন্যই হোক জন্য, সায়েদাবাদ আসতে না আসতেই তার পকেটে কিছু টাকা যদি তখন থেকে থাকে তা সে সেখানেই খুইয়ে এসেছে। পকেট মারা খাওয়া আর হোটেলে খাইতে গিয়া খরচ হইলেও, একই মানে দাঁড়ায়। এখন তো বটেই। টাকার যেহেতু জ্বর হয় না, ফলে সে জ্বর-নিরপেক্ষ থাকে। টাকার যেহেতু পকেট মারের ভয় নাই ফলে সে হোটেল মালিকের হাতেও নিরাপদ বোধ করে না। টাকা নিয়াও কিছুক্ষণ ভাবনা জাগে মোমেনের মনে। জ্বরের ঘোরে একবার মনে হয় যেন মোমেন নিজেরে টাকায় পাল্টে ফেলেছিল। রাতের অন্ধকারে কেউ তারে টাকা ঠাউরে তুলে নিতে গিয়ে সত্য বুঝল, তখন লোকটা বলেছিল- ছ্যা, মানুষ। বারডেমের ওভারব্রিজে তার জ্বরতপ্ত শরীর চিত হয়ে শুয়ে ছিল। এখানে এসেই সে প্রথম জ্ঞান হারায়। সঙ্গে আনা ব্যাগের মধ্যে কি ছিল সে মনে করতে পারে না। এখন সেই ব্যগটাও নাই। সব হারায়ে চিত হয়েই শুয়েছিল মোমেন। এর মধ্যেই সে তারে নিরীক্ষণ করতে আসা কাউরে দেখে থাকলেও, দেখে থাকতে পারে। জ্বরের পুকুরে ডুব দিয়ে সে চরাচর ভুলে গেছে। কি ঘটে যাচ্ছে তার শরীরে, বুঝে উঠতে পারে না। গোয়ায় কোনো কিছুর অনুপ্রবেশে তার দিশা হয়। প্রাথমিক যন্ত্রণা সয়ে এলে সে বুঝে উঠতে পারে তার কি হয়েছে। তারে উপুড় করে ফেলা হয়েছে। গোয়ার কাপড় নামিয়ে ফেলা হয়েছে। প্রথমে সেখানে একেটু ঠান্ডা বাতাসের অনুভূতিও এখন মনে করতে পারে। কোথায় যেন সে দেখেছিল, কোথায়? জ্বরের ঘোরে, স্বপ্নে, না কোথায় দেখেছিল- লোকেরা গোয়ার কাপড় তুলে মাথায় ঘোমটা দেয়। কোথায় দেখেছিল, বারে-বারে শরীর ঝাঁকুনিতেও তা মনে করতে পারে না। পলকে কথাটা মনে হলেও, গোয়ার বেথায় সে আর স্মরণে আসে না। এবার একটু একটু হুঁশ ফিরে অসতে থাকে মোমেনের। বেদনাতেই জ্ঞানের প্রথম অনুভূতি জাগে। তারপর শব্দ, তারপর গন্ধ। সবকিছু বুঝে উঠতে-উঠতে মোমেন নিজের শরীরের উপরে অন্য কাউরে অনূভব করে। তার ভারে মোমেনের দমবন্ধ দশা। মাথার নিচে নরম কিছু দেয়া হয়েছে। উঁহ, উঁহ একটা শব্দ আস্তে-আস্তে তার আশে-পাশের দৃশ্যসকল জীবন্ত করে তোলে। উঁহ উঁহ একটা শব্দ তার সামনে লম্বা ওভারব্রিেেজর আবছায়া মেঝে ফুটিয়ে তোলে। ঘনশ্বাসের শব্দ ভাসতে থাকে। কি ঘটেেছ বুঝে উঠতে দেরি হয় মোমেনের। হাত দুটো তার চেপে ধরে রেখেছে পিঠে-চাপা লোকটা। পা দুটো ছড়ানো। যন্ত্রণা মোমেনর সব ফিরায়ে আনে। শুনতেও পায় সে এখন। উঠে দাঁড়িয়েছে লোকটা, ঘাড় ঘুরিয়ে তারে দেখার চেষ্টা করে মোমেন।
: খানকির পোলা সমানে গোয়া মারা খাইতেছে, তাও রা করে না।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×