somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঠিকানা

১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"ঠিকানা আমার নোটবুকে আছে,
নোটবুক নেই কাছে।
তিন নাম্বার ভূতের গলি
এটুকুই মনে আছে"


হুমায়ুন আহমেদ স্যারের লেখা গানটা শুনতে শুনতে ফেসবুক ব্যাবহার করছি, হঠাৎ আমার খুব কাছের একজনের একটা শেয়ার করা পোষ্টে চোখ আটকে গেলো। লেখা, " মেয়েদের দু'টো ঠিকানা থাকে, একটি বাবার আরেকটি স্বামীর। মেয়েদের নিজস্ব কোন ঠিকানা নেই" আমি কিছু সময়ের জন্য বরফ হয়ে গেলাম, জমে গেলাম সময়ের ফ্রেমে। মেয়েটি কি খুব কষ্টে আছে তার বিবাহিত জীবনে, তার জীবনে ঝড়? তার দেয়াল জুড়ে কিছু Random হতাশা আর কাপড় কাঁচার শব্দ।অথচ তার নিষ্পাপ শিশুর মতো হাসি আর ছোট ছোট পাগলামী গেঁথে আছে আমার মস্তিস্কে। যতদুর জানি মেয়েটি বিয়ে করেছিলো সেচ্ছায় তবে যাকে সে ভালোবাসে অথবা যে তাকে ভালোবাসে এমন কাউকে নয়। মেয়েটি কি কোন মোহে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো? না বোধহয়, সবটুকু Randomness। কাল কি হবে তা 'হয়তো' শব্দের দ্বিধা আর যা হয়ে গেছে তার জন্য 'যদি' শব্দের আফসোস। যদি যাকে সে ভালোবাসে অথবা যে তাকে ভালোবাসে এমন কাউকে বিয়ে করতো, তাহলে গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো। এখানেও কিন্তু কোন চিরন্তন গ্যারান্টি নেই, আরো খারাপ ও তো হতে পারতো। হয়তো কিছু সময় পর মৃত বাল্ব ভেঙে যাবে, মেয়েটি ভালো থাকবে। যেখানে 'হয়তো' শব্দের আশা আছে, সেখানে 'যদি' নিয়ে আফসোস নিতান্তই অর্থহীন। মেয়েটি সুখী হোক। তবে তাকে একটা প্রশ্ন করা যায়, "আপনার কাছে কি কংক্রীটের জড় ঠিকানাটাই মুখ্য? আর ভালোবাসার জীবন্ত ঠিকানা নিতান্ত ফেলে আসা গোপাল ভাঁড়ের গল্প?"

আমার কি কোন ঠিকানা আছে? তথাকথিত ঠিকানা বললে, পৈতৃক সুত্রে এখন পর্যন্ত আমার নিজস্ব ৫ টা কংক্রীটের জড় ঠিকানা আছে। হয়তো আগামী দশকের মধ্য আরো কয়েকখানা বাড়বে। কিন্তু এ ঠিকানা আমার জীবন্ত নয়। আমার ঠিকানা কোথায় আমি জানি কিন্তু সে ঠিকানার ঠিকানা ভাষায় অনুবাদ করতে পারিনি, সিলেবাসে ছিলোনা! আমি আমার ঠিকানা কে তার ভাষায় অনুবাদ করে বোঝাতে পারিনি। আমার আর আমার ঠিকানার মাঝে বিশাল এক নিঃশব্দ। সদ্য হাইস্কুলে উঠেছি তখন, ভাঙা ভাঙা ইট বিছানো রাস্তায় এক কিশোরী কে তার ঠিকানা জিগ্যেস করেছিলাম। সে খুব যত্নে তার ঠিকানা লেখেছিলো আমার খয়েরী ডায়েরীতে। অনেকদিন যত্নে রেখেছিলাম ডায়েরীটা, তারপর হারিয়ে ফেলেছি। এই হারানো জিনিস গুলো হারিয়ে কোথায় যে যায়? তখন আমাদের দুজনের মাথায় ছাতা ছিলো বৃষ্টির ফোঁটা আমাদের গায়ে পড়েনি। মেয়েটি আমার ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিষ্টে আছে, কখনো কোনো চ্যাট হয়নি আমাদের। প্রয়োজন পড়েনি। আমাদের কি সৌভাগ্য!

খুব ছোটবেলায় আমি শহরে থাকতাম, তখন আমাদের শুধু গ্রামের বাড়ী ছিলো তাই ভাড়া থাকতাম অস্থায়ী ঠিকানায়, ৫ বছরে ঠিকানা বদল করেছি ৪ বার। একটা বাসা আমার খুব পছন্দের ছিলো, পাশেই খ্রিষ্টানদের গোরস্থান। আমার ভীষন ভূতের ভয়। ওখানেই আমার প্রথম ছড়া কে ছুটি জানিয়ে প্রেমের কবিতা লেখা অথচ ক্লাশ ফোরে এসবের কি বা বুঝতাম? ক্লাশ সিক্সে আমি অসম্ভব সুন্দরী সোনালী চুলের ম্যাডামের প্রেমে পড়েছিলাম। আমার সামনাসামনি দেখা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সুন্দরী মানবী।একদিন হঠাৎ করে তিনি হারালেন। কতো ভালো বন্ধু ছিলাম আমরা। খুব সম্ভবত ছাত্রদের মাঝে একমাত্র আমার সাথে তিনি অতিরিক্ত সময় কাটাতেন। আমাদের সখ্যতা গড়ে উঠেছিলো পেপার কাটিং এর সংগ্রহ লেনদেনের মধ্য দিয়ে।আমাদের ঠিকানা লেনদেন হয়নি। আমি তার চেহারা ভুলে গেছি অথচ আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মানবী তিনি। নামটাও মনে নেই যে, ফেসবুকে খুঁজবো। আমি তার ঠিকানা খুজিনি কখনো, শুধু চেয়েছি তার চেহারাটা মনে পড়ুক। কোন একদিন ভীড়ের মাঝে তার সঙ্গে দেখা হবে, তখন না হয় ঠিকানার লেনদেন হবে। না হলেও কি বা আসে যায়? মানুষের ঠিকানা পাল্টাতে থাকে, কখন কে কোথায় থাকে, কবে আছে কবে নেই। অথবা দরজায় তালা ঝোলে, লেখা থাকে, "এখানে কেউ থাকেনা।কোনদিন ছিলোনা,"

আমি মাঝে মাঝে কলেজের সামনে কিছু মানুষকে দেখতাম, যারা তাদের ঠিকানায় যেতে পারছেন না অর্থের অভাবে। তাদের ঠিকানা নাকি অন্য কোন দূরের শহর। কোন কারনে তারা এ শহরে এসেছিলো, কোনভাবে তাদের পকেটমার হয়েছে। আমি তাদের ঠিকানায় ফেরার আকুতি ফেলে দিতে পারতাম না, হাত খরচের পয়সা থেকে তাদের ঠিকানায় পৌছানোর খরচ দিতাম। কোন এক অদ্ভুত কারনে প্রত্যেক সপ্তাহেই তারা ঠিকানা হারিয়ে আবার এ শহরে এসে অবিকল পূর্ববর্তী বিপদে পড়তো আর কন্ঠে সেই ঠিকানায় ফেরার আকুতি। তারা কি সময়ের ফাঁদে আটকে গিয়েছিলো? নাকি তাদের ঠিকানা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলো? এ শহরে আসলে তাদের মনে হতো দূরের শহর তার ঠিকানা আর ঐ শহরে গেলে মনে হতো ফেলা আসা শহরটাই তাদের ঠিকানা। তাই রোজ সপ্তাহ তাদের ভুল ঠিকানায় দেখা যেতো, যদিও হয়তো তার কিছু আগেই ভেবে নিয়েছিলো এটাই তাদের আসল ঠিকানা। অনেকেই তো আছেন তাদের মতো ঠিকানা নিয়ে দ্বিধায় থাকা মানুষ কিন্তু তাদের হয়তো আর্থিক সমস্যা নেই। তাদের করুণ রান্নাঘর।

কিছু ঠিকানা আমার না, তবুও আমার মনে হয় ক্ষণিকের জন্য। আবার কিছু ঠিকানা আমার ব্যাক্তিগত কিন্তু ওখানে আমার অধিকার নেই। আমি শুয়ে থাকি অন্য বিছানায়। আমার অস্থায়ী ঠিকানা বদলেছে বহুবার আর স্থায়ী ঠিকানার ঠিকানাটা অনুবাদ করতে পারিনি। সিলিং ফ্যানের ব্লেড কাটতে থাকে আমার দীর্ঘশ্বাস। একদিন আমি ঠিকানার ঠিকানা অনুবাদ করবো ভাষায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১:১৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×