প্রতি বছরের প্রতিটা দিন ই কোন কোন না কোন নিম্নমানের বিষয়ে নিয়ে আমরা বিতর্ক আর সমালোচনায় মেতে উঠি । একটু চিন্তা করেদেখলাম বছরের কিছু দিন পর পর আমরা কমন কয়েকটা বিষয় নিয়েও কমন কিছু বিতর্ক করি ।ভুল কোন রেফারেন্স ফ্রেম কে আদর্শ ধরে ভুল বিতর্ক চলতেই থাকে। । যার আসলেও কোনদরকার আদৌ ছিল কিনা সেটা ভাববার বিষয়। এছড়াও নিজেদের বাজে চিন্তাভাবনা গুলোকেও সার্টিফিকেটদিয়ে দেয়ার অপচেষ্টাও করে ফেলি প্রচুর । একটা ভুল করে যখন নিজেই নিজেকে উৎসাহ দেই, তখন আসলে অন্য কেউ আমাকে/আপনাকে ভাল করতে পারবে না ।
আসেন অল্প একটু পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করে মুল আলোচনায় যাই , =D
পদার্থবিজ্ঞানেরখুবইগুরত্বপূর্ণএকটি টার্ম “Reference Frame” ! প্রথমেই গুগলেসার্চদিলেযাআসে, It’s a set ofcriteria in relation to which judgements can be made.
আমরা আমাদের জীবনের প্রয়োজনে ব্যপক পরিমান ব্যবহার করি এইতত্ত্ব। ব্যক্তিজীবনে একটি খুবই কমন উদাহরণ দিয়ে শুরু করি, ধরেণ কাউকে ফোনে বললেন , এইত অমুক দোকানের এর সামনে আছি, আসতে দশ মিনিট লাগবে । এখানে ‘ অমুক দোকান ‘ একটি Frame of Reference । এখন যাকে বলা হল ,সে যদি উক্ত দোকানটা চিনে তাইলে সে পুর্ণ বিশ্বাস করে নিবে হ্যা , ১০ মিনিট ই লাগার কথা।
প্রতিটা ঘটনাই আসলে রেফারেন্স ফ্রেমের উপর নির্ভরশীল, একটু আলোচনায় গেলেই বিষয় টি ক্লিয়ারহয়ে যাবে।
১।বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বেই এই ব্যাপারটা একই ,যেখানে মানুষ থাকবে সেখানে ধর্মের ব্যাপারটা ও থাকবে।ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক, যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে ! আপনার ধর্মে বিশ্বাস থাকুক আর না থাকুক পুরো বিষয় টি ই আপনার পার্সোনাল। তারপরে ও কেন যেন অনেকেই ভাবে, সেই ই পণ্ডিত, বাকিরা ভুল করতেছে।এবং যেহেতু সেই সঠিক বাকি সবাই ভুল তাই নিজেকে ReferenceFrame ধরে যখন সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করে, তখনও সমস্যা হয়না, যখন জোর করে কিছু করতে চায়, তখনই সমস্যাটা বাধে , হত্যার মত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে তারা !এটা একটি উগ্রতার উদাহরণ ! একটাই তাদের পরিচয় তারা উগ্র তারা সমাজের জন্যক্ষতিকর , তারা নিজেরা যেই ধর্মের বা যেই গোত্রেরই দাবী করুক না কেন তারা আসলে সন্ত্রাসী ! সন্ত্রাসীর কোন ধর্ম নাই , কোন গোত্র নাই।
আর সন্ত্রাসির এই কার্যকলাপকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, এর সাথে জড়িত না থাকা সত্যেও আপনি যখন কোন ধর্ম বা গোষ্ঠিকে কথায় বা কাজে আক্রমন করছেন , আপনার শিক্ষা নিয়ে আমি প্রশ্ন তুললাম !
২। ” ইভটিজিং যে ব্যাপারটা , এর জন্যে মেয়েরা দায়ী , তারা বোরকা পড়লেই তো আর কেউ ইভটিজিং করতনা !” ব্যাপারটা খুব সাবলীল ভাবে অনেকেই বলে ফেলে।হয়তো আবেগে বলে , হয়তো আত্নপক্ষসমর্থন করার জন্য বলে । যেজন্যেই বলুক না কেন , তাকে যদি জিজ্ঞেস করেন কিন্তু টিজিং টা করে কে ? ” তারা যদি ভাল হইত তাইলেই কি আমরা আর করতাম ? ” আহা ! তাও দিন শেষে নিজের ভাল হওয়ার কোন ইচ্ছা নাই । যে যার মতন চলবে এইটাই স্বাভাবিক । এইটুকু বুঝতে পারাটা আসলে খুব অঠিন কিছু নয় ।
এছাড়াও যে কারও কোন দুর্বলতা নিয়ে ও টিজিং হতে পারে । এটা আসলে কত খানি বাজে তা আসলে বলে শেষ করতে পারবে না কেউ।ব্যক্তিগতভাবে অনেকের সাথে মেশার কারনে অনেক ধরণের টিজিং আসলে দেখছি , আর আমিও মসজিদের ইমাম নই । আর এটা খুবই স্বাভাবিক সবাই সব কিছুতেই ভাল হবে না।আমি যেটাতে ভাল তাকে সেটাতে দাম দিলামই না সহযোগিতাও করলাম না , পরবর্তিতে সে যেটাতে ভাল আমার সাথে একই আচরণ করল ! এভাবেই কি চলতে থাকবে ? নাহ ! পৃথিবী এ ভাবে চলতে পারে না। বরং পরস্পরের শ্রদ্ধাবোধ আর সহযোগিতামূলক আচরণেই আমরা আমাদেরকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যেতে পারি।
মাঝে মাঝে আলোচনার মধ্যে বলে ফেলা হয় , “আরে ওই কালো / খাটোমেয়েটা / ছেলেটা আছে না ” কিংবা ফিজিক্যাল ডিজাবিলিটি দিয়ে পরিচয় দেয়া, আরও অনেক কিছু ভুলবশত আমরা করে ফেলি। আমি এটা বিশ্বাস করি , কেউ হয়তোবা ইচ্ছা করে এটি করেনা , কিন্তু এটি একটি বদঅভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে ! এটি থেকে আমাদের যত দ্রুত সম্ভব বের হয়ে আসা উচিত।আপনার / আমার ভুলের বাবদ অভ্যাসের জন্য , অন্য কেউ কষ্ট পাবে , তাতো হতে পারে না।
৩। আরেকটা গুরত্বপূর্ণ ব্যাপার আছে , এই ব্যাপারে আলোকপাত না করলেই নয়। অমুক তো ঘুষ খাইতেছে , আমি খাইলেই কি ? সবাই তো তো টেন্ডারবাজীতে দূর্ণীতি করতেছে ইআমি করলেই বাকি।মানে অন্যে যেহেতু খারাপ কাজ করতেছেই , তাইলে আমিও করি।আপনি এগুলো বলে নিজের মন কে আপাত শান্তি দিতে পারবেন, হয়তোবা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আরেকবার প্রশ্ন করেনতো, আসলেই কি আমি কার ক্ষতি করছি ?? ওহ ! কারে কিবলি , আপনি তো আবারএ টা কেয়ার ই করেননা , হোক ক্ষতি আমার তো লাভ !
আপনি পরকালের কথা বিশ্বাস করেন আর নাই করেন , প্রকৃতির শাস্তি থেকে যে রেহাইপাচ্ছেন না , এইটা সিউড় থাইকেন ! আর সবচেয়ে বড় কথা মানবতা বলেও তো একটা কথা আছে।
আসলে, আমরা প্রতিদিনই যদি নিজেদের গতদিনের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারি, তাহলেই হয়তোবা সোনার বাংলাদেশ খুব বেশি দূরে নয়।
নতুন বছরটা হয়তো আমরা এগুলো থেকে দূরে থাকতেপারব , এই প্রত্যাশায় ……… । সকল কে নতুন বছরের শুভেচ্ছা ।
মদন মোহন তর্কালঙ্কার এর কবিতাটা দিয়েই শেষ করি , এই হোক আমাদের পণ।
“সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি
সারা দিন আমি যেন ভাল হয়ে চলি “