মা কথাটির মর্মকথাটি কখনোই অনুধাবন করিনি কিংবা অনুধাবন করার প্রইয়োজন মনে করিনি,সবসময় মনে হয়েছে মা তো আছেই যাকে ডাকলেই কাছে পাব।স্বভাবতই ছোট সন্তান হওয়ার দরুন মায়ের প্রতি টান বাবার চেয়ে একটু বেশীই ছিল,টানটা প্রথম অনুভব করতে পারলাম যখন কলেজে পড়ার জন্য মাকে ছেড়ে চলে যেতে হল হোস্টেলে,মাকে ছেড়ে প্রথম বাইরে থাকা,প্রথমে ভাবছিলাম কতজনই তো মাকে ছেড়ে থাকে এ আবার এমন কি!কিন্তু রাত যখনি ঘনিয়ে আসতে লাগল মাকে ততই খুঁজতে লাগলাম,তখন মোবাইলও ছিলনা যে মাকে ফোন করে বলব মা আমি তোমাই ছাড়া থাকতে পারব না।রাতে আমায় থাকতে হল একা এক রুমে,আরো ভীষন মনে পড়তে লাগল মাকে,চোখের জল সংবরন করতে পারলাম না,সারা রাত......
পরের দিন বাবু(বাবা) ফোন করে আমার খোঁজ নিলেন,ফোন রাখার সময় বললেন,জানিস শুভ(আমার ডাক নাম)তোর মা কাল সারারাত ঘুমাইনি তোর চিন্তাই...বাবুকে বলতে পারলাম না আমিও সারারাত...
এভাবেই কেটে যেতে লাগল দিন ,কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে আসলাম,মার ছোট্র ছেলে হয়ে আর আদরে থাকা হল না,মা তুমি সবসময় বলতে বাইরে গেলে আমি আমার কাজ করতে পারব না,কিন্তু মা আমি আমার কাজগুলো এখন নিজে নিজেই করতে পারি,তুমি যেদিন প্রথম শুনেছিলে আমি আমার কাপড় ধুতে পাড়ি,কি অবাকই না হইয়েছিলে!
আমার বাসাই আসার কথা যখন শুনতে,তখন থেকেই চেষ্টা করতে আমার পছন্দের খাবারগুলা জমানোর,এমনকি বাবুকেও দিতে না খেতে,আমি আসলে সব খাওয়ানোর চেষ্টা করতে,ছোটবেলা থেকেই দেখেছি আমরা দুই ভাই যদি কখনো তোমার কানো খাবারের প্রশ্নংশা করতাম তুমি তোমার জন্য না রেখেই আমাদেরকে দিয়ে দিতে,আমরা যদি বলতাম মা তুমি কি ভাবে,তুমি তখন বলতে-ধুর এই খাবার আমার একটুও ভাল লাগেনা,অনেক খেয়েছি,তোরা খা... মা তোমার কি মনে হয় আমরা তোমার চালাকি বুঝতে পারতাম না,অবশ্যই বুঝতাম,তাইতো আমরা খাওয়া শেষ হইয়ে গেলে তারপর প্রশাংশা করতাম...
বাড়িতে আসার পর প্রতিবেশী কাকী বলত,শুভ তোর আসার কথা থাকলে তোর মার মাথা ঠিক থাকে না,সারাদিন পায়চারি করে আর তোর আসার পথ চেয়ে থাকে...
মা তোমার কি মনে পড়ে ছোটবেলায় সম্ভবত পাঁচ বছর বইয়সে(যখন আমরা নড়াইলে থাকতাম)তুমি আমাদের নিয়ে বাড়ীর পাশের চিত্রা নদীতে স্নান করতে যেতে,একদিন স্নান করতে করতে আমি নদীর স্রোতে অনেকদূর ভেসে গিয়েছিলাম,কেউ দেখতে পাই নাই,এক মহিলা হঠাৎ খেয়াল করল আমি অনেকদুরে তলিয়ে যাচ্ছি,কেউ যেতে সাহস পেল না(চিত্রাতে তখন জোয়ার ভাটা ছিল),তুমি চিতকার দিয়ে সাঁতার দিয়ে আমায় অর্ধমৃত অবস্থায় তুলে আনলে অনেক দূর থেকে,আমাকে এক নতুন জীবন দান করলে,জানি কৃতজ্ঞতা দিয়ে বা কোন কিছুর বিনিমইয়ে এ ঋন শোধ হবে না...জল থেকে তোলার পর আমেকে তুমি ভীষন জোড়ে আমায় একটা চড় মেরে কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরেছিলে...সব মনে আছে আমার মা...
এইতো গত সেমিষ্টারের পরীক্ষার মধ্যে আমার ভীষন অসুখ হইয়েছিল,তুমি শোনা মাত্রই সারা রাত জার্নি করে আমাক দেখতে চলে আসলে, অথচ তুমি নিজেই তখন অসুস্থ,ভোরে তোমাকে আর বাবুকে যখন দেখলাম,কি যে খুশি হয়েছিলাম তা বোঝাবার নই।
প্রত্যেক মা দিবসে তোমাই যখন ফোন করি তুমি কি যে খুশি হও...একবার মনে ছিলনা বলে তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলে...
তোমাকে নিয়ে লিখতে লিখতে যে কখন নইয়নজল কিবোর্ডে সিক্ত হয়েছে টেরই পেলাম না...জানি মায়ের ঋন শোধ করা কখনোই সম্ভব না,তাই মা তোমার জন্য থাকল এই মা দিবসে আমার হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা।