সাধারণ জ্ঞানঃ
Movie: The Ghazi Attack
Director: Sankalp Reddy
Cast: Kay Kay Menon, Rana Daggubati, Atul Kulkarni...
Genre: Action, Drama, History, War
Release: February 17,2017
IMDB : 7.8/10
এ সিনেমাকে বলা হচ্ছিলো, এ বছরের বলিউডের সবচেয়ে সেরা সিনেমা। কেন বলা হচ্ছিলো, এটা জানতেই মূলত সিনেমাটা দেখা।
সিনেমা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ওপরে ভিত্তি করে নির্মিত। আর প্রেক্ষাপটটাও আমাদের খুব পরিচিত, ১৯৭১ সাল, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধ যে শুধু আকাশপথে বা ময়দানে হয়নি, যুদ্ধ যে জলপথেও হয়েছিলো ভারত ও পাকিস্তানের দুই সাবমেরিনের মাঝে, এটা আমরা ক'জন জানি? এরকম অজানা এক ঘটনা নিয়েই এ সিনেমা "The Ghazi Attack."
১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তান আমাদের কাছ থেকে ভৌগোলিকভাবে এক অসুবিধাজনক অবস্থানে ছিলো। মানচিত্রের দিকে যদি আমরা তাকাই, আমাদের দেশের তিনদিকেই ভারতের সীমানা। এদিকে পাকিস্তানী সৈন্যদের যুদ্ধের শেষদিকে অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ কমে যাচ্ছে, তাদের অস্ত্রের যোগান দেয়া দরকার। কিন্তু আকাশপথে গেলে ইন্ডিয়ার রাডারে ধরা পড়ে যেতে হবে আর আকাশপথে খুব বেশি অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহও করা যাবে না। আর ভারতের রাস্তা ব্যবহার করে বাংলাদেশে সৈন্যদের কাছে অস্ত্রশস্ত্র পৌঁছোনোও অসম্ভব। তাহলে? রাস্তা একটাই খোলা। সমুদ্রপথ। পাকিস্তান রণতরীর মাধ্যমে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছোনো সম্ভব। কিন্তু সেখানেও এক গ্যাঁড়াকল। সমুদ্রপথে আছে ভারতের রনতরী INS Vikrant. সে একাই সব রনতরীকে আটকে দিতে পারে। এই INS Vikrant কে ডুবিয়ে দেয়ার জন্যে পাকিস্তান পাঠালো PNS Ghazi কে, তাদের দক্ষ নেভাল অফিসার রাজ্জাকসহ। তাদের লক্ষ্যঃ তারা ভাইজাগে আঘাত করবে। এদিকে ভারত একটা রেকি অপারেশন চালানোর জন্যে পাঠালো: S21 নামক আরেক সাবমেরিনকে। পাঠক মনে হয়, সিনেমার নামের সার্থকতা ধরে ফেলেছেন এখনই। "The Ghazi Attack" নামটাকে রিলেট করা যাচ্ছে এটুকু পড়েই। PNS Ghazi এর আক্রমণ এবং S21 এর পাল্টা আক্রমণের কাহিনীই এ সিনেমার উপজীব্য।
'অর্জুন ভার্মা' চরিত্রে রানা দাজ্ঞুবাতি, 'রনবিজয় সিং' চরিত্রে কে কে মেনন, 'দেবরাজ' চরিত্রে অতুল কুলকার্নি অসাধারণ অভিনয় করেছেন সিনেমাটিতে। তবে, ব্যক্তিগত মতামত, কে কে মেনন ছাপিয়ে গেছেন সবাইকে। বলিউড ওনাকে কতটা গুরুত্ব দেয় জানিনা, কিন্তু বলিউডের অন্যতম অসাধারণ অভিনেতা বলতে গেলে আমি অবশ্যই কে কে মেনন আর নওয়াজউদ্দীন সিদ্দিককে এগিয়ে রাখবো বাকি অনেকের চেয়ে।
সিনেমায় বাংলাদেশি মেয়ের চরিত্রে "তাপসী পান্নু" কে কেন আনা হয়েছে, বুঝলাম না। কোনো দরকারই ছিলোনা। আর বাংলাদেশি মেয়ে এত অনায়াস হিন্দি বলে কীভাবে, জানা হলোনা। আজকালের মেয়েরা হিন্দি টিভি সিরিয়াল দেখে দেখে নাহয় বিষয়টা আয়ত্তে এনেছে। কিন্তু ১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপটে বিষয়টা খানিকটা শ্রুতিকটু মনে হয়েছে। মজার ব্যাপার, বাংলা বলতে কষ্ট হচ্ছে তার, অথচ হিন্দি গড়গড় করে বলছেন। বিষয়টা বৈসাদৃশ্যপূর্ণ লেগেছে।
বিখ্যাত অভিনেতা (ব্যক্তিগতভাবে আমার প্রিয়) ওম পুরীর জীবনের সর্বশেষ সিনেমা "The Ghazi Attack." রিভিউ'র এ অংশে তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি রইলো। এ সিনেমায় তার ভূমিকা খুব বেশি ছিলোনা। উচ্চপদস্থ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা চরিত্রে অভিনয় করেছেন, প্রথমদিকের হাতে গোনা কয়েকটা সীনে ছিলেন, ডায়লগও বেশি পাননি।
সিনেমার শেষটা বেশ অতিনাটকীয় মনে হয়েছে। সিনেমা শেষে পরে উইকি ঘেঁটে জানলাম, মূলকাহিনী ও সিনেমার কাহিনীর কিছুটা রকমফের হয়েছে। কাহিনীর তারতম্য যাই হোক না কেন, সিনেমার দুই ঘন্টা চার মিনিট সময়ের মধ্যে যে একবারও বসা থেকে উঠতে পারিনি, এটাই হয়তো সিনেমার সার্থকতা। প্রথম থেকে এরকম টান টান সাসপেন্স, শেষ কবে দেখেছি, ভেবে বলতে হবে। এ দিক থেকে পরিচালক একেবারেই সফল। সিনেম্যাটোগ্রাফী আহামরি না, তবে দুই সাবমেরিনের টর্পেডোর লড়াইগুলো যথেষ্ট আকর্ষণীয় ছিলো।
"আন্ডার ওয়াটার/ ওয়ার এ্যাট সি" ক্যাটাগরির সিনেমা খুব বেশি দেখা হয়নি। বলিউডে আজকাল এ ধরণের সিনেমা হচ্ছে দেখে ভালো লাগছে। বলিউডে এ ঘরানার প্রথম সিনেমাই এটি। ক্রিয়েটিভ কিছু করার জন্যে পরিচালক একটি ধন্যবাদ অবশ্যই পাবেন। দ্য গাজি এ্যাটাক কে বছরের বলিউডের শ্রেষ্ঠ সিনেমা বলাটা একটু বাড়াবাড়ি, তবে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিনেমা বললে মোটেও বাড়িয়ে বলা হবেনা।
এ সিনেমায় সাসপেন্স ছিলো তীব্র মাত্রায়, আবেগ ছিলো, ক্লাইম্যাক্সে কিছু স্নায়ুক্ষয়ী উপাদান ছিলো, কিছু তীব্র অতিনাটকীয়তা (অধিকাংশ বলিউডের সিনেমাতেই থাকে) ছিলো। সব মিলিয়ে ছিমছাম, গোছানো ছিলো পুরো কনসেপ্ট। সবচেয়ে বড় কথা, কাহিনীর ক্রমগতি এতটাই অসাধারণ, একশো বিশ মিনিটের মধ্যে আপনি বিরক্ত হওয়ার বা কাহিনী ঝুলে গেছে...এরকম ভাবার সুযোগ খুবই কম পাবেন।
ভালো লেগেছে "The Ghazi Attack."
#Happy_Watching