“The Shawshank Redemption” সিনেমার বিখ্যাত চরিত্র রেড (মরগান ফ্রিম্যান) এর মুখের একটি ডায়লগ খুব বিখ্যাতঃ Every man has a breaking point.
আসলেও তাই। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই একটা নির্দিষ্ট দাগকাটা লাইন থাকে, যে লাইনের ওপারে গেলে জীবন পালটে যায়, উল্টে যায় দাবার পাশার আত্মঘাতী চালের মত, সরল জীবন ঢুকে যায় অলিঘুলির অন্ধকার পথে। জীবনের সমীকরণ বদলে যায়, সহজ অঙ্ক কঠিন হয়ে যায়।
ভূমিকা বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে। আর না বাড়ানোই বোধহয় ভালো। মূল প্রসঙ্গে ফিরি। “টেবিল নাম্বার ২১” দেখলাম সম্প্রতি। না, এত দেরিতে দেখেছি বলে অবাক হবেন না। ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা মাত্র চারবছর পরে দেখা খুব একটা খারাপ কিছু না। আমি টাইটানিক সিনেমা-ই দেখলাম কিছুদিন আগে। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ অবশ্য।
সিনেমার প্রথমেই পরিচিত হতে হবে সিয়া এবং ভিভানের সাথে, তারা বিবাহিত দম্পতি। এক চ্যারিটি শো তে বিজয়ী হয়ে ঘুরতে আসে তারা ফিজি দ্বীপপুঞ্জে। বেড়াতে এসেছে, ফুরফুরে মেজাজেই তাদের দিন কাটতে থাকে। কিন্তু, কিছুদিনের মধ্যেই তাদের সাথে পরিচয় হয় মিঃ খানের।
মিঃ খান এক রহস্যজনক চরিত্র। অঢেল টাকার মালিক, সিয়া এবং ভিভানকে তিনি প্রচণ্ড খাতিরযত্ন করে পরবর্তীতে ২১ কোটি টাকার টোপ দেখিয়ে এক গেইম শো তে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করেন। গেইম শো এর নাম “টেবিল নাম্বার ২১।“ যেখানে জিতলেই পাওয়া যাবে ২১ কোটি টাকা। গেইমের নিয়মকানুন সহজ। গেইম বা খেলার মাঝপথে খেলা ছেড়ে দেয়া যাবে না এবং মিথ্যা বলা যাবেনা। ট্যাগলাইনঃ If you lie, you die.
গেইমটাকে নিছক গেইম শো ভেবে খেলা শুরু করে এ দম্পতি, সাথে টাকার লোভ তো আছেই। কিন্তু সময় যত গড়াতে থাকে, গেইমের নিয়মকানুন ততই যেন কঠিন হতে থাকে, গেইম যেন জীবনের সাথে মিশে যেতে থাকে আস্তে আস্তে। এক পর্যায়ে গেইম ছেড়ে চলে যেতে চায় এ দম্পতি। কিন্তু, ঐ যে বললাম, গেইম মাঝপথে ছেড়ে দেয়া যাবেনা।
এভাবেই এগোতে এগোতে প্রকাশিত হয় কিছু অপ্রত্যাশিত সত্য, উন্মোচিত হয় কিছু আবৃত বাস্তব। কিছু অতীত সামনে চলে আসে আকস্মিকভাবে, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতন।
এ সিনেমা আমার ল্যাপটপে জমে ছিলো এক বছরের বেশি সময় ধরে। দেখিনি। প্রথম প্রথম কিছুদূর দেখে বিরক্ত হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, এক ধনী বৃদ্ধের মানসিক বিকৃতির গেইম নিয়ে বানানো বুজরুকি এক সিনেমা এটা, সিনেমার পরিণতি নিয়েও যথেষ্ট সন্দিহান ছিলাম। সিনেমার পরিচালকের বায়ো ঘেঁটে জানলাম, তাঁর আগের পরিচালিত সিনেমার মধ্যে উল্লেখযোগ্য “আশিক বানায়া আপনে।“ মনোবল আরো দমে গেলো। তবে, এ সিনেমার কাহিনী যে পরিণতির দিকে এসে এভাবে বদলে যাবে, শেষে গিয়ে এভাবে এক মানবিক গল্পে শেষ হবে সিনেমা, ভাবিনি। যে মানবিক গল্পে শুষ্ক বিবেক একটু হলেও ভিজবে, সামান্য ধাক্কাও হয়তো খাবে।
“মিঃ খান” চরিত্রে অভিনয় করা পরেশ রাওয়াল ছিলেন সিনেমার মুখ্য চরিত্র। তিনি দুর্দান্ত অভিনেতা, এ সিনেমায়ও অসাধারণ অভিনয় করেছেন। হিউমার, সিরিয়াসনেস, ড্রামা সব মিলিয়ে কমপ্লিট প্যাকেজ। "ভিভান" চরিত্রের রাজিব খান্ডেলওয়াল, "সিয়া" চরিত্রের টিনা দেশাইয়ের অভিনয়ও ভালো ছিলো। এই দুইজনকে আগে কোনো সিনেমায় দেখিনি, তবে অভিনয় প্রাসঙ্গিক লেগেছে, বাস্তবিক লেগেছে।
আজকাল হিন্দী, বাংলা সিনেমা কম দেখি। গতানুগতিক কনসেপ্ট, পুরোনো মদ নতুন মোড়কে...ভালো লাগেনা। তবে, এ সিনেমা খুবই ভালো লেগেছে। সিনেমা এক উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে এগিয়েছে, এক সমস্যাকে দর্শকের সামনে তুলে নিয়ে এসেছে, যে সমস্যায় আমরা সবাই আক্রান্ত। যে সমস্যা দিনদিন শুধু প্রকট আকারই ধারণ করছে। আমাদের মুমূর্ষু মানসিকতার প্রাচীরে কিছুটা আঘাত লাগার জন্যে “টেবিল নাম্বার ২১” দেখা খুবই প্রয়োজনীয়, খুবই।
এ সিনেমাটি “থার্টিনঃ গেম অব ডেথ” সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত।
দিনশেষে, একটাই পরামর্শঃ ভালো সিনেমা দেখুন, কিছু শিখুন। কারণ অড্রে হেপবার্ণ তো বলেই গিয়েছেনঃ Everything I learned, I learned from the movies.
Information
----------------------------
Movie: Table No. 21
Director: Aditya Datt
Genre: Drama, Thriller
Language: Hindi
Cast: Paresh Rawal, Rajeev Khandelwal, Tina Desae
Release: January 4, 2013
IMDB : 7.1/10
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৭ রাত ১:১৮