নিউটন, আইনস্টাইন আর এরপর হকিং এই তিনজন ধ্রুপদ বিজ্ঞানীর হাত ধরেই বর্তমান বিজ্ঞান মূলত ইউটার্ণ নিয়েছে। বিনম্র শ্রদ্ধা তাঁদের। গল্পের চরিত্রের সাথেও এনাদের বাস্তবে ঘটে যাওয়া জীবনের কোনো অংশ বা দিনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
নিউটন পর্বঃ
নিউটন ঊর্ধ্বাকাশে তাকাইয়া বলিলেন, ইয়া মাবুদ, বিপদ আপদ বালা মুসিবত থাকিয়া আমাদের রক্ষা করো, আসমানী বালা আসমানে তুলিয়া লও, জমিনী বালা জমিনে দাবায়া দাও।
মাবুদ কহিল, তোমার গ্রাভিটি ল' কি ইহা সমর্থণ করে?
নিউটন ভাবিতে বসিল। টুপ করিয়া আপেল গাছ হইতে খসিয়া পড়িল, বাচ্চাকাচ্চা কুড়াইয়া লইয়া খাইয়া সাবাড় করিল, নিউটন কিছুই টের পাইলেন না। শুধু ভাবিলেন, কি করিয়া বালা মুসিবত হুহু করিয়া পৃথিবীপানে ছুটিয়া আসে। উহাদের ত্বরনের হার একেক ক্ষেত্রে একেক রকম। গ্রাভিটিশনাল এনার্জি ৯.৮১ হইলে মুসিবত পতনের হারে তফাৎ এত কিসের জন্য? ক্যালকুলেশন মিলিতেছে না কিছুতেই। অন্য কোনো ভেরিয়াবল কাজ করিতেছে নিশ্চিত। অনে..ক্ ঘাটিয়া, অনে..ক খাটিয়া কেবলমাত্র তিনখানি আয়াত পাইয়াছি যাহা " ফিলোসোফি অফ ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকায়" সংযুক্ত করিয়াছি। সূত্রের তরজমা করিয়া বই লিখিয়াছি। ক্রিয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বরুপ অনেক গ্যাঞ্জাম হজম করিয়াছি। আপাতত সবাইকে অনেক কায়দাকৌশলে দ্বীনের পথে আনিয়াছি। সহীহ্ আমলের পথে টানিয়াছি।
শির উচাইয়া আবার হাঁকিলো, সমীকরনে সমতা বিধান দরকার। মাবুদগো, তুমি তো বিধি; ই....য়্যা বিধি, তোমার বিধানে সূত্রের যে গ্যাপখানি রহিয়াছে, অদৃশ্য অন্তঃর রহিয়াছে, তাহার পূর্ণতা নাজিল করুন, বিধাআন পূনঃহ প্রেরণ করু....ন।
বিধি হাসিয়া কহিল, সে তোমাকে না ভাবিলেও চলিবে। উহার জন্য আইনস্টানকে মওকা দিবো। ১৬৮৬ সালের জন্য ইহাই যথেষ্ট। তুমি আপাতত অফলাইন যাও।
নিউটন গোঁ ধরিয়া কহিল, আইনস্টাইন vs নিউটন রাজত্বকালের গ্যাপ কতকাল রাখিয়াছেন? আইনকে পাইয়া লোকে আমাকে ভুলিয়া যাইবে না তো? আইন আমাকে ভুল প্রমান করিয়া তাহার সমীকরণ পোক্ত করিবে না তো? জনগন আমাকে মূর্খ-পন্ডিত বলিবে না তো? মাবুদগো,
ওঁঁঁঁঁও... মাবুদ....
মনে অনেক প্রশ্ন, টন টন করে মন। রাত্রে ঘুমাইতে পারিনা, সকালে উঠিতে পারিনা; অনেক দ্বিধা, অনেক ভয়, অনেক সংশয়। মাবুদগো তুমি পথের দিশারী, আলোকের প্রতিষ্ঠাটা। সেই আলোকের দিব্বি, তুমি এই আলোককের বেগে চঞ্চলা মনকে প্রশমিত করো। শান্তির পথে ফিরাইয়া আনোওওও....।
বিধি এইবা রুষ্ট স্বরে কহিলেন, বাড়াবাড়ি করিওনা নিউটন, অনেকদুর আগাইয়াছো। আলোকের ধারেকাছে আসিও না। আর রিসার্চ করিও না। ঘাঁটাঘাটি করিও না। হিতে বিপরীত হৈবে তাহাইলে কৈলাম! ফাইনালি বলিতেছি, অফলাইন যাও।
নিউটন তথাস্তু বলিয়া অফলাইন হইল।
এরপর অনে....ককাল কাটিল। নিউটনকে শেষতক আশ্বাস দেওয়া হইয়াছে যে, আইন আসুক আর স্টাইন আসুক, অথবা তাহাদের উভয়ে একত্রেই আসুক না কেনো, নিউটনকে কেহ ভুল প্রমান না করিয়াই তাহাদের সূত্র প্রতিষ্ঠা করিবে। পাশাপাশি নিউটনের সূত্রক'খানা অলঙ্ঘনীয় সূত্র হিসেবেই সম প্রতিষ্ঠা পাইবে। মর্যাদাহানি হইবে না কাহারোই।
আইনস্টাইন পর্বঃ
https://www.space.com/17661-theory-general-relativity.html
অ...নেক দিন কাটিয়া গিয়াছে। দিন-মাস-বছর গড়াইয়া শেষতক ১৯০৬ -আসিয়া ঠেকিয়াছে।
ঘোর কলিকাল। আইনের লোকজন আইন বানাইয়া রাজত্ব করিতেছে।আইন যাহা বলিবে, তাহাই আইন।
মানুষ স্বার্থপর হইয়াছে। একে অপরের পিছফোঁড়া সাজিয়া খাউজাইলেও তাহা আইনানুগ। আইন মতলব আঁটিতেছে, কিরুপে ত্রিভূবনের রাজত্ব বগলদাবা করা যায়। জমিনের পর এইবার আসমান জয় করিবার মতলবে আছে আইন। ভালো অস্ত্র চাই, ভালো বাহন চাই।
ঢেড়া পিটাইয়া চাওড় করা হইল যে, যদি কেহ, বিদ্যুতের চমকের মতন টাটকা নগদ অস্ত্র পেশ করিতে সমর্থ হয় তাহাকে সরাসরি প্রতিঅসিমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হৈবে।
আইন, সেদিন বাটির বাহির হৈয়াছে কেবল। মাতা গজগজ করিতে করিতে কহিল, সাবানদানিতে সাবান নাই, খুচরা নাই,
বাকির দোকান থাকিয়া ত্বরিৎ লৈয়া আসো।
আইন গোঁৎগোঁৎ করিতেছে। জ্বীনপরীগন যেমন সারাদিন উপাসনা করিয়াও বিধির মনোরঞ্জন করিতে ব্যার্থ, তদ্রূপ মাতাও আইনের কাজেকর্মে বহুত নারাজ। ছেলেটা ঢিলা হৈয়া যাইতেছে দিনকেদিন। মাতা তাগাদা দিয়াছে, ত্বরিত রিটার্ন আসিতে বলিয়াছে।
কিন্তু বিধি বাম। 'সাম্নে বালিকা বিদ্যালয়, ধীরে চলুন' দেখিয়া আইন মাত্রাতিরিক্ত স্লোমোশনে গিয়াছিল। অগত্যা বাকি পথখানা মেকাপ টানিতে হৈবে। আইন ত্বরিতের বেগ বাদ দিয়া আলোকের বেগে হাটা দিল তৎক্ষনাৎ।
সময়ের আগেই বাড়ি ফিরিয়া আসিলো। মাতা কিছুই বুঝিতে পারে নাই। খুশিতে আইনের মুখখানা জেল্লা দিতে লাগিল। মনে হইলো বয়স কিছুটা কমিয়া আসিয়াছে।
আর সব্বাই তাহা স্বীকার করিলেও মাতা কিছুতেই তাহা স্বীকার করিতে নারাজ। আইন তাহার কাছে চিরকালই কচি খোকাবাবু। বয়স তাহাকে কাবু করিবে কেনো?
আইন তৎক্ষনাৎ নোটপ্যাড বাহির করিয়া "থিউরী অব রিলেটিভিটি" শিরোনামে অমোঘ মন্ত্রখানি লিখিল।
হাতের লেখন খারাপ হইলেও তাহার শব্দচয়ন তাক লাগাইবার মতন। কিছুটা এইরুপঃ মনে ভাবিলাম, সম্পর্কগুলো দিনদিন হালকা হৈতেছে। কর্পূরের ন্যায় উবাইয়া যাইতেছে। কোনোরুপ তলানী বা অবশেষ না রাখিয়াই। কিন্তু স্নেহ, ভালবাসা নামক প্রভাবক বস্তুর বিষয় যেনো সম্পূর্ন আলাদা। কেনো কেনো? কি কারণ? উত্তর খুঁজিতে গিয়া যে অমোঘ সত্যখানি আবিষ্কার করিলাম তাহা বিস্ময়কর!
মূল বিষয় হইল, দৃষ্টিভঙ্গি, দেখিবার অ্যাঙ্গেল। প্রসঙ্গ কাঠামো মাতা হৈলে প্রসঙ্গ বস্তুকে সন্তানের মতন দেখিবে, শিকার হইলে শিকারীর মতন দেখিবে, আর প্রতিদ্বন্দী হইলে প্রতিদ্বন্দীর দৃষ্টিতে দেখিবে। দেখিবার দৃষ্টি আলাদা হইবার কারনে তাহারা একই সময়ে আলাদা আলাদা পথে ভাবিবে, আলাদা রিলেশন কাজ করায় তাহারা একই সময়ে বিস্তর ব্যবধান অনুভব করিবে,
অনুভূত এই কালের ব্যবধান স্থান কাল পাত্র ছড়াইয়া সৃষ্টির উৎসকে কৃষ্ণগহ্বরে নিমজ্জিত করে যেখানে অনন্ত জীবন অথবা অনন্ত মৃত্যু অপেক্ষমান।
ঘাড় ঘুরাইতেই দেখিল মাতা গলা বাড়াইয়া তাহার লেখনি কব্জা করিতেছে। আইন আমতা আমতা করিয়া বলিল, থিসিস লিখিতেছি।
মাতা চিড়বিড়াইয়া বলিল, হতচ্ছাড়া, তলে তলে এতদুর! থিসিস নাকি সুইসাইড নোট?? তুইত কৃষ্ণগহ্বরের খাদে আসিয়া ঠেকিয়াছিস!!
অতহঃ আইনকে এইবার নিউটনের মতই নিশস্ত্র হইতে হইল।
হকিং পর্বঃ
নানাবিধ উৎকন্ঠায় স্টিফেন নিদারুন হতাশ। বয়স বাড়িতেছে, অসুখ বাড়িতেছে, হাটাচলা মুশকিল; সংসারে বিসুখ, পত্নী রিভার্স সুইং করিতেছে, সামলানো মুশকিল।
সারাদিন বসিয়া থাকিতে হয়। বিশ্রাম নিতে নিতে ক্লান্তি আসিলে মনে হয়, আহা! আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম। হাহ, টাইম, আফসুস, টাইম! অফুরন্ত টাইম, বাট ননসেন্স -ইউসলেস।
পত্নী ইদানিং একগাদা কাগজ আর কলম দিয়া কহিয়াছে, যাহা খুশি আঁকো, আমাকে বাদ দিয়া।
গলায় তাহার অন্যরকম ঝাঁঝ। সুরে যেনো অন্যরকম পল্টি। কলম লইয়া স্টিফেন গভীর হতাশায় মগ্ন। বহুকাল কোনোকিছু নাজিল হইতেছেনা। কী কচুটা আঁকিবে নাকি কিছু একটা লিখিবে ভাবতেই দিবস রজনী একাকার। মাঝে মাঝে অনন্তকালের ভাবনায় বিরাম দিয়া কলম ঘুরাইয়া বাচ্চাদের মতন খালি গোলগোল বল আকে আর কালি দিয়া ভরাট করে। সাদা বল -কালো বল।
পত্নী একদা গর্জিয়া উঠিল, কী যা তা অংকন করিয়াছ, মাথামুন্ডু নাই, ধড়- কোমর- পাছা কিছুই ঠাহর করিতে পারি না!
স্টিফেনও ধমকাইয়া বলিল, হোল আকিয়াছি। এঁইটা ব্লাক হোল আর এইটা হোয়াইট হোল।
ব্যাস! আর যায় কোথায়, ঝগড়া সপ্তমে চড়িয়াই ক্ষান্ত হইলনা, চড়চড় করিয়া নবমে-দশমে চড়িল। এক্কেবারে ডিভোর্সের দ্বারপ্রান্তে, ইভেন্ট হরাইজোনে।
বলিল, নিজেকে কী মনে কর তুমি? তুমি এই হোল কাউকে দেখাইতে পারিবে? কী বিখ্যাত আরটিস্ট আমার!
স্টিফেনও কম যায় না। মুখ ভেঙচাইয়া বলে আমি এই হোল' ঐ পাবলিশ করিব, এক্সিবিশন দিব, ইতার উপর আরটিকেল লিখিব, থিসিস করিব। তুমি দুরে গিয়া মর।
পত্নী বেচারি আর বরদাশত করিতে পারিল না, ঝরঝর করিয়া কাঁদিয়া উঠিল। শাপ দিয়া কহিল, তুমার এহেন ভেঁঙচানো মুখখানা যেন আজীবণ ভেঁঙচানোই থাকে, এহেণ মুখখানাই য্যানো ফ্রেমে ভরিয়া রাখে সব্বাই। ইয়া মাওলা---
মওলা শুনিলেন কিনা তাহা কে জানে!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
উদ্দীপকঃ
(স্টিফেন হকিং, বাস্তবে তাঁর স্ত্রী ছিলেন তাঁর অনুপ্রেরণার উৎস।
https://m.youtube.com/watch?v=HK1Ml78087w
তাঁর জীবনী নিয়ে করা Theory of everything movie explanation:
https://m.youtube.com/watch?v=5tdTBhGCGKU
বিজ্ঞানী ক্যাভেন্ডিস নিউটনের সূত্র পরিমার্জন করে সার্বজনীন ধ্রুবক G এর মান নির্ণয় করেন। নিউটন বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর সূত্রে কী যেন নেই, কিছু একটা অনুপস্থিত।
https://m.youtube.com/watch?v=Af9lRX4xsr0
আর আইনস্টাইন তো আইনস্টাইন-ই।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৭:৩৭