(জানিনা এই ঔদ্ধত্য অশ্লীলতার পর্যায়ে পড়ে গেল কী না, তবে এটাই আমার স্মৃতিতে সুভব্রত'র শেষ আঁচঢ়। আপনাদের মন্তব্য ছাড়া জানতেও পারছি না।)
বিয়ে হবার পর নিউড আঁকা মনে হয় ছেড়েই দিয়েছে সুভব্রত। আমার এতদিনের বন্ধু,যার প্রতিটি ছবির প্রথম দর্শক আমি। সেই সাথে প্রথম কমেন্টকারীও। কী জানি, ও হয়ত চাইবে না ওর বৌ-এর দিকে কেউ অদ্ভুতভাবে তাঁকাক।
সুভব্রতকে ভুলেই গিয়েছিলাম প্রায়। সেদিন কলেজ লাইফের পুরোনো কাসুন্দি ঘাঁটতে গিয়েই কীনা চমকে উঠলাম আমি। ওঁর হাতে আকা একটা নিউড।
নিউড আঁকাটাকে আমাদের দেশে সহজভাবে নেয় না যে কেউ। জিভে ফচ করে কামড় দিয়ে বলবে "কী অশ্লীল! কী অশ্লীল!" অথচ স্কুল লাইফেই হোক আর কলেজ লাইফেই, কে না এঁকেছে এরকম একটা দুটা! বলপয়েন্ট কলমের আঁচড়ে ওরকম মাংশল বুকের ছবি আর কোমরের ভাঁজ ফুটিয়ে তোলার নিপুণতা কার মগজে ছিল না?
সুভব্রত'র সেই নৈপুন্যতা বোধহয় একটু বেশিই ছিল। একটানে সে এঁকে আনত গার্লস স্কুলের সবচে দুরন্ত মেয়েটার বুকের সেইপ। আমাদের স্যারেরা কখনোই জানতে পারেনি কী আশ্চর্য্য প্রতিভা প্রথিত আমাদের সুভব্রত। ক্লাসের শেষ বেঞ্চে বসা সুভব্রত আর আমি এঁকে যেতাম একটার পর একটা। আমার আঁকাগুলো নিউডের ধারেকাছে না গিয়ে বরং তেতুল গাছের ছবিই মনে হত বড় বেশি। আমি ওদিকে ভ্রুক্ষেপও করতাম না বড় একটা। একে যেতাম পাল্লা দিয়ে।
সেই তেঁতুলগাছে এঁকে দিতাম আলুথালু চুল। আলুথালু চুলে সেটা যেন হয়ে উঠত তেঁতুল গাছের পেত্নী।
একবার ত ধরাই খেয়েছিলাম! ভাগ্যিস! ম্যাডাম আমারটা পেয়েছিল! সুভব্রতই কীনা বুদ্ধি করে ধমকে দেয় আমাকে, "গাধা,তেতুল গাছে মৌমাছি বাসা বাধে নাকী!
ম্যাডাম মুচকী হেসে ক্লাস শেষ করেন।
আমাদের তেতুল গাছ বড় হতে থাকে। সেই সাথে আরও সুন্দর, আরও মোহনীয়। এরপর আমরা তেঁতুল গাছের মৌমাছিদের আরও নিখুতভাবে ফুটিয়ে তুলি। আমাদের অনভিজ্ঞতায় সেই মৌমাছিদের কিছু আসে যায় না। আমরা ম্যাডামের সেই মুচকী হাসির কথাটা শুধু মনে রেখেছিলাম। আর ম্যাডামের ক্লাসে এরপর থেকে অতি সতর্কতা স্বরুপ দুই কিনারায় দুজন বসে ক্লাস সেরে নিতাম।
সে যাই হোক, সুভব্রত আর আমার এই ইতিহাস তুলে আনা আমার মুখ্য বিষয় নয়। এই একখানি নিউড কিভাবে আমার কাছে এল বা আমার কাছে আজও রয়ে গেল তার ফিরিস্তি দিয়ে ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটানো যেতে পারে অনায়াসেই। সেই সহজ কাজটা ইতোমধ্যে ঘটেই গেল কীনা বুঝিনি, তবে আর বাড়াচ্ছি না।
এক বিকেলে হাটতে হাটতে পুকুর পাড়ে দেখা হয়ে গিয়েছিল সুভব্রতর, সাথে ওর স্ত্রী। হাটতে বেড়িয়েছে ওরাও। আমাকে দেখেই অনেক দিনের অনভ্যস্থতায়ও সুভব্রত সামলে নেয় নিজেকে। ও এখন বিবাহিত, এই কথাটা কিছুতেই মাথায় থাকতে চায় না আমার। আমি হাত বাড়িয়ে দিই। আগের সেই হাত- বন্ধু আড্ডা গানের হাত।
ফরমাল কিছু কথায় আমাকে পার করিয়েই ও যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। আমি ওর পাশে থাকা আরেকজন, যে কীনা আমার আর সুভব্রতর চিরচেনা জগতের মাঝে এসে এক ঝড়ে সরিয়ে নিয়েছে সুভব্রতকে, অন্য ভূবনে, অন্য আলোয়-আমি তার উপস্থিতি অনুভব করছি প্রবলভাবে।আমি নিজের সাথে যুদ্ধে মাতি।সেই ঝড়টাকে আমি আর দেখতে চাইনা কোনোভাবেই। আমার কাছে সেই ঝড় অচেনাই থেকে যাক না!
আমার আর সুভব্রতর মাঝে এখন বিস্তর ব্যবধান-।বিয়ে বস্তুটা মানুষকে বদলায় এতটাই!
কেমন আছে সুভব্রত?'বিবাহিত' সুভব্রত? ও কি আঁকাআঁকি ভুলে গেল সব? অনেক অ-নেক দিন আগেকার সেই সুভব্রত কি এখনও আঁকে? নাকি, সব আর্ট পোর্ট্রেট হয়ে উষ্ণতা ছড়ায় সুভব্রতর বুকে?
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৩১