১) রাতের ট্রেনের বিকট হুইসেলঃ “দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়” অনেকেই খেয়াল করেছেন হয়ত আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটের পিছনে কথাটা লেখা থাকে। কিন্তু এই ট্রেনই পরোক্ষভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। অনেক দিন আগে এটিএন নিউজে একটা ফিচার দেখি… পরে ফ্রেন্ডদের বলছিলাম “মামা … ট্রেনের হুইসেল ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারন, পয়েন্ট খানা মাথায় রাখিস। খাতায় লিখব ”। মনে আছে এখনো, ঐ বছরে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বিনুদুন ছিল এই ঘটনাটা। কারন সামাজিক বিজ্ঞানে এসএসসি তে জনসংখ্যা থেকে মোটামুটি একটা প্রশ্ন থাকতই, আর “ জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারন ও প্রতিকার ” এক বছর পর পর এক্সামে আসত। যাই হোক, ঘটনাটা বলি। ফিচার টা মূলত কি বিষতে ছিল এটা মনে নেই… এটিএন বাংলার সাংবাদিক একটা রুগ্ন লোককে ক্যামেরার সামনে দাড় করালেন। আমি ভেবেছিলাম হয়ত হতদরিদ্র মানুষ, তাদের নিয়ে ফিচার করা হচ্ছে। কিন্তু না … ঐ ব্যাক্তিটির নাকি ৮ জন সন্তান। হঠাৎ মনে হইল ২২০ ভোল্টে একটা শক খাইলাম… মনে মনে বললাম একটু বাতাস হইলে যেই শালা উইড়া যাবে ও আবার ৮ টা বাচ্চার বাবা !!! ক্যামনে কি ? এই রহস্যের সমাধান অবশ্য ঐ ব্যাক্তি নিজেই করলেন… তবে আমি মোটেও এই কারন টা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম্ না মাইরি। সে অকপটে বলে ফেলল “ছ্যার … আমরা গরীব নোক, জমিজায়গা ভিটে যাউ বা ছিলো নদীর মধ্যি তলিয়ে গিছে। পরে শহরে আইসে লাইনের পাশে এই বস্তিতে কুনোরকম ছাউনি গাইড়ে থাকছি…”
- আপনার তো নাকি ৮ জন সন্তান, তাদের নিয়ে এই সল্প রোজকারে কিভাবে চলছেন ?
- বাইচ্চা কি সাধে হইছে ছ্যার… সারাদিন কাম কাজ কইরা রাইতে ইক্টু শুই। তিনটার দিক ঘুম ভাইংগা যাইত টেরেনের হুইসেলে… বিছানায় শুইয়া ছটপট করতাম। আমার নড়াচাড়ায় বউ ও জাইগা যাইত। কি আর কর্তাম …
চিন্তা করেন… বেচারার রাতে ঘুম ভেংগে যেত ট্রেনের হুইসেলে। মধ্যরাতে একা মানুষ কি বা করবে। ছোট্ট জাগায় নড়াচড়ার একটা বিরাট প্রভাব পড়ে, হয়ত সেজন্য তার বউয়ের ঘুমটাও ভেংগে যেত। তারপর আর কি … ব্যাস। পরিবার পরিকল্পনার আপারা সারাদিন যা বুঝাইছে ঐসব মাথা থেকে উধাও রীতিমত। তবে যাই বলুন, এখানে মেইন কালপ্রিট টা কিন্তু ট্রেনের বিকট হুইসেল। আমরা তাই জন সংখ্যার প্রশ্ন লেখার সময় হাসাহাসি করতাম এটা নিয়েই।
২) মেঘময় আকাশ… কর্দমক্ত উঠানঃ নিজ দায়িত্ত্বে যতটুকু বুঝে নিয়েছি সেটা হল একটা দম্পতি বাসর রাতেই মোটামুটি একটা নেগোসিয়েশান করে নেয় তাদের কতগুলো সন্তান সন্তানাদি হবে। অনেক দম্পতিই হয়ত সেই প্লান মোতাবেক বাকিটা জীবন চলে। কিন্তু সবাই কি পারে ??
ধরুন আজ সারাদিন ঝির ঝির বৃষ্টি হচ্ছে। কাজে বেরুতে পারেননি মিষ্টার বরুন … দোকানে ফোন করে কর্মচারীদের বলে দিয়েছেন দোকান খুলতে। সারাদিন বাইরে বের হতে পারছেন না… মিসেস বরুন রান্নাঘরে যেতে পারছেন না, উঠান প্রায় ডুবে গেছে। বেচারী ঘরের ভিতরে স্টোভেই রান্নার কাজ চালাচ্চেন। এদিকে বরুন সাহেব টিভির চ্যানের ঘোরাচ্ছে… সেই একঘেয়ে টক শো, রাজনীতি, অর্থনীতি… ব্লা ব্লা ব্লা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির এই দিনে একটু আলাদা বিনোদন দরকার। স্ত্রীকে ডেকে নিলেন তিনি। ভুলে গেলেন সব প্লানিং এর কথা। আর তার তৃতীয় সন্তান হয়েছিল একটি ফুটফুটে মেয়ে। নাম রেখেছিলেন ‘মেঘ’। (ইমোটা কেমন হবে ভেবে নিন)
৩) বিরোধীদল, হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতাঃ বিভিন্ন সময়ে আমাদের বিরোধী দল গুলোও আমার মনে হয় জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বেশ অসামান্য অবদান রাখেন। দেশ , অর্থনীতি , রাজনীতি স্থবির হয়ে পড়লেও কিছু কিছু জিনিসের হয়ত এর সাথে ব্যাস্তনুপাতিক সম্পর্ক থাকে। আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার একটা বড় অংশ অশিক্ষিত, অসচেতন … বিশেষ করে পরিবার পরিকল্পনার মত বিষয় নিয়ে। পরিবার পরিকল্পনার আপা দুই তিনটা ঘন্টা ধরে মেহনত করেন বাড়ির গিন্নির চুলোর গোড়ায় বসে। বোঝান পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ত্ব, দেখান সেটা নিয়ন্ত্রনের পদ্ধতি। কিন্তু দিন শেষে ঐ বেচারী স্বামী ভক্তিতে ঠিকই কোন কার্পন্য করে না।
একটা রিক্সাওয়ালার কথাই চিন্তা করুন। হরতালের ভয়ে এখন অনেকেই বাইরে রিক্সা বের করতে চায় না বাইরে। আর যদি এই অস্থিরতা কয়েকদিন স্থায়ী হয় তবে তো কথাই নেই… নিজেই চিন্তা করুন ওরা বাড়ীতে বসে কি করবে ? পার্কে, সিনেমা হলে কিংবা হাতির ঝিলে ঘুরতে যাওয়ার সংষ্কৃতি ওদের মধ্যে নেই। বিনোদনের সংগা টুকু ওদের কাছে অত্যন্ত সীমাবদ্ধ … সেই সীমাবদ্ধ পদ্ধতির একটা হল সরাসরি জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। পরিবার পরিকল্পনা আপার সারাদিনের কষ্টটাই বৃথা হয়ে যায়।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সকল প্রশ্নেই লিখতে হতো এটা প্রতিকারের উপায়। কিন্তু আজ লিখতে পারছি না … কি লিখব ?? ট্রেন চলার সময় হুইসেল বাজাইতে পারবে না…? আকাশ মেঘলা হওয়া যাবে না, রোমান্টিক আবহাওয়া ক্রিয়েট হওয়া যাবে না … ? কি লিখব, বিরোধী দল হরতাল দিতে পারবে না ?? একথা বললে আমারে কমিউনিষ্ট বইলা পিডায়া মাইরা ফেলবে। যেহেতু প্রব্লেম গুলো যুগান্তকারী… সমাধানও যুগান্তকারী হওয়া উচিৎ। কিন্তু আপাতত সেই যুগান্তকারী সমাধান আমার মাথায় নাই মোটেও। অবিবাহিত তো … … সেইজন্য। হি হি হি হি
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩