সফল একজন দাদা। প্রচন্ড গরিব ছিলেন। ছেলে মেয়েদের মানুষ করলেন। তারা গরিবী দূর করলেন। পরে নাতি নাতনীদের কল্যানে বড়লোকও হলেন। একদিন নাতিরে ডাক দিয়া জিজ্ঞাসা করলেন
- নাতি তোর চিন্তায় বেহেস্ত কী জিনিস বল্ তো
নাতি প্রচন্ড ব্যস্ত মানুষ। বাস্তবতার চাপে তার বেহেস্ত নিয়া ভাবার সময় নাই্ মুচকি হাসি দিয়া বললো
- দাদা ঐভাবে তো চিন্তা করে দেখি নাই।
দাদা বললেন
- অথচ আমাদের দিনের বেশীর ভাগটাই যাইতে এই বেহেস্ত নিয়া চিন্তা কইরা।
পুরানো স্মৃতি ঘাটতে গিয়া বুড়া আবেগী হইয়া গেলেন। নাতিরা দাদারে খুব পছন্দ করে। বুড়া বলে অবহেলা করে না। দাদা যাই বলে মনযোগ দিয়ে শুনে। বুড়া গল্প করেও মজা পায়। বললো
- আগে হাল চাষ কইরা যখন দুপুর বেলা বাড়ী ফিরতাম, তখন কেবল ভাবতাম আহারে বেহেস্তে না জানি কত সুখের ঠান্ডা। পেট ভইরা যখন ভাত খাইতে পাইতাম না, তখন ভাবতাম বেহেস্তে না জানি কত খাওয়া দাওয়া। লুঙ্গি ছিড়া যখন টুটা টুটা হইয়া যাইতো, তখন ভাবতাম বেহেস্তে না জানি কত সুন্দর সুন্দর কাপড়চোপড়।
নাতি মিনমিন করে হাসে। দাদার গল্প শুনে আর আস্তে আস্তে দাদা'র পা টিপে দিচ্ছে। নাতির মাথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে দাদা বললো
- অথচ এখন দেখ, গরম লাগলে এসি ছাইড়া দেই, আহা কী শান্তি। খাওয়া দাওয়া, কাপড় চোড়র নিয়া কোন চিন্তাই নাই।
কী কথা মনে করে যেন বুড়া খিল খিল করে হাসতে শুরু করলো। অনেক্ষন হাসার পর বললেন, একটু পায়েশ কাইতে মন চাইলেও এক বছর আগে থেকে আগে গাভী পালা শুরু করা লাগতো। এখন মন চাইলে দোকানে গিয়া টাকা দিলেই পায়েশ পাওয়া যায়!
গল্প পায়েশ থেকে পায়ে হাটায় চলে আসলো। বললো
- আগে কয়েক মাইল দূরে যাইতেও কত কষ্ট! কত খাল বিল যে লুঙ্গি খুইলা পার হইছি নাতি! আর এখন ড্রাইভাররে বললেই শা শা কইরা নিয়া যায়!
একটা দীর্ঘ শ্বাস ফালায়ে বললেন
- দেখবি টাকা পয়সাওয়ালা মানুষেরা একটু কম ধর্মকর্ম করে। কারন তারা টাকা দিয়া সুখে ব্যবস্থা করে ফেলে। আর গরীব মানুষ সান্ত্বনা হিসাবে মনে করে মরার পর এই সুখগুলা বেহেস্তে গিয়া করবো।
দন্তহীন মুখে আবার খিলখিল করে হাসতে হাসতে বললেন
- এরপরেও যদি টাকাওয়ালা কাউরে ধর্মকর্ম করতে দেখোস, মনে করবি হয় সে বিড়াট বুদ্ধিমান, দিব্যচোখে পরকাল দেখতে পাইছে। অথবা সে মস্ত বেকুব, টাকা থাকা সত্বেও সে সুখ ভোগ করতে জানে না।