এলাচের সাথে আমার সম্পর্কটা বড়ই ভালোবাসার। তরকারীতে একটাও যদি এলাচ দেয়, এইটা আমার প্লেটে যে শুধু পড়ে তা না। আয়েশ করে যখন চাবানি দিবো, সাথে সাথেই ব্যুমম। খাওয়ার চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার! কুলি করার পরে খাওয়া রিষ্টার্ট করার পরেও আর আগের মত টেস পাই না।
এমনও হইছে, হয়ত আমার প্লেটে কোন এলাচি পড়ে নাই। খুব আয়েশ করে খাচ্ছি। আমার খাওয়া দেখে তিনি মায়া ভরে তার প্লেট থেকে একটু হয়ত আমার প্লেটে তুলে দিলেন। এলাচি ছুপা রোস্তমের মত এর ভিতরেই লুকায়ে হইলেও আমার মুখ পর্যন্ত পৌছাবেই পৌছাবে।
খুব চিন্তা করে বউরে একদিন বললাম
- মধ্যযুগের রাজা হইলে একটা মনের খায়েশ পুরা করতাম বউ।
তিনি সাধারণত বছরে দুই একবার আমার দিকে মধুর দৃষ্টিতে তাকান। মধুটা একটু বেশী ঢেলে, মুচকি হাসি দিয়ে বললেন
- কী করতা?
বললাম
- মাংসের মধ্যে এই এলাচী দেওয়ার বুদ্ধি যেই হারামজাদা বাবুর্চী বের করছে তারে আমি শূলে চড়াইতাম।
ঐদিন তিনি আমাকে বললেন, আসার সময় এলাচ আনবা। আমি ক্রিয়েটিভ মানুষ, সংসারের ছোটখাটো জিনিস ক্রিয়েটিভ মানুষদের মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক। আমি নিষ্ঠার সাথে তা ভুলে গেলাম। তিনি এলাচ ছাড়াই মাংস রান্না করে আমাকে দিয়ে বললেন, খাও। মাংস মুখে দিয়া বউরে বললাম
- মাংস মাংস গন্ধ আসতেছে কেন কউ তো?
তিনি ভ্রু কুঁচকে বললেন
- মাংস খাইতেছো, তুমি কি জাফরাণের গন্ধ পাইবা?
কণ্ঠের তেজ দেখেই মনে পড়লো, কিছু একটা আকাম নিশ্চয়ই করছি। সাথে সাথে মনে পড়লো, খাইছে এলাচ তো আনি নাই! মোলায়েম কণ্ঠে বউরে বললাম
- শোন কথায় বলে হাকিম নড়ে, হুকুম নড়ে না। উল্টাটা করলাম, যাও। একই হাকিম হুকুম উল্টায়ে দিলাম।
তিনি কিছুই বুঝলেন না। বললাম
- যে বাবুর্চী এলাচ দেওয়ার বুদ্ধিটা বের করছিলো, তারে মাফ কইরা দিলাম। গলায় মুক্তার মালা থাকলে একটা ইনাম দিয়া দিতাম উল্টা।
তিনি রুষ্ঠ হয়ে ছিলেন। ফিক করে হাসলেন। তিনি জানেন হাসলে তাকে কতটা সুন্দর লাগে। তাই সুন্দর জিনিসগুলা তিনি যত্ন করে তুলে রাখেন, খরচ করতে চান না।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:২২