মহীয়সী নারী মাদার তেরেসার ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯৭ সালের এ দিনে তিনি মারা যান। মাদার তেরেসা ১৯১০ সালের ২৬ অগস্ট অটোম্যান সাম্রাজ্যের ইউস্কুবে জন্মগ্রহণ করেন। তবে ২৬ অগস্ট জন্ম হলেও তিনি ২৭ অগস্ট তারিখটিকে তার ‘প্রকৃত জন্মদিন’ মনে করতেন। কারণ ওই তারিখেই তার ব্যাপটিজম সম্পন্ন হয়েছিল।
মাদার তেরেসা নিকোলো ও দ্রানা বয়াজুর কনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন। তাদের আদি নিবাস ছিল আলবেনিয়ার শকড্যর অঞ্চলে।মাদার তেরেসার পিতা আলবেনিয়ার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯১৯ সালে মাত্র ৮ বছর বয়সে তার বাবা যান। পিতার মৃত্যুর পর মা তাকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে লালন-পালন করেন।
জোয়ান গ্র্যাফ ক্লুকাস রচিত জীবনী থেকে জানা যায়, ছোট্টো অ্যাগনেস মিশনারিদের জীবন ও কাজকর্মের গল্প শুনতে ভালবাসতেন। ১২ বছর বয়সেই মাদার তেরেসা ধর্মীয় জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নেন।
১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে একজন মিশনারি হিসেবে সিস্টার্স অফ লোরেটো সংস্থায় যোগ দেন। মা আর দিদিদের সঙ্গে মাদার তেরেসার আর কোনোদিন দেখা হয়নি।
১৯৫০ সালে কলকাতায় তিনি মিশনারিজ অফ চ্যারিটি নামে একটি সেবাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। সুদীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে মাদার তেরেসা দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের সেবা করেন। একই সঙ্গে মিশনারিজ অফ চ্যারিটির বিকাশ ও উন্নয়নেও অক্লান্ত পরিশ্রম করেন তিনি।
প্রথমে ভারতে ও পরে সমগ্র বিশ্বে মাদার তেরেসাএই মিশনারি কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে। তার মৃত্যুর পর পোপ দ্বিতীয় জন
পল তাকে স্বর্গীয় আখ্যা দেন। এবং তিনি কলকাতার স্বর্গীয় টেরিজা নামে পরিচিত হন।
১৯৭০-এর দশকের মধ্যেই সমাজসেবী ও অনাথদের বন্ধু হিসেবে মাদার তেরেসার খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ১৯৭৯ সালে তিনি তার সেবাকার্যের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। আর ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন লাভ করেন।
মাদার টেরেসার মৃত্যুর সময় বিশ্বের ১২৩টি রাষ্ট্রে এইচআইভি/এইডস, কুষ্ঠ ও যক্ষার চিকিৎসাকেন্দ্র, ভোজনশালা, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, অনাথ আশ্রম ও বিদ্যালয়সহ মিশনারিজ অফ চ্যারিটির ৬১০টি কেন্দ্র বিদ্যমান ছিল।
বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা ও একাধিক রাষ্ট্রের সরকার তার কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। কিন্তু কোনো কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার তার সমালোচনা করেন। ক্রিস্টোফার হিচেন্স, মাইকেল প্যারেন্টি, অরূপ চট্টোপাধ্যায়, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ প্রভৃতি ব্যক্তি ও সংস্থা জন্মনিরোধক এবং গর্ভপাতের বিষয়ে তার আপত্তি, দারিদ্র্যের আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্যে তার বিশ্বাস ও মৃত্যুপথযাত্রীদের খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত করার সমালোচনা করেন।
১৯৮৩ সালে পোপ জন পল ২ এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে রোম সফরের সময় মাদার তেরেসার প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়। ১৯৮৯ সালে আবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর তার দেহে কৃত্রিম পেসমেকার স্থাপন করা হয়। ১৯৯১ সালে মেক্সিকোতে থাকার সময় নিউমোনিয়া হওয়ায় হৃদরোগের আরও অবনতি ঘটে। এই পরিস্থিতিতে তিনি মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু চ্যারিটির নানরা গোপন ভোটগ্রহণের পর তেরেসাকে প্রধান থাকার অনুরোধ করে। অগত্যা তেরেসা চ্যারিটির প্রধান হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।
১৯৯৭ সালের ১৩ই মার্চ মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধান পদ থেকে মাদার তেরেসা সরে দাঁড়ান। পরে ৫ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।