দেখে যা- কি করছে তোদের দাদাবাবুরা!!!
ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ বদলাতে জরিপ শুরু করেছে ভারত
ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তনে জরিপকাজ শুরু করেছে ভারত। আসামের গুয়াহাটির জগিঘোপা এলাকা থেকে ফারাক্কা বাঁধের একটু ওপর পর্যন্ত একটি সংযোগ খাল তৈরি করে নদের পানি সরিয়ে নেওয়া হবে। এ জন্যই জরিপকাজটি চলছে। আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পের অংশ হিসেবে এটি করা হচ্ছে।
গত সোমবার (১৯ মার্চ) রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ভিনসেন্ট এইচ পালা বলেন, 'মানস-সংকোশ-তিস্তা-গঙ্গা সংযোগ এবং জগিঘোপা (ব্রহ্মপুত্র)-তিস্তা-গঙ্গার মধ্যে সংযোগ খাল তৈরির জরিপ ও অনুসন্ধানকাজ শুরু হয়েছে।'
গত বুধবার (২১ মার্চ) ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়া এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, জগিঘোপা থেকে গঙ্গা পর্যন্ত ৪৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল কাটা হবে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্রের উপনদী মানসে একটি প্রাকার (ড্যাম) নির্মাণ করা হবে। আর উপনদী সংকোশে প্রাকারের পাশপাশি বাঁধও তৈরি করা হবে।
ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশটির পানিসম্পদের উন্নয়নে ১৯৮০ সালে জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা (এনপিপি) প্রণয়ন করে। এই এনপিপিতেই নদ-নদী থেকে 'বাড়তি' পানি সরিয়ে কম পানির নদ-নদী ও এলাকায় নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। এনপিপির প্রস্তাবের বিভিন্ন প্রযুক্তিগত দিক ও প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে ১৯৮২ সালে গঠন করা হয় জাতীয় পানি উন্নয়ন সংস্থা (এনডাব্লিউডিএ)। তারা হিমালয়ের নিচের অঞ্চলে ১৪টি এবং উপদ্বীপীয় নদী অঞ্চলে ১৬টি সংযোগ খাল তৈরির বিষয়টি চিহ্নিত করে।
২০০২ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপাই আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পের ঘোষণা দেন। এর পরপরই ভারত ও বাংলাদেশে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। এ প্রকল্পের ফলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে পরিবেশবিদরা মত দেন। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে বলে তাঁরা উল্লেখ করেন। এরপর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ দৃশ্যত বন্ধ হয়ে যায়।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির প্যানেল আন্তনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়ার পর নতুন করে কাজ শুরু হয়।
পানি বিশেষজ্ঞ ম. ইনামুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ব্রহ্মপুত্র থেকে পানি সরিয়ে নেওয়া মানে বাংলাদেশের জন্য বিশাল বিপর্যয় তৈরি করা। ভারত যে কাজ শুরু করছে তা পরিবেশ বিধ্বংসী একটি কাজের সূচনা। এটি আমাদের জন্য অশনিসংকেত। এ বিষয়ে এখনই আমাদের আপত্তি ও প্রতিবাদ জানানো উচিত।'
ম. ইনামুল হক জানান, ভারত বর্ষা মৌসুমে নদী থেকে পানি সরিয়ে তাদের খরাপ্রবণ অঞ্চলে নেওয়ার কথা বললেও তারা মূলত শুষ্ক মৌসুমেই পানি সরিয়ে নেবে। এর ফলে বাংলাদেশের মোহনা অঞ্চলে বিরাট বিপর্যয় ঘটবে। শুষ্ক মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রই দেশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ পানির জোগান দেয় বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, ভারত এরই মধ্যে খালের মাধ্যমে তিস্তার পানি সরিয়ে নিতে শুরু করেছে, যার প্রভাব বাংলাদেশে পড়ছে।
ভারত বরাবরই উজানে নদ-নদীতে বাঁধ ও ড্যাম তৈরি করে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলার কাজ করছে। ১৯৯৭ সালের আন্তর্জাতিক পানি আইন লঙ্ঘন করছে। কিন্তু চীন যখন ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ দিতে চায় তখন ভারত জোরগলায় এর প্রতিবাদ করে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং গত বছর বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেন, টিপাইমুখ বাঁধ ও নদী সংযোগ প্রকল্পের ব্যাপারে তাঁরা একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত নেবেন না। এর আগে ২০১০ সালেও একই আশ্বাস দেয় ভারতীয় একটি প্রতিনিধিদল। ২০০৫ ও ২০০৬ সালেও ভারত আশ্বাস দেয়, বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা না করে তারা নদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে না।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারত মুখে এমন কথা বললেও তলে তলে প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা বলেন, নদী সংযোগ প্রকল্পের ফলে দুই দেশের পরিবেশেরই মারাত্মক ক্ষতি হবে। তাই ওই দেশের ভুক্তভোগী জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কঠোর প্রতিবাদ করতে হবে।
মূল সূত্র: Daily Kaler Kantho
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১২:৫৪