প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের ক্রোধের শিকার হয়ে
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসল প্রানের ভয়ে,
নির্মমতার শিকার তারা মানবতা কাঁদে,
পড়ল ধরা মানুষগুলো নৃশংসতার ফাঁদে।
নিজ ভূমে পরবাসী ছিল তারা হায়
তাদের আবাস সবাই মিলে কেড়ে নিতে চায়।
যুগে যুগে ছিল তারা আরাকানের কোলে
জনম জনম পার করেছে ঘামে কাঁদা জলে।
বহু বছর ছিল তারা মিলেমিশে সবে,
হঠাৎ করে রব উঠল দেশ ছাড়তে হবে।
সাগর পাড়ি দিল কিছু আশ্রয়ের খোঁজে
প্রান হারিয়ে সাগর বুকেই চক্ষু দুটো বোজে।
মেরে কেটে তাড়া ও এদের,যুদ্ধ দেহী সাজ
গ্রাম জ্বালিয়ে, হত্যা করে শুরু কর কাজ।
ধর্ষণ আর হত্যা করে জ্বালিয়ে দাও সব,
প্রানের ভয়ে যেন পালায় থামাও তাদের রব।
বাংলাদেশের শিবির গুলোয় একটি বছর ধরে
রোহিঙ্গারা দেশ হারিয়ে বসবাস করে।
খাপ খাইয়ে নিচ্ছে তারা ভুলছে ক্রোধ আর ভয়
নিজের দেশে ফিরবে কবে ভয়কে করে জয়?
আজকে কোথায় মানবতা সভ্যতার আলো,
রোহিঙ্গাদের জীবন যাপন কবে হবে ভাল।
আশার আলো দেখবে কবে দিগন্ত কি দূরে
স্বপ্ন গুলো তাদের মনে এলোমেলো ঘুরে।
রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমার নিয়ে লিখার একটা পরিকল্পনা আছে আমার। যে নৃশংস ঘটনার মধ্যে দিয়ে রোহিঙ্গাদেরকে তাদের মাতৃভূমি থেকে জীবন বাজী রেখে প্রানভয়ে পালিয়ে আসতে হয়েছে তা লোমহর্ষক, বেদনাদায়ক এবং মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে অনভিপ্রেত। আজ এই রোহিঙ্গারা দেশছাড়া, তারা আশ্রয় পেয়েছে বাংলাদেশের আশ্রয় শিবির গুলোতে। বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ এবং মানবিক সাহায্য সংস্থা গুলো যথাসাধ্য চেষ্টা করছে এই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জীবনকে সহজ করতে। এটা একটা দুঃসহ কাজ এবং এতে অর্থনৈতিক সংশ্লেষ আছে। একটা দেশ কিংবা সংস্থার জন্য এই চাপ একা বহন করা অসম্ভব।
কক্সবাজার জেলার টেকনাফের যে এলাকায় তারা বর্তমানে অবস্থান করছে সেখানকার জনগোষ্ঠীর উপর ও তারা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে চাপ ফেলছে। এর প্রভাবে এলাকার মানুষের সামাজিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক জীবনধারায় ইতিবাচক এবং নেতিবাচক এই দুই ধরনেরই পরিবর্তন এসেছে এবং এর জন্য এলাকাবাসীর কোন পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। এলাকার চাষযোগ্য ভুমি,বনায়ন এবং পরিবেশের উপর ও বিরূপ প্রভাব পড়েছে এর ফলশ্রুতিতে।
হত্যা , ধর্ষণ আর অত্যাচারের মুখে আজ রোহিঙ্গারা ঘরছাড়া। বহু বছর ধরে মিয়ানমার প্রশাসন এবং সরকার পরিকল্পিতভাবে তাদেরকে প্রান্তিক জন গুষ্টিতে পরিণত করার কাজ করে আসছিল। তাদেরকে ধীরে ধীরে ভোটাধিকার, নাগরিকত্ব এবং অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে এমন এক অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল যাতে তাদের মানবিকতার মৃত্যু হয় এবং তারা নিজেদেরকে অনাহুত হিসেবে মেনে নেয়। এর পাশাপাশি আরাকানের বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী রাখাইন সম্প্রদায়ের জনগণকে ও তাদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলে সামরিক জান্তা এবং একটা উগ্রবাদী বৌদ্ধ সম্প্রদায়
তাদের বিরুদ্ধে সাধারন জনগণকে অপপ্রচারের মাধ্যমে এই বলে খেপিয়ে যাচ্ছিল যে, এই রোহিঙ্গারা তাদের বৌদ্ধ ধর্মকে গ্রাস করবে, আরাকানে রাখাইনরা সংখ্যা লঘুতে পরিণত হবে এবং রোহিঙ্গারা তাদের এলাকা দখল করে নিবে। এসবই ছিল অপপ্রচার এবং পরিকল্পিত আর এর শিকার এই নিরিহ জনগোষ্ঠী যারা ক্রমাগত শোষণের ফলে মানবিক বিপর্যয় ঠেকিয়ে কোনমতে জীবন ধারন করছিল।
মিয়ানমারের সরকারী বাহিনী এবং আরাকানের স্থানীয়রা রোহিঙ্গাদেরকে গ্রামছাড়া করার পর তাদের ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দিয়েছিল। বার্মার রাষ্ট্রীয় আইনে জ্বলে যাওয়া বাড়িঘর সহায় সম্পদ সরকারের দখলে চলে যায়। এই বিবেচনায় রোহিঙ্গারা এখন ভূমিহীন আর ভিটেমাটিহীন। তারা ছিল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, চিকিৎসা তাদের জন্য ছিল সোনার হরিন, ধুঁকে ধুঁকে চলছিল তাদের জীবন। কয়েক বছর আগে নিরাপত্তার নামে বেশ কিছু রোহিঙ্গা পরিবারকে সরকারী ক্যাম্পের ভেতরে প্রায় বন্দী অবস্থায় রাখা হয়েছিল, তাদের চলাচলের উপর নানা ভাবে নিয়ন্ত্রন চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত তাদেরকে সমস্ত সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এত কিছুর পর ও তারা তাদের জন্মভুমিতে ছিল কিন্তু আজ তারা পরবাসে, স্বেচ্ছায় নয় নির্মমতার শিকার হয়ে।
(ছবি নেট থেকে)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০৭